Mamata Banarjee

গণতন্ত্র হত্যার গ্লানি মেখে জবাবদিহির চেষ্টা মমতার

রাজ্য

তৃণমূল নেত্রী যেন আজ কর্মী সমর্থকদের সামনে জবাবদিহি করলেন। তিনি মেনে নিলেন পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা হয়েছে। কিন্তু দায় বিরোধীদের দিকেই ঠেললেন তিনি। 
শুক্রবার একশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে মমতা ব্যানার্জি বলেন, ‘‘আমাদের ১৮ জন কর্মী খুন হয়েছে। তৃণমূলের লোকেরা কি তৃণমূলকে খুন করবে?’’ একটু থেমেই বলেন, ‘‘যা ঘটেছে তাতে আমি দুঃখিত। বুদ্ধবাবুর আমলে ২০০৩-এ যে পঞ্চায়েত, ভোটের দিন ৮৯ জন খুন হয়েছে। ২০০৮-এ ভোটের দিন ৩৯জন খুন হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘৭১ হাজার বুথে ভোট হয়েছে। মাত্র তিনটে জায়গায় অশান্তি হয়েছে। ভাঙড়ে হাঙড়রা অশান্তি করেছে। কোচবিহারে কয়েকজন মারা গিয়েছে। ডোমকলে আমরা হেরেছি।’’ 


মমতার একাধিক দাবি নিয়ে বরাবরের মতো প্রশ্ন উঠেছে এদিনও। বগটুইয়ে দলের এক অংশ অন্য অংশের পরিবারকে স্রেফ পুড়িয়ে মেরেছে। বাদ যায়নি শিশু এবং মহিলারা। পঞ্চায়েতে প্রার্থী হওয়ার দ্বন্দ্বে খুনোখুনির একের পর এক ঘটনা সামনে এসেছে। বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে টেনে খুনের যে তথ্য দিয়েছেন, তাও মিলছে না। অনেকেই মনে করিয়েছেন, এবার প্রচারে সরাসরি সিপিআই(এম)-কে সপ্তাহে একদিন পেটানোর আওয়াজ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। তাঁর ‘বুদ্ধবাবু’-কে এমন ভূমিকায় দেখা যায়নি।
এই নিয়ে তিনটি পঞ্চায়েত নির্বাচন হলো মমতা ব্যানার্জির সরকারের সময়। তিনটি নির্বাচনেই অশান্তি হয়েছে। এদিন সভা মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত স্তরে একটু ঝামেলা হয়। মা মেয়ের মধ্যেও ঝামেলা হয় ভোট দেওয়া নিয়ে। বহু জায়গায় অরাজনৈতিক পঞ্চায়েত রয়েছে। সিপিআই(এম) তো রাজনৈতিক পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু করেছে। আমরা তা বহন করে চলেছি।’’


১৯৭৭ সালে প্রথম বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্রাম মানুষের জন্য গ্রামের সরকার তৈরি করা হয়। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত। তারপর তা গোটা দেশের সামনে মডেল হয়ে ওঠে। দেশে সংবিধান সংশোধন করে তা গৃহীত হয়। এই ব্যবস্থাতেই যে আপত্তি রয়েছে এদিন তা প্রকাশ করে ফেলেছেন মমতা। বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ বারবারই বলেছে, মানুষের পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে কার্যত ধ্বংস করেছে তৃণমূল। সেই জন্যই ‘দুয়ারে সরকার’ স্লোগান দিতে হচ্ছে। 
তৃণমূল নেত্রীর মুখে হিংসার কথা শোনা গেলেও এই বিষয় মুখ খোলেননি তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। তিনি বক্তব্যের প্রথমেই জয়ী তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য, জেলা পরিষদ প্রার্থীদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘নবজোয়ার কর্মসূচিতে মানুষ যাদের নাম দিয়েছেন তাদের প্রার্থী করেছে তৃণমূল।’’ বামপন্থীদের স্লোগান নকল করে তিনি বলেছেন, ‘‘মানুষের পঞ্চায়েত গঠন করার জন্য আপনাদের অভিনন্দন।’’ 


কিন্তু কলকাতা হাই কোর্ট তো তৃণমূল প্রার্থীর জয়ের ব্যাবধান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। উত্তর ২৪ পরগনার জ্যাংড়ার একটি বুথে যা ভোট পড়েছে তার থেকে ভোটদাতার সংখ্যা কম। আবার নির্বাচনের দিন সব সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় তৃণমূল কর্মীদের ছাপ্পা দেওয়ার দৃশ্যও ধরা পড়েছে। তাহলে কি সত্যি মানুষ তৃণমূলকে জিতিয়েছেন? তাহলে কেন ব্যালট পেপার খেতে হলো, কেন সর্বত্র গণনা কেন্দ্রের বাইরে ব্যালট মিলছে, উঠেছে এই প্রশ্নও।  


উল্লেখ্য এদিন ইডি, সিবিআই নিয়ে কোন কথা বলতে শোনা যায়নি তৃণমূল নেত্রীর কথায়। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তিনি তুলেছেন। তিনি জানিয়েছেন রাজ্যে নতুন প্রকল্প চালু করবেন লোকসভা নির্বাচনের আগে, যার নাম ‘খেলা হবে’। আগে ১১ আগস্ট খেলা হবে দিবস পালন করতো এই সরকার। সেইদিন পাড়ায় পাড়ায় ফুটবল খেলা হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন এই খেলা হবে প্রকল্প আসলে রাজ্যের টাকায় ১০০ দিনের কাজের নতুন প্রকল্প। 


প্রবল দুর্নীতির দায়ে রাজ্যজুড়ে এই প্রকল্প বন্ধ। বিজেপি দিল্লি থেকে তদন্ত দল পাঠালেও দোষী কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়নি। বরং, রাজ্যে গরিব মানুষের রোজগার বন্ধ হয়েছে। 
প্রত্যাখানের মেজাজ টের পেয়েছেন মমতা। টের পেয়েছেন প্রতিরোধে সক্ষম জনতার ক্ষোভ। লুটের ব্যালট বাক্স কোথাও পুড়েছে জনতার ক্ষোভে, কোথাও মহিলারা পুকুরে ফেলেছেন ব্যালট বাক্স। সর্বাঙ্গে গণতন্ত্র হত্যার গ্লানি নিয়ে জবাবদিহির চেষ্টা করে গেলেন মমতা ব্যানার্জি।

Comments :0

Login to leave a comment