রাহুল বলেন, ‘‘হিন্দু ধর্ম সহিষ্ণুতার কথা বলে। বিজেপি নিজেদের হিন্দু বলে কিন্তু তারা সব সময় হিংসার কথা বলে।’’ পাল্টা প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘হিন্দু সমাজকে অসহিষ্ণু বলা অপরাধ।’’ রাহুল পাল্টা বলেন, ‘‘আরএসএস, বিজেপিকে বলা মানে হিন্দু সমাজকে বলা নয়।’’
দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি থেকে কৃষি বিল, নিট থেকে অগ্নিবীর প্রতিটা বিষয় নিয়ে এদিন কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেন রাহুল গান্ধী।
লোকসভায় তুমুল হট্টগোলের মধ্যে বিরোধী দলনেতা বলতে থাকেন, বিজেপি ২৪ ঘন্টা ঘৃনা, হিংসা, ভয়ের কথা বলতে থাকে। অযোধ্যা বিজেপিকে জবাব দিয়েছে...’’ এরপরই মাইক বন্ধ হয়ে যায় রাহুলের। মাইক ফের চালু হওয়ার পর তিনি বলেন, ‘‘রাম জন্মভূমি বিজেপিকে বার্তা দিয়েছে। বিজেপি রাম মন্দিরের উদ্বোধন করেছে। সেখানে তারা হেরেছে। সমাজবাদী পার্টি জয়ী হয়েছে।’’ তার কথায় ওখানে মানুষের থেকে জমি কেড়ে নেওয়া হয়েছে ক্ষতিপুরন দেয়নি সরকার। ছোট দোকাদারদের দোকান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। মানুষ ওখানে ডাক পায়নি মন্দির উদ্বোধনে। মোদী চেয়েছিল ফৌজাবাদ লোকসভা থেকে লড়তে কিন্তু তিনি জানতেন হারবেন তাই সেখান থেকে প্রতিদ্বন্দিতা করেননি।
রাহুলের বক্তব্যে উঠে আসে ভারত জোড় এবং ন্যায় যাত্রার কথা। তিনি বলেন, ‘‘যাত্রা চলাকালিন একজন মহিলা আমাকে জানান আমার ওপর অত্যাচার করছেন আমার স্বামী কারণ তাকে খাবার দিতে পারিনি। সে খাবার দিতে পারেনি তার কাছে টাকা ছিল না বলে।’’ এরপরই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘‘মূল্যবৃদ্ধির কারণে গোটা দেশের মানুষ ভয়ভীত।’’
অগ্নিবীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘অগ্নিবীরের নাম করে দেশের যুবকদের মৃত্যুর মুখে দাঁড় করানো হচ্ছে তাদের শহীদের সম্মান দেওয়া হয় না, ক্ষতিপুরন দেওয়া হয় না।’’
রাজনাথ সিং বলেন, ‘‘রাহুল মিথ্যা বলছেন। শাহ বলেন, এই কথার প্রমান দিতে হবে।’’ পাল্টা রাহুল বলেন, ‘‘কে সত্যি বলছে কে মিথ্যা বলছে তা দেশের মানুষ জানেন। অগ্নিবীর সেনা বাহিনীর কোন প্রকল্প নয়। এটা প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা।’’
রাষ্ট্রপতি ভাষণে একবারও ‘মণিপুর’ শব্দ উল্লেখ করা হয়নি। সেই প্রসঙ্গ তুলে বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘মণিপুর জ্বলছে প্রধানমন্ত্রীর নীতির কারণে। একদিনের জন্য তিনি সেখানে যাননি।’’
মোদী সরকারের আমলে বেকারত্বের হার সব থেকে বেশি। রাহুল বলেন, ‘‘দেশের যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারেনি সরকার। নোট বন্দির কারণে দেশের ছোট এবং মাঝারি ব্যবসায়ীরা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।’’
দ্বিতীয় মোদী সরকারের তিন কৃষি বিল নিয়ে উত্তাল হয় গোটা দেশ। দিল্লি সীমান্তে টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে ধর্ণায় বসেছিলেন কৃষকরা। একদিনও তাদের সাথে কথা বলেননি প্রধানমন্ত্রী।
রাহুল বলেন, ‘‘কৃষকদের জন্য নয় আদানি আম্বানিদের জন্য কৃষি আইন তৈরি করেছিল বিজেপি সরকার। ৭০০ কৃষক শহীদ হয়েছেন, তাদের স্মরণে লোকসভায় মৌনতা পালন করতে দেননি। কৃষকরা বলেছিল এমএসসির আইনি বৈধতা দিতে হবে, তাদের ঋণ মুকুব করতে। সরকার তাতে রাজি হননি। কিন্তু কর্পোরেটদের ঋণ মুকুব করেছে এই সরকার।’’
নিট প্রসঙ্গে লোকসভার বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘নিটে একজন পড়ুয়া প্রথম স্থান পেতে পারে কিন্তু তার যদি পয়সা না থাকে সে ডাক্তার হতে পারবে না। গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা বড়লোকদের জন্য। সাত বছরে ৭০ বার পেপার লিক হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ভাষণে এই সব কথা আসে না। আমরা একদিন আলোচনা চেয়েছি সরকারের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে এই সমস্যার সমাধান করার। নিটের পড়ুয়ারা অনেক প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষায় বসে। আজ তাদের এই পরীক্ষার ওপর কোন আস্থা নেই।’’
রাষ্ট্রপতি দৌপদী মূর্মূ তার ভাষণ নিট প্রসঙ্গে শুধু বলেছিলেন যে, ‘‘তদন্ত চলছে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে।’’
এদিন রাহুল যাতে বলতে না পারে তার জন্য বার বার হইহট্টগোল করতে থাকে ট্রেজারি বেঞ্চের সদস্যরা।
Comments :0