বাংলাদেশের অশান্তি এই রাজ্যে আমদানী করে এখানেও শান্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে বিজেপি ও আরএসএস। আমরা বাংলাদেশে শান্তি চাই, এখানেও শান্তি কোনভাবেই নষ্ট করতে দেবো না। বৃহস্পতিবার বর্ধমানে প্রয়াত কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি ও কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যের স্মরণসভার শেষে এক সাংবাদিক বৈঠকে একথা বলেছেন সিপিআই(এম) পলিটব্যুরো সদস্য সূর্য্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেছেন, দেশে পুঁজিবাদ ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেই শক্তিশালী হয়েছে কমিউনিস্ট পার্টি। এখানেও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের পার্টি জন্মলগ্ন থেকেই সংগ্রাম করে চলেছে। তিনি এদিন আরো বলেছেন, তৃণমূলের নিজেদের কোন নীতি নেই। বিজেপি ও আরএসএস’র নির্দেশ মেনেই এই দল চলে। মোহন ভাগবত’র সাথে মুখ্যমন্ত্রী সখ্যতা সকলেরই জানা। তিনি রাজ্যে এলে মুখ্যমন্ত্রীর আতিথেয়তায় থাকেন। তাই আরজি কর আন্দোলনের সময়ে আর এস এস’র প্রধানকে বলতে শোনা যায় এখানকার সরকারের উপর চাপ না বাড়াতে।
এদিন বর্ধমান সংস্কৃতি প্রেক্ষাগৃহে শপথে স্মরণে দুই কমিউনিস্ট নেতা কমরেড সীতারাম ইয়েচুরি ও কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যের স্মরণে যে সভা হয় তাতে ছিল উপছে পড়া ভীড়। সিপিআই(এম) পূর্ব বর্ধমান জেলা কমিটির উদ্যোগে এই সভায় সভাপতিত্ব করেন পার্টির জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন। শুরুতেই দুই কমিউনিস্ট নেতার প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করেন সূর্য্য মিশ্র, আভাস রায়চৌধুরী, অঞ্জু কর, অমল হালদার, অচিন্ত্য মল্লিক ছাড়াও পার্টির জেলা সম্পাদকমন্ডলী সদস্য ছাড়াও প্রবীণ নেতৃত্ব।
এদিন দুই কমিউনিস্ট নেতার জীবন থেকে শিক্ষা নেবার শপথে বলীয়ান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তাঁদের সংগ্রামী জীবন থেকে সমগ্র পার্টিকে ঐক্যবদ্ধভাবে ও দৃঢ়তার সাথে এই সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে হবে।
তিনি বলেছেন, ধর্মের নামে লুটেরা পুঁজি যুক্ত হয়ে শ্রমজীবী মানুষকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। বাংলায় গরিব মানুষের সংখ্যা ৭৪ভাগ। এর মধ্যে ভূমিহীন, পাট্টাদার, ভাগচাষী ও ছোট জমির মালিকও আছেন। হিন্দু ও মুসলমান ধর্মের মানুষ বেশি আছেন। এই মানুষের মধ্যে বামফ্রন্টের সরকারের সময়ে যে ঐক্য গড়ে উঠে ছিল আরএসএস, বিজেপি ও লুটেরা পুঁজির দল সেই ঐক্যকে ভাঙ্গার চেষ্টা করছে। তার বিরুদ্ধেই আমাদের সংগ্রামে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে। তিনি বলেছেন নানা সংস্কৃতির মধ্যেই ঐক্য গড়ে তোলা সম্ভব। এই কাজ না পারলে তাহলে আমাদের উপর যে দায়িত্ব তা পালন করতে পারবো না। তিনি এদিন ফের স্মরণ করিয়ে দেন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ বন্ধ করতে হবে পাশাপাশি আমাদের দেশেও সংখ্যাংঘুদের উপর যে যে আক্রমণ চলছে তাও বন্ধ হওয়া উচিত। তিনি বলেছেন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে কোন ধর্মের উপরই আক্রমণ মেনে নেওয়া যায়না। কমমরেড সীতারাম ইয়েচুরি ও কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য জীবনভর সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে আপোষহীনভাবে লড়াই চালিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, দেশে শ্রমিক, কৃষক কেউ ভালো নেই। তাঁদের উপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে শাসকের নীতি। তাঁদের জন্য যেমন লড়ছে বামমপন্থীরা তেমনই মধ্যবিত্তকেও আমরা এই লড়ায়ে পাশে পেতে চাই। নারী-পুরুষের মধ্যে যে বৈষম্য আছে আমরা যেন সে কথাও ভুলে না যায়। বিশ্বর কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি একথাও বলেছেন, জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে মতাদর্শগত সংগ্রাম, তা প্রয়োগের সংগ্রামে রননীতি ও রনকৌশলকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা বামও দক্ষিণপন্থার বিচ্যুতি দেখেছি। রণকৌশল বাদ দিয়ে শুধু রণনীতি বামপন্থী সুবিধাবাদের জন্ম দেয়। মাক্সবাদ, লেনিনবাদ শুধু মুখস্থ করলে হয়না তা প্রয়োগ না হলে সত্য প্রতিষ্ঠা পায়না। এই টার জন্যই নিরন্তর লড়াই চালিয়ে যেতে হবে আমাদের। তিনি এদিন বলেছেন পরিস্থিতি কখনো এক যায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না, দিন বদলায়। কে ভেবেছিল শ্রীলঙ্কার ভোটে বামপন্থীদের এমন উত্থান হবে?
Surya Mishra
বাংলাদেশের অশান্তি এই রাজ্যে আমদানীর চেষ্টা করছে বিজেপি-আরএসএস: মিশ্র
×
Comments :0