- সংবিধান নিয়ে ভাষণে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দটি উচ্চারণই করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে সংবিধানের নীতি ভঙ্গের অভিযোগের কোন জবাবও দেননি তিনি। ধর্মনিরপেক্ষতার রক্ষার প্রশ্নে কোনও বক্তব্যই না রেখে কিছু গালভরা কথা আউরে ভাষণ শেষ করেন মোদী।
দেশের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র রক্ষার ইস্যুতে শনিবারও সোচ্চার ছিলেন বিরোধী সাংসদরা। মোদী ভাষণে বলেছেন, আমাদের সরকার সংবিধানকে শক্তিশালী করে তুলেছে। কংগ্রেসকে নিশানা করে তিনি বলেন, সংবিধানের উপর আক্রমন নামিয়ে এনেছে কংগ্রেস। সংবিধান সংশোধন নিয়ে কংগ্রেসকে দুষেছেন মোদী। তিনি বলেছেন কংগ্রেস গত ছয় দশকে ৭৫বার সংবিধান সংশোধন করেছে। যদিও সেই সংশোধনীতে ‘সমাজতন্ত্র’ ও ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ শব্দ যুক্ত করার বিষয় রয়েছে। এদিকে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তাঁর ভাষণে জানিয়েছেন, বিজেপির যে হিন্দুত্বের প্রচার চালায় সেখানে ভারতের সংবিধানের কোন স্থান নেই। তারা মনুস্মৃতি চালু করতে চায়। রাহুল গান্ধী এদিনের ভাষণে সাভারকরের নাম উল্লেখ করেই বলেন, এই হিন্দুত্বাবদী নেতা, নিজেই জানিয়েছেন ভারতের সংবিধান দেশের নয়। তা বিদেশী। মনুস্মৃতিকে দেশে সংবিধান হিসাবে মানতেন বলেও উল্লেখ করে গেছেন সাভারকর। মোদী ও বিজেপি সেটাই এখন কার্যকর করতে চাইছে বলে এদিনের উল্লেখ করেন রাহুল।
এদিন বিরোধীরা দেশে পিছিয়ে পড়া আর্থিক দুর্বল মানুষের উন্নয়নে জাত ভিত্তিক সমীক্ষার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। তাতে পিছিয়ে পড়া অংশকে চিহ্নিত করে তাদের জন্য সংরক্ষণের দাবি তোলায় এদিন মোদীর ভাষণে সংরক্ষণের কথা এসেছে। যদিও সংরক্ষণ সংবিধানে যে দৃষ্টিতে দেখা হয়েছে তাতে তাঁর সমর্থন নেই সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন মোদী। এই প্রশ্নে তিনি বলেছেন, ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি করতেই সংরক্ষণ নিয়ে বিরোধীরা প্রচার চালায়। কংগ্রেস অন্যান্য অনুন্নত শ্রেণির(ওবিসি) সংরক্ষণের বিরোধী ছিল। আম্বেদকর যখন সংরক্ষণের কথা বলেন তাতে কংগ্রেস বিরোধিতা করে। তারা মন্ডল কমিশনের রিপোর্ট মানেনি।
মোদী কংগ্রেসকে সংবিধান সংশোধন ইস্যুতে আক্রমন করলেও ৩৭০ ধারা বাতিলে সংশোধনীর পক্ষে সওয়াল করেছেন। বিরোধী দল এবং জুম্মু কাশ্মীরের আপত্তি সত্বেও একতরফা ৩৭০ ধারা বাতিলের সংশোধনী নিয়ে তাকে সাফাই গাইতে দেখা গেল। এভাবেই স্ববিরোধী মন্তব্যে ভরা ছিল মোদীর ভাষণ।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্টে উপাসনা স্থল আইন লঙ্ঘন নিয়ে মামলা দায়ের হয়েছে। গুজরাট ,রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশে বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার ঐ আইন লঙ্ঘন করে বিভিন্ন মসজিদে সমীক্ষার নামে তা গুড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। হিন্দুত্বের জিগির তুলতেই এই অভিযান। বিজেপি সঙ্ঘের এই উদ্যোগ সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ নীতিকে সরাসরি আক্রমণন করা হয়েছে। মোদী সংবিধান আলোচনায় তার দলের সংবিধানের নীতি অমান্য করা নিয়ে একটা শব্দ উচ্চারন করেননি। তিনি বলেছেন সংবিধানের উপর আক্রমণের জন্য দায়ী কংগ্রেস। আমরা তা সংবিধান রক্ষা করছি।
