Kerala flood

ওয়েনাড নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক বিজয়নের, যাচ্ছেন এলাকা পরিদর্শনে

জাতীয়

ওয়েনাডের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকলেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। বৃহস্পতিবার মখ্যমন্ত্রীর ডাকা সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেরালা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ভিএস সতীশান। এছাড়া মন্ত্রিসভার সব সদস্য এবং উচ্চ পর্যায়ের আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন। উদ্ধারকার্য সহ একাধিক বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। 
মঙ্গলবার কেরালা ওয়েনাডে বন্যায় বহু মানুষ প্রান হারান। প্রশাসন সূত্রে খবর এখনও পর্যন্ত ১৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৭৫ জনের দেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের সদস্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
বিপর্যয় মোকাবিলা এবং উদ্ধারকার্য যাতে ঠিক ভাবে তার জন্য প্রথম থেকেই স্বক্রিয় ছিল প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন গোটা বিষয়টার ওপর নজর রেখেছেন। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে তিনি যেতে পারেন বলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ইতিমধ্যে একাধিক মন্ত্রী এবং প্রশাসনের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে আছেন। সেখানে থেকে গোটা পরিস্থিতির ওপর তারা নজর রাখছেন।
এই পরিস্থিতিতে কেরালার বাম গনতান্ত্রিক জোটের সরকারকে বিপাকে ফেলতে মাঠে নেমেছে কেন্দ্র। অমিত শাহ বলেছেন একাধিক কেন্দ্রীয় সংস্থা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্ভাবনা জানিয়েছিল কেরালা সরকারকে। মঙ্গলবার রাজ্যের ওয়েনাডে একাধিক জায়গায় প্রবল বৃষ্টিপাতে নামতে থাকে ধস। একের পর এক ধসে মৃতের সংখ্যা বুধবার রাত পর্যন্ত ২৫১। নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ২০০ বাসিন্দা। বৃষ্টি চলতে থাকায় ত্রাণের কাজে সমস্যা হচ্ছে। তবে কেন্দ্র এবং রাজ্যের বাহিনী একযোগে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজ্যের ৭ জেলায় বৃষ্টিপাতের কারণে বৃহস্পতিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। 
শাহের দাবি, অতিবৃষ্টি তো বটেই, ধস নিয়েও এক সপ্তাহ আগে সতর্ক করা হয়েছিল কেরালা সরকারকে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ন’টি দলকে পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছিল রাজ্যে। রাজ্যের বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট সরকারকে দায়ী করে শাহ বলেছেন, সতর্কতা সত্ত্বেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেরালায়। 
বুধবার তিরুবনন্তপুরমে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন বিজয়ন। তিনি বলেন, ‘‘কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থা এমন বিপর্যয়ের পূর্বাভাস দেয়নি। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছিল ওয়েনাডে এবং সংলগ্ন এলাকায় কমলা সতর্কতা জারি করেছিল। যার অর্থ, ১১৫ থেকে ২০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। কিন্তু ধস নামার আগের ৪৮ ঘন্টায় মুন্ডাক্কাইয়ে ৫৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়।’’
আবহাওয়া দপ্তরের পাশাপাশি জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া, কেন্দ্রীয় জল কমিশনের লাল সতর্কতা ছিল বলে দাবি করেছে কেন্দ্র। বিজয়ন পালটা বলেছেন, ‘‘মর্মান্তিক ঘটনার আগে কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থা লাল সতর্কতা জারি করেনি। ধস নামার পর, মঙ্গলবার সকাল ৬টায়, প্রথম লাল সতর্কতা জারি করে।’’ 
কেন্দ্রীয় জল কমিশনের দায়িত্ব বন্যা সতর্কতা জারি করা। বিজয়ন বলেছেন, ‘‘২৩ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই, কমিশন স্থানীয় দু’টি নদীর একটিতেও বন্যা সতর্কতা জারি করেনি।’’
আগেই কেন্দ্রীয় উদ্ধারকারী দল পাঠানোর প্রসঙ্গে বিজয়নকে প্রশ্ন করা হয়। তিনি বলেন, ‘‘অভিজ্ঞতার কারণেই বর্ষার আগে কেন্দ্রের কাছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ৯টি দল পাঠানোর জন্য বলেছিল রাজ্য। তার একটিকে ওয়েনাডে মোতায়েন করা রয়েছে।’’ 
ওয়েনাডের মুন্ডাক্কাই এবং চোরামালা জেলা সবচেয়ে আক্রান্ত। সরকারি হাসপাতালে শিশুদের দেহ শনাক্ত করার জন্য বাবা-মায়েদের পাওয়া যাচ্ছে না। এখনও নিখোঁজ তাঁরা। কান্নায় ভেঙে পড়ে শিশুদের চিনে নিতে হয়েছে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।
ওয়েনাডের দুর্গতদের জন্য আর্থিক সসাহায্যের আবেদন জানিয়েছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ‘দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ান, আর্থিক সহায়তা করুন।’ সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটি ‘ওয়েনাড় ত্রাণ তহবিল’ গঠন করেছে। সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য বিজয়ন বলেছেন, এই সময় প্রধান কাজ ত্রাণ এবং উদ্ধার। পারস্পরিক দোষারোপের সময় এটি নয়। তবে রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী যে তথ্য দিয়েছেন তা ঠিক নয়।’’

Comments :0

Login to leave a comment