মুক্তধারা
রঙ উৎসবের | অন্যকথা
বসন্ত উৎসব
পল্লব মুখোপাধ্যায়
"আজি দখিন দুয়ার খোলা - / এসো হে, এসো হে, এসো হে আমার বসন্ত এসো"।
"আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে"। কোকিলের কুহুতান। আগুন ধরেছে কৃষ্ণচূড়া, শিমূল, পলাশ-এ।
বসন্তে এত রং, আবির, বাহার। রঙের মতন মনকে রাঙিয়ে নেওয়া। "আজ সবার রঙে রঙ
মিশাতে হবে।" দিগন্ত জুড়ে কৃষ্ণচূড়ার রক্তাভা। কোথাও দুধে আলতা রঙা কাঞ্চন ফুলে
মুখ ঢেকেছে নিসর্গ প্রকৃতি। কোথাও দোল-কে কেন্দ্র করে গ্রামের বারোয়ারিতলায়
মেলা বসে । মেলার মানুষজন এই উপলক্ষে উপভোগ করেন পথ পরিক্রমা। গাঁয়ের
মানুষের সান্নিধ্য মেলে এই দোল উৎসবে। এই বসন্তে উৎসব জাগে অন্তরে। পায়ের
নিচে ঝরে পড়া পাতার দীর্ঘশ্বাস শুনতে শুনতেও অনেকেরই ইচ্ছে হয় অজানায় ভেসে যেতে।
দোল-এর মেলায় দেখতে পাওয়া যায় পুতুল নাচ। কোথাও বা দেখতে পাওয়া যায় তরজা,
যাত্রা গান। একসময় গণেশ অপেরা, আর্য অপেরা, নবরঞ্জন অপেরার অভিনয় হত।
দামাল মাতাল হাওয়া আর পূর্ণিমার চাঁদকে সফর সঙ্গী করে অনেকের চোখেই ধরা পড়ে
প্রকৃতির উদ্ভাসিত রূপ। আর তখনই অন্তরে অনুভূত হয় এক অনাস্বাদিত আনন্দ |
শান্তিনিকেতনে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ প্রবর্তন করেন বসন্ত উৎসব। এক সময় পূর্ণ
চাঁদের পর বাংলা মাস শুরু হত। ফাল্গুন পূর্ণিমা ছিল বছরের শেষ দিন। এরপর শুরু হত
নতুন বছর। বছর শুরু হত বসন্ত ঋতু দিয়ে। বিয়ের ঋতু বসন্ত। এক সময় ছিল দোল বা
হোলি উৎসব মানেই স্বয়ম্বর উৎসব। বসন্ত উৎসবকে কেন্দ্র করেই দূরদূরান্তের
প্রবাসী মানুষ ঘরে ফিরে আসেন। মহিলারা শ্বশুরবাড়ি থেকে আসেন পিতৃগৃহে।
এই উৎসবের টানে। বসন্ত উৎসব তো শুধুই আনন্দের পর্ব নয়। এ এক মহামিলন উৎসব।
বাসন্তিক প্রকৃতির সৌন্দর্য-আনন্দ আর মানুষের সুখ-দুঃখ-হাসি-কান্না জারিত
আনন্দ-সৌন্দর্যকে শান্তিনিকেতনে একসূত্রে গাঁথবার চেষ্টা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
দিগন্তবিস্তারী উন্মুক্ত খোয়াই, তির-তির বয়ে যাওয়া স্রোতবতী কোপাই, ভোরের ঘুঘুর
ডাক, নির্মল, উজ্জ্বল কোবাল্ট রঙের নীলাকাশ, শালবনে চৈত্রের সমাগম, বসন্তের
শিমূল-পলাশ। "আমাদের শান্তিনিকেতন আমাদের সব হতে আপন"।
Comments :0