গালিগালাজ তো বটেই, মহিলা বন আধিকারিককে লাঠিপেটার হুমকি পর্যন্ত দিলেন রাজ্যেরই কারা মন্ত্রী অখিল গিরি। শনিবার পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুরে তৃণমূলের এই নেতা এবং রাজ্যের মন্ত্রী এবং রামনগরের এই বিধায়কের আচরণে সমালোচনার ঝড় বইছে।
তাজপুরে উচ্ছেদ দখল ফরেস্ট অফিসার মোনীষা সাউকে হুমকির মুখে পড়তে হয়। মহিলা আধিকারিককে ‘বেয়াদপ’,‘জানোয়ার’ বলেন রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি। অখিল গিরি সরকারি আধিকারিককে বলেছেন, ‘‘বেশিদিন থাকতে পারবেন না। আপনার আয়ু ৭-৮ দিন, ১০ দিন।’’ লাঠি দিয়ে পেটানোর হুমকি দিয়ে অখিল গিরি বলেন, ‘‘বিট অফিসার-টফিসার, আমি জানি ফরেস্টের কী কাজ হয়। কত বড় দুর্নীতি আমরা সব জানি। বিট অফিসারের বিরুদ্ধে কী আছে আমি সব জানি। আমি কিন্তু সব ফাঁস করে দেব বিধানসভায়। আপনি আমাকে চেনেন না।’’
স্থানীয়রা বলছেন, অখিল গিরি নিজেই রাজ্যের মন্ত্রী। তাঁরই সরকার উচ্ছেদের নীতি নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই উচ্ছেদের ঘোষণা করছেন। সরকারি স্তরে বাধা দিচ্ছেন না মন্ত্রী। সেই নির্দেশ পালন করতে এলে জনসমক্ষে সরকারি আধিকারিককে হুমকি দিচ্ছেন। একাংশের বক্তব্য, উচ্ছেদের নীতিতে ক্ষোভ রয়েছে জনতার। সেই ক্ষোভ সামাল দিতেই এই আচরণ। বস্তুত বন দপ্তর ঘিরে যে দুর্নীতি চলছে, প্রকাশ্যেই তা স্বীকার করেছেন মন্ত্রী।
মহিলা ফরেস্ট অফিসারকে প্রকাশ্যে ডাং দিয়ে পেটানোর হুমকি দেন অখিল গিরির। তাঁকে পাল্টা ওই সরকারি আধিকারিক বলেন, “আমার তো কারও সঙ্গে শত্রুতা নেই। আপনার সঙ্গেও নেই, ওদের সঙ্গেও নেই। আমার ‘ডিউটি’ করতে এসেছি।”
অখিল গিরি বলেন, ‘‘এই জায়গা আমরা নিলাম। এর ভিতরে যদি আপনি আসেন ফিরে যেতে পারবেন না। বেশি কথা বলবেন না। আপনার মতো জানোয়ার, বেয়াদপ রেঞ্জার আগে আসেনি কখনও।”
অভিযোগ, তাজপুরে সমুদ্রের ধার বরাবর বেশ কিছু দোকান তৈরি হয়। সমুদ্রের পাড়ের গাছ কেটে দোকানগুলি নির্মাণ করা হয়েছে বলে আগে থেকেই অভিযোগ ছিল। এক বছর আগে বিপজ্জনকভাবে গড়ে ওঠা দোকানগুলি তুলে নিতে নোটিশ দেওয়া হয় বনদপ্তরের তরফে। তা না শোনায় পুনরায় মাস ছয়েক আগে নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু কোনও দোকানদার সমুদ্রের পাড় থেকে দোকানগুলি সরাননি। সপ্তাহ খানেক আগে মরা কোটালে সমুদ্রে ব্যাপক জলোচ্ছ্বাস হয়। তাজপুরে সমুদ্রপাড় বেশ কিছুটা এলাকা জুড়ে ভাঙে। তাতে তলিয়ে যায় ওই দোকানগুলিও। দোকান তলিয়ে যাওয়ার পরে আবার নতুন করে সমুদ্র পাড়ে দোকান বসানোর তোড়জোড় করে কিছু মানুষ। পুনরায় নোটিশ দেয় বনদপ্তর। লাগাতার নজরদারি চলে। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয় এলাকার মানুষজন। বনদপ্তরের আধিকারিকরা দিনে এবং রাত্রে নজরদারি চালাতে থাকে, যাতে কেউ আর বনদপ্তরের জায়গার উপর কোনও নির্মাণ না করতে পারে। শনিবার বনদপ্তরের কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনার পরেই ওখানে হাজির হন রেঞ্জ অফিসার মনীষা সাউ। বেআইনিভাবে নির্মাণ চলবে এমন অনড় দাবিতে মহিলা অফিসারকে লাগাতার হুমকি দিতে থাকেন রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি। ফরেস্ট অফিসার মোনীষা সাউয়ের অভিযোগ, মন্ত্রী দাঁড়িয়ে থেকে অবৈধ নির্মাণ করান এবং বনদপ্তরের আধিকারিকরা যখন বাধা দেয় তখন তাদের হুমকির শিকার হতে হয়।
মন্ত্রীর এই দুমুখো আচরণেই বেড়েছে ক্ষোভ। দোকান বসাচ্ছেন মন্ত্রী। আবার তাঁরই সরকার সেই দোকান উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। মাঝখান থেকে বিপন্ন হচ্ছে বহু মানুষের জীবিকা। অখিল গিরির আচরণ নিয়ে বিভিন্ন সময়েই সমালোচনার মুখে পড়েছে তৃণমূল। ২০২২ সালের ১২ নভেম্বর নন্দীগ্রামের একটি সভা থেকে রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন তিনি। বিজেপি নেতাদের উদ্দেশ্যে অখিল গিরি বলেন, ‘‘আমরা রূপের বিচার করি না। তোমার রাষ্ট্রপতির চেয়ারকে আমরা সম্মান করি। কিন্তু তোমার রাষ্ট্রপতি কেমন দেখতে বাবা?’’
এবারও মহিলা ফরেস্ট অফিসারকে গালিগালাজ, লাঠিপেটার হুমকির ঘটনায় ফের ঝড় উঠতে শুরু করেছে সর্বত্র।
Comments :0