দীপশুভ্র সান্যাল
প্রতিবাদী থেকেছেন বরাবর। চাপে পড়েও ছাড়েননি কংগ্রেস। বাড়িছাড়া থাকতে হয়েছে দীর্ঘদিন। ফেরেন গত সপ্তাহেই। সেই মানিক রায়কেই গাছে বেঁধে টানা মারধর চলল। আঘাতের জেরে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। ঘটনায় সরাসরি তৃণমূলকে দায়ী করেছে কংগ্রেস।
জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি থানার খাগড়া বাড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের হটাৎ কলোনির এই ঘটনায় ধিক্কারের রব উঠেছে সর্বত্র। নিহত মানিক রায়ের ভাই বিজয় বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি মর্গে ময়নাতদন্তের পর দাদার মৃত দেহ নিতে আসেন।
মানিক রায়ের বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী। রয়েছে দুই কিশোর সন্তান। পরিবার স্পষ্ট জানিয়েছে নদীর বুক থেকে বালি তোলার প্রতিবাদ করতেন বলে তৃণমূলের লুটেরা বাহিনীর রাগ ছিল।
সেখানেই অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছর ধরে দাদার ওপর স্থানীয় তৃণমুল নেতারা চাপ সৃষ্টি করে আসছিলো কংগ্রেস ছেড়ে দেওয়ার জন্য। দাদা রাজি হয়নি। এলাকার নানা অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বরাবরই প্রতিবাদী ছিলেন দাদা। পাঁচ বছর আগে দাদার বাড়িঘর ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। নারী নির্যাতনের মিথ্যা মামলা করেছিল। সেই মামলা আজও চলছে। এরপর প্রাণ বাঁচাতে পরিবার নিয়ে শিলিগুড়ি গিয়ে বসবাস করে বেশ কয়েক বছর।’’
গত সপ্তাহে গ্রামে ফেরে পরিবার। পরিবার জানিয়েছে, বুধবার গ্রামের তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্য, বুথ সভাপতি সহ অন্যান্য তৃণমূল কর্মীরা পাঁচ বছর আগের মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। তিনি রাজি না হলে, ঘরের বেড়া ভেঙে টেনে হিঁচড়ে বার করে বাড়ির সামনের গাছে বেঁধে অকথ্য শারীরিক নির্যাতন করে। এরপর শরীর নিস্তেজ হয়ে গেলে তারা চলে যায়। স্ত্রী ময়নাগুড়ি থানায় ছুটে যান। পুলিশ আহত মানিক রায়কে প্রথমে ময়নাগুড়ি এবং পরে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠালে বৃহস্পতিবার ভোরে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
জেলা কংগ্রেস সভাপতি পিনাকী সেনগুপ্ত এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘‘গোটা রাজ্যে জুড়েই এমন অবস্থা সৃষ্টি করছে তৃণমুল, আমরা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সবাইকে গ্রেপ্তারের দাবিতে জেলা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হচ্ছি।’’
রাজ্য জুড়ে এমন অবস্থা সৃষ্টি করছে তৃণমূল। চোপড়ায় থেকে আড়িয়াদহে এমন ডেকে এনে এমন নির্মম নির্যাতনের একের পর এক ঘটনা সামনে। তবু বেপরোয়া বাহিনী হামলা চালিয়েই যাচ্ছে। প্রতিবাদের মুখে এদিন পাঁচজনকে আটক করতে বাধ্য হয়েছে পুলিশ।
নিহতের স্ত্রী স্বপ্না রায় বলেন, ‘‘আমাদের ঘরের পাশে নদী। সেই নদী থেকে তৃণমূলের লোকজন বালি তুলত। আমার স্বামী বাধা দিত। আমরা কেন এত বছর পর আবার গ্রামে এলাম, তা নিয়েও ওদের রাগ।’’ তিনি বলেছেন, ‘‘গতকাল রাতে ঘরের বেড়া ভেঙে আমরা ছোটো ছোটো বাচ্চাদের সামনে থেকেই ওরা তুলে নিয়ে গিয়ে গাছে বেঁধে মারে, যার জেরে আমার স্বামী মারা যায়।’’
Comments :0