হুমকির জেরে বন্ধ হয়ে গেল রাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়! যে সে হুমকি নয়। একেবারে গুরুতর হুমকির কথাই জানা গিয়েছে। রাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয় শেষ পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হলো। লাটে উঠল পঠনপাঠন। চরম দুরবস্থা রাজ্যের শিক্ষাঙ্গনে। এমন আগে কখনও হয়েছে কি না, মনেই করতে পারছেন না এ রাজ্যের শিক্ষাবিদরা। এমনই মারাত্মক অভিযোগ এনেছে বাবাসাহেব আম্বেদকর এডুকেশন ইউনিভারসিটি। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি রক্ষার তাগিদে একপ্রকার বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মৈত্রী ভট্টাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিযোগ, বেসরকারি বিএড ও এমএড কলেজের সঙ্গে যুক্ত বেশ কয়েকজন ব্যক্তির কাছ থেকেই হুমকি আসছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মৈত্রী ভট্টাচার্য জানান, সরাসরি ও ফোনে এই হমকি আসছিল। হুমকির জেরে নিরাপত্তার অভাববোধ থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। থানাকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। বালিগঞ্জ থানা সূত্রে যদিও এই ধরনের অভিযোগের কথা কিছু জানা নেই বলে জানানো হয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক লক্ষীনারায়ণ পান বলেন, ‘‘বিষয়টি পরে জানাচ্ছি।’’ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে অনুমতি নিয়ে বিক্ষোভ দেখানোর জন্য থানা থেকে বলা হয়। অনুমোদনবিহীন কলেজগুলি থেকে আসা বিক্ষোভপ্রদর্শনকারীরা জানান, তাঁদের এই বিক্ষোভ জারি থাকবে।
বেশ কয়েক মাস ধরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বাবাসাহেব আম্বেদকর এডুকেশন ইউনিভারসিটি এক ধাক্কায় চলতি শিক্ষাবর্ষে ২৫৩টি কলেজে ছাত্র ভর্তির অনুমোদন বাতিল করে দিয়েছে। রাজ্যে ৬৬৪টি বিএড কলেজ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনে চলছিল। প্রসঙ্গত, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই বিএড কলেজগুলিতে ছাত্র ভর্তি নিয়ে চরম বেনিয়ম শুরু হয়। পরিকাঠামোবিহীন কলেজগুলিকে অর্থের বিনিময়ে অনুমোদন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বারংবার। এই বছরই শিক্ষক নেই, কলেজের ফায়ার লাইসেন্স নবীকরণ সহ বেশ কিছু বিষয়ের উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, এগুলি যথাযথ না থাকলে অনুমোদন নবীকরণ করা হবে না। এর জেরে বেসরকারি কলেজগুলি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে। কোনও কারণ দর্শানোর সুযোগ না দিয়ে ২৫৩টি কলেজে ছাত্র ভর্তি বন্ধ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় বলে অভিযোগ তোলে এই বেসরকারি কলেজগুলির কর্তৃপক্ষ। অথৈই জলে রাজ্যের বহু পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ। কারণ, অনেক কলেজ আগে থেকেই পড়ুয়াদের থেকে আসন পেতে অগ্রিম টাকা নিয়ে রাখে। কিন্তু অনলাইনে ভর্তির সুযোগ করে দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই সিদ্ধান্তে।
এদিকে বেসরকারি বিএড কলেজগুলি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখানো চলছে তিন দিন ধরে। অনুমোদনের দাবিতে তাঁরা রাজভবনেও বিক্ষোভ দেখাবেন বলে জানিয়েছেন। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় এই কাজ করেছেন বলে তাঁদের অভিযোগ। এত দিন উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর এক দালালচক্রের মাধ্যমে কলেজগুলিকে অর্থের বিনিময়ে অনুমোদন দিয়ে আসছিলেন বলে অভিযোগ করেন মিঠুন বারিক। কিন্তু সবেতেই টাকা দিতে দিতে তাঁদের আজ দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই বেসরকারি বিএড কলেজের কর্মকর্তা মিঠুন। তাঁর অভিযোগ, তাঁদের কলেজের ন্যাকের স্বীকৃতি আছে। তাও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ভর্তির অনুমোদন বাতিল করেছে। যে কলেজগুলির ওয়েবসাইট নেই, তাদের অনুমোদন দিচ্ছে। একপ্রকার তুঘলকিরাজ চালাচ্ছেন উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার, ইডি, রাজ্যপাল সহ সবাইকেই এই অর্থের কারবারের বিষয়টি তাঁরা জানিয়েছেন।
Comments :0