আর জি করের আঁচ স্কুলের চৌহদ্দিতে পৌঁছতেই নবান্ন থেকে জেলা প্রশাসনের কাছে নির্দেশ গেল। জেলাশাসকদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এখনই স্কুলের বিক্ষোভ রুখতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব বি পি গোপালিকা।
জেলাশাসকদের কাছে পাঠানো নির্দেশে জানানো হয়েছে, ‘স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের রাস্তা অবরোধে নামানোর খবর আমাদের কাছে এসেছে। এটা কোনওভাবেই বরদাস্ত করা যাবে না।’ সূত্রের খবর, হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার মাধ্যমে আরও একটি নির্দেশ দিয়ে জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করে জানানো হয়েছে, ‘অভিভাবক ও উচ্চ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া নাবালক ছাত্র-ছাত্রীদের কোনোভাবে মিছিল, সভায় যোগদান করানো যাবে না। এই ঘটনা ঘটলে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশে বলা হয়েছে।’
নবান্ন থেকে রাজ্যের মুখ্যসচিব জেলাস্তরে নির্দেশ পাঠাচ্ছেন, তা মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন ছাড়া কোনওভাবেই সম্ভব নয়। ফলে মুখ্যসচিবের পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ নির্দেশ যে মমতা ব্যানার্জির সম্মতিতে পাঠানো, তা নিয়ে আধিকারিকদের মধ্যে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু আর জি কর নিয়ে রাজ্যবাসীর মনোভাব টের পেয়ে লিখিত নির্দেশিকা প্রকাশ হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে পাঠাতে ভরসা পায়নি নবান্ন। তাই হোয়াটসঅ্যাপ করে জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে।
নবান্নের কাছ থেকে নির্দেশিকা পাওয়ার কথা স্বীকার করে এক জেলা আধিকারিক জানান, ‘মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফর থাকলে তো আমাদের স্কুল থেকে বাচ্চাদের নিয়ে সভায় যেতে হয়। বেলা ১টায় মুখ্যমন্ত্রীর নির্ধারিত সরকারি সভা থাকলে সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের সভাস্থলে এনে কন্যাশ্রীর প্ল্যাকার্ড হাতে ধরিয়ে বসিয়ে রাখতে হয়।’ মুখ্যমন্ত্রী জেলায় এসে সভার বক্তৃতা করার ফাঁকে খোঁজ নেন, কন্যাশ্রী কোথায়? তখন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বসে থাকা ছাত্রীদের হাতে ধরানো প্ল্যাকার্ড উঁচিয়ে চিৎকার করতে হয়। স্কুল শিক্ষা দপ্তরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘মুখ্যমন্ত্রীর সভায় স্কুল থেকে বাস ভর্তি করে পড়াশোনা বন্ধ করে নিয়ে যাওয়া যদি সঠিক হয়ে থাকে, তাহলে সমাজের অন্যায়, অত্যাচারের বিরুদ্ধে স্কুল ছুটির পর মিছিলও ১০০ ভাগ ঠিক কাজ।’
আসলে এরাজ্যে এক দশকের ওপর কলেজ ক্যাম্পাস থেকে উধাও গণতান্ত্রিক পরিবেশ। বছরের পর বছর ধরে বন্ধ কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন। ফলে কলেজগুলিতে জাঁকিয়ে বসে আছে তৃণমূল বাহিনী। এখনও পর্যন্ত আর জি কর নিয়ে ক্যাম্পাসের মধ্যে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিবাদী মিছিল সেভাবে সামনে আসেনি। তবে স্কুলে আর জি করের আঁচ পড়তেই সাবধান হতে চাইছে রাজ্য সরকার।
‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’দাবি তুলে গোটা রাজ্য এখন তোলপাড়। আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের হত্যার ঘটনার বিচার চেয়ে প্রতিদিন রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে আয়োজিত হচ্ছে মিছিল। গত দু’দিন ধরে এরাজ্যের বিদ্যালয়ে এসে পৌঁছছে আর জি করের আঁচ। স্কুল ছুটির পর স্কুলের পোশাকে শয়ে, শয়ে ছাত্রীরা বেরিয়ে পড়েছে মিছিলে। স্লোগানে, স্লোগানে মুখরিত হয়ে স্কুল ছাত্র-ছাত্রীরা স্লোগান তুলেছে ‘জাস্টিস ফর আর জি কর’। গ্রাম শহরে স্কুলের মধ্যে আর জি করের বিচার চাই দাবির পক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণ দেখেই প্রথমে নবান্ন থেকে শীর্ষ আধিকারিকের কাছ থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন রোখার বার্তা দেওয়া হয়।
ঘটনা হলো, নবান্ন থেকে পাঠানো শীর্ষ আধিকারিকের নির্দেশিকা দেওয়ার পর জেলা প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে খুব একটা নড়াচড়া করতে চায়নি। দক্ষিণবঙ্গের এক জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, ‘জেলাশাসক নবান্নের এই বার্তা জেলা আধিকারিকদের কাছে ফরওয়ার্ড করে দেন। কিন্তু এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে বলে কোনও তাড়াহুড়ো করার মতো উদ্যোগ এখনও পর্যন্ত নেই।’কিন্তু নবান্ন থেকে নির্দেশ পাওয়ার পরই নড়েচড়ে বসে বিকাশ ভবন। গত শুক্রবার রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দপ্তর থেকে জারি করা হয়েছে একটা নির্দেশিকা।
রাজ্যের বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের কমিশনার জেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক, প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কাছে পাঠানো নির্দেশিকায় পড়ুয়াদের ‘শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারে নিষেধাজ্ঞা’র কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেই নির্দেশিকার শেষ পর্বে এসে আঁচ পড়েছে আর জি কর নিয়ে স্কুল পড়ুয়াদের আন্দোলনের প্রভাব। নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, স্কুল চলাকালীন কোনওভাবেই ছাত্র-ছাত্রীদের কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া যাবে না। এর অন্যথা হলে প্রশাসনিকভাবে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, ‘নবান্ন থেকে মুখ্যসচিবের নির্দেশ জেলাশাসকদের কাছে যাওয়ার পরই স্কুল শিক্ষা দপ্তর নির্দেশিকা বের করার সাহস পেয়েছে।’’ ফলে বিকাশ ভবন নয়, রাজ্যের স্কুল ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আর জি কর নিয়ে বাড়তে থাকা আন্দোলনের প্রভাব বাড়ছে দেখেই নবান্ন থেকেই তা রোখার বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
Nabanna circular
স্কুলের প্রতিবাদ আটকাতে নির্দেশ গিয়েছে নবান্ন থেকে
×
Comments :0