সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারি ঘিরে একাধিক অভিযোগ থাকলেও ফের রাজীব কুমারকেই রাজ্য পুলিশের ডিজি’র পদে ফিরিয়ে আনল সরকার। গত ৭ ডিসেম্বর ১৯৮৯ ব্যাচের আইপিএস আধিকারিক রাজীব কুমারকেই রাজ্য পুলিশের সর্বোচ্চ পদে নিয়োগ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। লোকসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা হতেই তাঁকে রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল পদ থেকে সরিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন। কমিশনের নির্দেশ ছিল তাঁকে নির্বাচনের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। তাঁর জায়গায় নিয়োগ করা হয়েছিল সঞ্জয় মুখার্জিকে।
সোমবার নির্দেশিকা জারি করে রাজীব কুমারকে ফিরিয়ে আনা হলো ডিজি পদে। সঞ্জয় মুখার্জিকে দমকলের ডিজি পদে বসানো হয়েছে। রাজ্যের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সোমবার এই মর্মে বিজ্ঞপ্তি জারি করলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস।
সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি তদন্তে শাসক তৃণমূলের নেতানেত্রীদের রক্ষা করতে তাঁর ভূমিকা বারেবারে সামনে এসেছে। আবার তদন্ত থেকে এই পুলিশ আধিকারিককে রক্ষা করতে বরাবর তৎপর থেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নিজে। রাজীব কুমারকে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার জেরার মুখেও পড়তে হয়েছে।
সারদা কাণ্ডে তথ্য, নথি বিকৃতির অভিযোগের তদন্তে জেরার জন্য ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি লাউডন স্ট্রিটে তৎকালীন পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে পৌঁছেছিল সিবিআই। সেদিনই ছিল ব্রিগেড ভাসানো লাল ঝান্ডার সমাবেশ। জেরা আটকাতে মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা গিয়েছিল রাস্তায় ধর্ণা দিতে।
সারদা কাণ্ডে তৃণমূলের নেতানেত্রীদের যোগসাজস আড়াল করতে রাজীব কুমারের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই-ও। সিবিআই সুপ্রিম কোর্টে জানায় যে সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির নথিপত্র লোপাট, বিকৃত করার কাজে যুক্ত থেকেছেন এই আইপিএস আধিকারিক। মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রাজীব কুমারের গ্রেপ্তারিতে বাধা তুলে নিলেও সিবিআই তাঁর গ্রেপ্তারিতে গড়িমসি চালায়।
গ্রেপ্তারিতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার সময় তদন্তে আটবার সমন পাঠালেও মাত্র দু’বার হাজিরা দেন রাজীব কুমার। আলিপুর আদালতেও জামিন খারিজের পরে প্রায় ১৩ দিনের আত্মগোপন পর্ব কাটিয়ে ২০১৯ সালের অক্টোবরে হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পেয়ে যান এই বিতর্কিত আইপিএস আধিকারিক।
২০১৯’র ১ অক্টোবর। অমিত শাহ সেদিন কলকাতায় এসেছিলেন, কাকতালীয়ভাবে সেদিনই মাত্র ৫০ হাজার টাকায় আগাম জামিন পেয়ে যান রাজীব কুমার। সিবিআই’র হলফনামা অনুযায়ী, সারদা চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি ১০ হাজার কোটি টাকার, রোজভ্যালি কাণ্ডে অর্থ নয়ছয়ের অঙ্ক খাতায় কলমে ১৭ হাজার কোটি টাকা। এরাজ্যে শুধু সারদা-রোজভ্যালি নয়, ছোট-বড় একাধিক চিট ফান্ড সংস্থার হাতে সর্বস্ব খুইয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন ২৬৪ জন আমানতকারী এবং এজেন্ট! স্বাধীনতার পরে পশ্চিমবঙ্গের বুকে সর্ববৃহৎ এই দুই আর্থিক কেলেঙ্কারিতেই রাজীব কুমারকে তলব করেছিলো সিবিআই। পরে যদিও রহস্যজনকভাবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা কমে যায়।
Rajeev Kumar
সেই রাজীব কুমারকেই পুলিশের ডিজি পদে ফেরালো রাজ্য
×
Comments :0