Mamata Niti Ayog Salim

মাইক বন্ধ করা অন্যায়, বোঝা উচিত মমতারও: সেলিম

জাতীয় রাজ্য

রণদীপ মিত্র

মাইক বন্ধ করা হয়ে থাকলে সেটা অন্যায়। বিজেপি শাসিত রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারে কোনও গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মানা হয় না। তবে মমতা ব্যানার্জিরও বোঝা উচিত মাইক বন্ধ করে দিলে কেমন লাগে। চিট ফান্ডের বিরুদ্ধে কথা বলতে দেননি বিধানসভায়, সন্দেশখালি নিয়ে বলতে যাওয়ায় মাইক বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
শনিবার নয়াদিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠকে মমতা ব্যানার্জির মাইক বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। 
এদিন বৈঠক থেকে বেরিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমি বলা শুরু করতেই থামিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটা খুবই অপমানজনক। আর কোনওদিন বৈঠকে যাব না।’’
মমতা ব্যানার্জির এই বৈঠকে যোগ দেওয়া নিয়ে চর্চা রয়েছে গোটা দেশে। কারণ বাজেটে রাজ্যগুলিকে মারাত্মক বঞ্চনার প্রতিবাদে ‘ইন্ডিয়া’ ব্লকের মুখ্যমন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি জানান যে তিনি যাচ্ছেন। তাঁর বক্তব্য ছিল যে প্রতিবাদ জানাতে বৈঠকে যোগ দিচ্ছেন। রাজনৈতিক মহলে যদিও তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একান্ত বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা ছিল।
এদিন বীরভূমে সিপিআই(এম)’র বৈঠকে যোগ দেন সেলিম। সিউড়িতে সাংবাদিক সম্মেলনে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘মাইক বন্ধ করা হয়ে থাকলে সেটা অন্যায়। বিজেপি শাসিত রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারে কোনও গণতান্ত্রিক রীতিনীতি মানা হয় না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মাইক বন্ধ করা, চার্টার্ড প্লেনে গেলেন, মাইক বন্ধ করা হলো, এর প্রতিবাদ করা উচিত।’’ 
তাঁর সংযোজন, ‘‘ওঁরও বোঝা উচিত মাইক বন্ধ করে দিলে কেমন লাগে। চিট ফান্ডের বিরুদ্ধে কথা বলতে দেননি বিধানসভায়। সিপিআই(এম) বিধায়ক গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জি দেবলিনা হেমব্রমের মাইক কেবল বন্ধ করা হয়নি, মারা হয়েছিল বিধানসভার ভেতর। সন্দেশখালির অন্যায় নিয়ে বলতে নিরাপদ সর্দার, তখন সোনালি গুহ মাইক বন্ধ করে দেন। মাইক বন্ধ করা হঠকারিতা কেবল নয়, কর্তৃত্ববাদী আচরণ। উনিই আমাদের বলেছিলেন মুখে লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে রাখতে।’’
এক প্রশ্নে সেলিম বলেন, ‘‘নীতি আয়োগে কোনো নীতি নির্ধারণ হয় না। সে জন্যই তো যোজনা কমিশন তুলে দেওয়া হয়েছে। হয় নাগপুর বা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে সিদ্ধান্ত হয়। ‘ইন্ডিয়া’ ব্লকের মুখ্যমন্ত্রীরা না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বাজেট বঞ্চনার প্রতিবাদে। প্রথম থেকে ‘ইন্ডিয়া’ব্লকের প্রশ্নে কভি না কভি না অবস্থান মমতার। 
গিয়ে দেখলেন ভুল হয়েছে। সবাই বলতে আরম্ভ করল ইন্ডিয়া ব্লক ছেড়ে দিলেন উনি। বলা হচ্ছে যে বিরোধী  ঐক্য ভেঙে গেল, যা আরএসএস চাইছে।’’ 
তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নির্দিষ্ট হওয়া উচিত। কোনও তামাশা উচিত নয়। উনি বিজেপি সরকারের বিরোধিতা নীতিগত ভাবে করেন না।  তিনি এরকম ফরম্যাট,যেমন ‘মাইক বন্ধ করে দিয়েছে’, এমন বিষয়ে প্রচার তোলেন। বেকারি, একশো দিনের কাজ, বকেয়া, কলকারখানা, বিদ্যুৎ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোন কোন দাবি রেখেছেন, প্রজেক্ট দিয়েছেন, নীতি আয়োগ রূপায়ন করেনি বা করলেও কেন্দ্র টাকা দেয়নি, সেটি বলুন। যেমন আমরা বলতাম যেমন বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে জাতীয় স্তরের বৈঠকে সরব হতেন বামপন্থীরা। উনি বলুন, রাজ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের আমানত-ঋণ অনুপাত নিয়ে ক’বার বলেছেন। সংসদে তৃণমূলের সাংসদরা ক’বার বলেছেন। এমন বিষয় থাকলে আমরা সমর্থন করব।’’
১ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা বকেয়া। আবাস, রেগার টাকা পায়নি রাজ্য। এগুলি বলার চেষ্টা করেছিলেন বলে দাবি মমতার। সে প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘এতো পুরনো কথা। পঞ্চায়েতের সময় বলেছিলেন দিল্লি থেকে আনব। এগুলো বলার জন্য তো সাংসদরা যান। একান্ত সাক্ষাৎকার করতে যান, সময় না পেলেই রেগে যান। ইডি-সিবিআই এখন বর্ষায় ঘুমে আছে। শরতে না জেগে ওঠে, সেই জন্য একান্ত সাক্ষাৎকার চেয়েছিলেন। যাতে ম্যানেজ করতে যাতে পারেন।’’
সেলিম বলেন, ‘‘বিজেপি বিরোধী দলগুলির মুখ্যমন্ত্রীরা যাননি। বিজেপি এবং তাদের সমর্থক দলগুলির মুখ্যমন্ত্রীরা এই বৈঠকে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে মমতা ব্যানার্জি একজন। আমরা আগেও বলেছি উনি বিজেপি’র সম্ভাব্য সঙ্গী। উনি বারেবারে দর কষাকষি করেন। তবে সেটা রাজ্যের জন্য নয়, নিজের এবং নিজের পরিবারের জন্য।’’

Comments :0

Login to leave a comment