Death Sentence

ফরাক্কায় শিশুকন্য ধর্ষণ-খুনে ফাঁসির সাজা ঘোষণা

রাজ্য জেলা

শুক্রবার ফরাক্কায় শিশুকন্যাকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় দোষীদের একজনকে ফাঁসি এবং অন্যজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ লক্ষ টাকা জরিমানার সাজা শোনাল আদালত। পুলিশ বলেছি, “ খুনের মামলার উপর মামলা হয় নাকি !” পুলিশ বলার চেষ্টা করেছিল, খুনের ধারাতে মামলা হলেই হবে সব চেয়ে বেশি শাস্তি। পরিবার ধর্ষণের অভিযোগ আনলেও তা ধামাচাপা দিয়েছিল পুলিশ। যদিও পোস্ট মর্টের ঘরের বাইরে শিশুর মা বলেছিলেন, “আমার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। সেই অভিযোগ নিতে হবে”। মাকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনার রাতেই মর্গের বাইরে লড়াই চালিয়েছিলেন ডিওয়াইএফআই কর্মীরা। অবশেষে আন্দোলনের চাপা পকসো ধারায় হয় এফআইআর। সেই ঘটনায় এক অপরাধীকে ফাঁসির সাজা। অন্য অপরাধীকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডের সাজা শোনাল জঙ্গিপুর আদালত।
দশমীর সকালে পাওয়া যাচ্ছিল না ওই শিশুকে। দাদুর বাড়ি ঘুরতে এসেছিল সে। এরপর দুপুরে দীনবন্ধু হালদারের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় বস্তাবন্দী দেহ। শিশুর দেহের অবস্থা দেখে প্রথম থেকেই পরিবার দাবি করতে থাকে যে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। কিন্তু আরজি কর কান্ডে আন্দোলনের আহবে ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত করতেই রাজি ছিল না পুলিশ। শিশুর বাবা, মাকে বোঝানোর চেষ্টা হয় যে, খুনের মামলাতেই অপরাধীদের শাস্তি হবে। সন্ধায় শিশুর মরদেহ ফারাক্কা থেকে বহরমপুর নিয়ে আসার জন্য রওনা দিয়েছিলেন শিশুর মা। রাতে বহরমপুরে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের বাইরে শিশুর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন ডিওয়াইএফআই নেতা সন্দীপন দাস, সৈয়দ নুরুল হাসানরা। জানতে পারেন, শিশুর মা ধর্ষণের অভিযোগ করলেও মানতে চাইছে না পুলিশ। দীর্ঘক্ষণ দেখানো হয় বিক্ষোভ। শিশুর মায়ের চাপে, আন্দোলনের চাপে রাতে এফআইআর’এ যুক্ত হয় পকসোর ধারা। যদিও এরপর ময়নাতদন্ত নিয়ে দীর্ঘ টালবাহান হয়। পুলিশের নির্মমতার সাক্ষী হয় শিশুর পরিবার। ১৪ তারিখ ময়নাতদন্ত হওয়ার কথা থাকলেও সেদিন হয়নি ময়নাতদন্ত। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ময়নাতদন্তের দাবি জানানো হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। পরিবারের দাবি নিয়ে লড়াইয়ে থেকেছে ডিওয়াইএফআই নেতারা। ১৫ তারিখও হয়রানির শিকার হয়েছে পরিবার। অবশেষে সেদিন মর্গের বাইরে বিক্ষোভ দেখান ছাত্র, যুব ও পরিবারের সদস্যরা। তারপর শুরু হয় ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া। তবে চার্জশিট দিতেও  দেরি করছিল পুলিশ। ২৮অক্টোবর ফারাক্কায় জাতীয় সড়ক অবরোধ করে এসএফআই, ডিওয়াইএফআই। ছিলেন মিনাক্ষী মুখার্জি, ধ্রুবজ্যোতি সাহা। ঘটনার দিনই দীনবন্ধু হালদারকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে শুভজিৎ হালদার নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিন ফারাক্কার শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত দীনবন্ধু হালদারকে ফাঁসি ও শুভজিত হালদারকে যাবজ্জীবন সাজার নির্দেশ দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবারই ২অপরাধীকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। শুক্রবার দীনবন্ধু হালদারকে ফাঁসি ও শুভজিত হালদারকে যাবজ্জীবন সাজার নির্দেশ অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালতের বিচারক অমিতাভ মুখার্জি। সরকারি আইজনীবী বিভাস চ্যাটার্জি বলেন, “মৃত্যুদণ্ড চেয়েছিলাম। মহামান্য আদালত সব দিক বিচার করে শুভজিৎ হালদারকে যাবজ্জীবন দিয়েছে। পকসো অ্যাকেটে যাবজ্জীবন সাজা অর্থাৎ যত দিন বেঁচে থাকবে ততদিন পর্যন্ত হেফাজতে থাকতে হবে বেরোতে পারবে না। আর দীনবন্ধু হালদার যার রোল এই মামলায় ভয়ঙ্কর ছিল তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে” ।

Comments :0

Login to leave a comment