JUNIOR DOCTORS CM KALIGHAT

আলোচনার মিনিটস-ও নয়! স্বচ্ছতায় আপত্তি সরকারের, হলো না বৈঠক

রাজ্য

ফিরে যাচ্ছে জুনিয়র ডাক্তারদের বাস।

আলোচনার ভিডিও কেবল সরকার করতে পারবে। জুনিয়র ডাক্তাররা করতে পারবেন না। মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য প্রশাসনের এই আপত্তিতে আটকে রয়েছে বৈঠক। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে কালীঘাট থেকে রাত প্রায় সাড়ে ৯টা নাগাদ বেরিয়ে এলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। 
সরাসরি সম্প্রচারের দাবি থেকে সরে জুনিয়র ডাক্তাররা কেবল নিজেরাও ভিডিও হাতে রাখতে চেয়েছিলেন। সরকার বলে কেবল তারাই ভিডিও করতে পারবে। শেষ পর্যন্ত আরও নমনীয় হয়ে কেবল আলোচনার লিখিত মিনিটস এবং তাতে দু’পক্ষের সই রাখার কথা জানাতে চেয়েছিলেন। ‘দেরি হয়ে গিয়েছে’ জানিয়ে সেই দাবিও খারিজ করেছে রাজ্য। জুনিয়র ডাক্তাররা জানিয়েছেন, এরপর তাঁদের সামনে দিয়ে বেরিয়ে যায় সরকার পক্ষের প্রতিনিধিদের পরপর গাড়ি।
এদিন বেলা ১টায় স্বাস্থ্যভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্ণামঞ্চে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি চিকিৎসকদের কাজে যোগ দিতে বলার পাশাপাশি শুনিয়ে দেন যে সামনেই সুপ্রিম কোর্টে শুনানি রয়েছে। 
এর কিছু পর চিঠি পাঠিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ জানান জুনিয়র চিকিৎসকরা। 
আর জি কর কাণ্ডে নির্যাতিতার বিচারের পাশাপাশি, কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ এবং সাক্ষ্য প্রমাণ লোপাটে অভিযুক্ত স্বাস্থ্যভবনের শীর্ষ কর্তাদের অপসারণের মতো পাঁচদফা দাবি থেকে যদিও সরেননি চিকিৎসকরা।
রাতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির সামনে প্রায় দু’ঘন্টা অপেক্ষা রেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের বক্তব্য, প্রায় সাড়ে ৭ হাজার জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে মাত্র ত্রিশ জনের কিছু বেশি সংখ্যায় প্রতিনিধিদল এসেছে। আলোচনা ব্যাখ্যা করতে হবে অন্য সদস্যদের। 
একাংশ মনে করিয়েছেন যে বিভিন্ন সময়ে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের দেওয়া নথি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। বস্তুত আর জি কর কাণ্ডেই রাজ্য পুলিশের তদন্ত সুপ্রিম কোর্টের প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছে। সাক্ষ্য প্রমাণ লোপাটের স্পষ্ট কার্যক্রম রয়েছে। 
গত বৃহস্পতিবার লাইভ স্ট্রিমিংয়ে রাজ্য অরাজি হওয়ায় ভেস্তে গিয়েছিল বৈঠক। সরকারের বক্তব্য, বিচারাধীন বিষয়ে লাইভ স্ট্রিমিং করা যাবে না। এদিন আবার মুখ্যমন্ত্রী বেরিয়ে এসে তাঁর বাসভবনের সামনে অপেক্ষারত চিকিৎসকদের বলেন যে সুপ্রিম কোর্টে ‘কেসটা একটু শেষ হয়ে গেলে তোমাদের দিয়ে দেব’। তিনি বলেন, ‘তোমারও লাইভ স্ট্রিমিংয়ের কথা বলোনি, আমরাও বলিনি।‘   
এদিন চিকিৎসকরা সরাসরি সম্প্রচারের দাবি থেকে সরে নিজেরা ভিডিও তুলতে চেয়েছিলেন কেবল। কিন্তু তাতেও অরাজি রাজ্য। এমনকি মিনিটস-এ দুই পক্ষের সইয়েও অরাজি থেকেছে প্রশাসন। 
বৈঠক বাতিল হওয়ার পর জুনিয়র চিকিৎসকরা জানিয়েছেন যে মুখ্যমন্ত্রী নিজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে বললেন বলে আমরা ভিডিও’র দাবি থেকেও সরে আসি। বলা হলো কেবল আলোচনার মিনিটস হবে এবং দু’পক্ষের সই থাকবে। সে কথা জানাতে গেলে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জানিয়ে দেন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আর অপেক্ষা করা যাবে না।   
জুনিয়র চিকিৎসকরা বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর পদকে সম্মান জানাতে চেয়েছি। তাঁর অনুরোধে সাড়া দিতে চেয়েছি। দু’পক্ষের আলোচনায় মিনিটস করে কেবল সই করার কথা বলা হয়েছিল। সেটুকুও শুনলেন না। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী আমাদের বেরিয়ে যেতে বললেন। সদিচ্ছা তা’হলে কার নেই? স্বচ্ছতার প্রশ্ন জরুরি জনতার জন্য। সরকার পক্ষ তা মানল না। দেরি হয়ে গিয়েছে বলে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। অথচ আমরা এখনও কথা বলতে রাজি। 
এদিন রাজ্যের তরফে জানানো হয় রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তীও থাকবেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে। 
জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশাপাশি সবস্তরের চিকিৎসকরাই বলছেন যে স্বাস্থ্যভবনের সরাসরি সক্রিয়তায় সরকারি স্বাস্থ্যব্যবস্থায় দুর্নীতি প্রবল। আর জি করে তারই নমুনা ধরা পড়েছে। এই দুর্নীতি চালিয়ে যাওয়ার জন্যই ‘শাসানির সংস্কৃতি’ জারি করে রেখেছে তৃণমূল। এর আগে বিভিন্ন সময়ে নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযোগ জানানো হলেও কোনও লাভ হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রীও। আর জি কর হাসপাতালে ধর্ষণ হত্যায় তথ্য প্রমাণ লোপাটেও শীর্ষ স্তরে স্বাস্থ্য আধিকারিকদের দায়ী করছেন প্রতিবাদী চিকিৎসকরা।

Comments :0

Login to leave a comment