এদিন মোদী সরকারের সংবিধানের উপর সরাসরি আক্রমণ উল্লেখ করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন,দেশের গরিব মানুষক সুরক্ষা দিচ্ছে এই সংবিধান। কিন্তু বিজেপি হলো সেই দল যারা সংবিধানের উপর ২৪ ঘন্টাই আক্রমন চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিজেপি যাকে নেতা হিসাবে মানে সেই সাভারকর দেশের সংবিধান মানে না। তিনি নিজে বলেছেন দেশের সংবিধান বিদেশী। আমাদের সংবিধান হলো মনুস্মৃতি। সাভারকরের লক্ষ্য মতো সংবিধান পালটাতে চাইছে বিজেপি। এতে আজ বিপন্ন আমাদের আম্বেদকরের সংবিধান। তিনি বলেন, সংবিধানে সমাজের দুর্বল পিছিয়ে পড়া মানুষের সংরক্ষনের কথা বলা হয়েছে। মোদী সরকার সংবিধানের প্রতি কোন গুরুত্ব না দেওয়ায় দলিত মানুষের কোন সংরক্ষন সহ কোন সুরক্ষাই নেই। তিনি বলেন, আমি হাতরাসে ধর্ষিত খুন হওয়া দলিত কন্যার বাড়িতে গিয়েছিলাম। সেই পরিবার জানাচ্ছে কন্যার খুনিরা তাঁদের বাড়ির সামনে ঘুরে বেরাচ্ছে। তারা আতঙ্কিত। পুলিশে অভিযোগ করা হলে তারা জানাচ্ছে বাড়ির ভিতরে বসে থাকুন। তাহলে আর ওদের দেখতে পাবেননা। রাহুল বলেন, এটা দলিত পরিবারকে কিসের নিরাপত্তা দেওয়া? এটা আমাদের সংবিধানের কোথায় লেখা আছে বাড়ি বসে নিজের সুরক্ষা নিজেকে করতে। তবে রাষ্ট্রের দায়িত্ব কি?
এদিন সংসদে ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা মিলন আলতাফ আহমেদ বলেন, বিজেপি সংবিধানের কথা কোন মুখে বলে? তারা কংগ্রেসের জরুরী অবস্থা নিয়ে বহু কথা বলছেন। কংগ্রেস তাতে ক্ষমা চেয়েছে। কিন্তু তারা জম্মু কশ্মীরে একের পর এক স্বৈরতান্ত্রিক পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা রাজ্যকে ভেঙে দিল। ৩৭০ ধারা এক তরফাভাবে বাতিল করে দিল। এই স্বৈরতান্ত্রিক পদক্ষেপ নিয়ে বিজেপি কোন দিন ক্ষমা চেয়েছে? বিরোধীরা বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে যারা সরব হয়েছেন তাদের জেলে ভরা হয়েছে। ভীমা কোরেগাঁও মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বিনা বিচারে জেলে মারা গেলেন স্ট্যান স্বামী। জেলে বিনা বিচারে বন্দি হয়ে রয়েছে গবেষক উমর খালিদ, মীরান হায়দার। তাঁদের সংবিধানিক নাগরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সংবিধান কোন রীতি নীতিকে তোয়াক্কা করে না বিজেপি। দেশে মোদীর আমলে মণিপুরে সংবিধানের অস্তিত্ব আজকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে সংসদে অভিযোগ করেছেন মণিপুরের কংগ্রেস সাংসদ। তিনি বলেন, গত ১৯ মাস ধরে কীভাবে হিংসা অভিযান চলছে রাজ্যে তা সবাই জানেন। সেখানে সংবিধানের কোন অস্তিত্ব আছে বলে মনে হয় না। মোদীকে তার ভাষণে এনিয়ে বক্তব্য দাবি করলেও এতে কোন আশ্বাস মেলেনি। মণিপুরে বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকারের রাজত্বে সংবিধানের কোন নীতি চলে না। তা নিয়ে মোদী কোন ভাবানা চিন্তা দেখা যায়নি। যেভাবে মোদী ঘৃণা ভাষণের বিরুদ্ধে বিরোধী দল মোদীর ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির লঙ্ঘনের করলেও তাতে মোদীর কোন জবাব মেলেনা। মোদী সংবিধানকে এবাবেই দেখেন বলে জানাচ্ছেন বিরোধীরা।
Modi Constitution
ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটাই উচ্চারণ করলেন না
×
Comments :0