Kanchanjunga Express Accident

চালক নয়, রেলের ভুলে কাঞ্চনজঙ্ঘার দুর্ঘটনা, জানালো রিপোর্ট

রাজ্য

কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার একাধিক ত্রুটির কথা উল্লেখ করে তদন্তের ২৯পাতার রিপোর্ট জমা দিলেন চিফ কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি। চালকের দোষে নয়, ট্রেন পরিচালনার গাফিলতির কারণেই ঘটেছিলো ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা রিপোর্ট স্পষ্ট জানাল কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি।
গত ১৭জুন শিলিগুড়ি মহকুমার চটেরহাটের নিজবাড়ি এবং রাঙ্গাপানির স্টেশনের মধ্যবর্তী এলাকায় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। একটি মালগাড়ি পেছন থেকে এসে সজোরে ধাক্কা মারে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে। জোর ধাক্কায় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের একাধিক কামড়া উঠে পড়ে মালগাড়ির ইঞ্জিনের ওপর। লাইনচ্যুত হয় মালগাড়ির কামড়াও। দুর্ঘটনায় কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের গার্ড ও মালগাড়ির চালক সহ প্রায় ১০ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় প্রায় ৫০ জন। দুর্ঘটনার পরেই রেলের সামগ্রিক পরিচালন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। যদিও রেলের পক্ষ থেকে মৃত মালগাড়ির চালকের ঘাড়েই দুর্ঘটনার দায় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। বলা হয় মালগাড়ির চালকের ভুলেই নাকি দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনার পরেই জানা গিয়েছিলো স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বন্ধ থাকায় কাগুজে সিগন্যাল দিয়ে ট্রেন চালানো হচ্ছিলো রাঙ্গাপানি এবং চটেরহাট স্টেশনের মাঝের অংশে। এরপরেই এই দুর্ঘটনার তদন্তের ভার দেওয়া হয় উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য সুরক্ষা কমিশনারকে। 
উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রেল বোর্ডের কাছে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার ২৯ পাতার প্রভিশনাল রিপোর্ট জমা দিয়েছেন উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য সুরক্ষা কমিশনার (চিফ কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি) জনক কুমার গর্গ। তিনি তার দেওয়া রিপোর্টে দুর্ঘটনার সময়কার একাধিক ত্রুটির কথা উল্লেখ করার পাশাপাশি রেল পরিচালনার ক্ষেত্রে যে অব্যবস্থা রয়েছে তার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এদিন পেশ করা রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ট্রেনটি নিউ জলপাইগুড়ি রেল স্টেশন থেকে ছাড়ার পরে মালগাড়ি ট্রেনের চালক ও ট্রেন ম্যানেজারকে ওয়াকিটকি ইস্যু করা হয়নি। তার বদলে ট্রেনের চালক ও ম্যানেজার সিইউজি ফোনে যোগাযোগ রাখছিলেন। মালগাড়ির চালক ও গার্ডের মধ্যে দুর্ঘটনার অন্তত আধ ঘন্টা আগে দুই বা শেষ কথা হয়েছিলো। তবে কি বিষয়ে কথপোকথন হয়েছিলো তা জানা যায়নি। দুর্ঘটনার দিন মোট ৯টি সিগন্যাল খারাপ ছিলো। স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং ব্যবস্থায় ট্রেন চলাচল পরিচালনা করার মতো উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ছিলো না ট্রেন চালক, ট্রেন ম্যানেজার এনং স্টেশন মাস্টারের। শুধু তাই নয়, দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে সিসিআরএস জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার দিন রাঙ্গাপানির কাছে আরএইচ ১.২৯’র একটি বাঁক রয়েছে। ডাউন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ১০.৯৭কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় চলছিলো এবং বাঁকের পরেই ট্রেনটি দাঁড়িয়ে যায়। সেখানে ওই বাঁকের কাছে সেই সময় আপ লাইনে নর্থ ইস্ট এক্সপ্রেস নিউ জলপাইগুড়ির দিকে আসছিলো। কিন্তু ডাউন লাইনে প্রায় ৭৮কিমি প্রতিঘন্টায় যাচ্ছিলো মালগাড়ি ট্রেনটি। বাঁকের কারণে আপ লাইনে থাকা নর্থ ইস্ট এক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য ডাউন লাইনে দাঁড়িয়ে থাজা কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ঢাকা পড়ে যায়। বাঁক পেরিয়ে ৩৩২মিটার আগে এএস ৬৫২ সিগন্যালের কাছ এমার্জেন্সি ব্রেক কষেছিলো সহকারী চালক ও চালক। কিন্তু গতি কম হয়ে দাঁড়িায় প্রায় ৪০ কিমি প্রতি ঘন্টায়। তারপরেই মালগাড়িটি কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে ধাক্কা মারে। 
রিপোর্টেও চিফ কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি উল্লেখ করেছেন দুটি ট্রেনের চালক এবং গার্ডকে কাগুজে সিগন্যাল হিসেবে টি৩৬৯ (৩বি) এবং টিএ—৯১২ ফর্ম দিয়েছিলো রাঙ্গাপানি স্টেশন মাস্টার। সেই কাগুজে সিগন্যালে লাল সিগন্যালকে অন হিসেবে মান্যতা দিয়ে চালকদের এগিয়ে যাবার অনুমতি দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু সেক্ষেত্রে ট্রেন দুটির সর্বোচ্চ গতিবেগের কোনরকম উল্লেখ করা হয়নি। দুটি ট্রেনের মধ্যে ব্যবধানিক দূরত্ব এতোটাই কম ছিলো যে, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে সামনে দেখে আপৎকালীন ব্রেক কষে মাগাড়ির গতিবেগ ঘন্টায় ৪০কিমি নামিয়ে আনা হলেও দুর্ঘটনা এড়ানো যায়নি। সেক্ষেত্রে টিএ—৯১২ ফর্ম নয়, টিভি ৯১২ ফর্ম দেওয়া প্রয়োজন ছিলো। শুধু তাই নয়, টিএ—৯১২ ফর্মে গার্ডের কোন স্বাক্ষরও ছিলো না। এছাড়াও মালগাড়ির চালককে দেওয়া অনুমতিপত্রে নির্দিষ্ট কোন গতির কথা উল্লেখ নেই। তাই মালগাড়িটি নির্দিষ্ট গতিতে চলছিলো কিনা সেবিষয়টিও স্পষ্ট নয়। স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল খারাপ থাকলেও সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে ট্রেন চালানো হয়নি। এই ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট যে ফর্মে ট্রেন চালনোর অনুমতি দেওয়া হয়ে থাকে চালক ও ট্রেন ম্যানেজার (গার্ড)’দের রাঙ্গাপানির স্টেশন মাস্টার তা দেননি। 
কমিশনারের দাবি, দুর্ঘটনাগ্রস্ত কাঞ্চনজঙ্ঘার চালক ৪০ ঘন্টা ও মালগাড়ির চালক ৩০ঘন্টা বিশ্রাম নেবার পরেই কাজে যুক্ত হন। ব্রেথ অ্যানালাইজার ও রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী দুই ট্রেনের চালকদের কেউই নেশাগ্রস্ত ছিলেন না।

Comments :0

Login to leave a comment