PROBANDHA \ KHUDIRAM — TAPAN KUMAR BAIRAGAYA \ MUKTADHARA | 27 NOVEMBER 2024

প্রবন্ধ \ নিবেদিত প্রাণ ক্ষুদিরাম : তপন কুমার বৈরাগ্য \ মুক্তধারা \ ২৭ নভেম্বর ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

PROBANDHA  KHUDIRAM  TAPAN KUMAR BAIRAGAYA  MUKTADHARA  27 NOVEMBER 2024

প্রবন্ধ

নিবেদিত প্রাণ ক্ষুদিরাম
তপন কুমার বৈরাগ্য

মুক্তধারা

ক্ষুদিরামের দিদি ছিলেন অপরূপা দেবী। তাঁর স্বামী
ছিলেন অমৃতলাল। কর্মসূত্রে তাঁকে বিভিন্ন জায়গায়
বদলি হতে হতো।তিনি মেদিনীপুরে বদলি হয়ে এসেছেন।
ক্ষুদিরামকে ভর্তি করলেন মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে।
ক্ষুদিরাম তখন কিশোর।এই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন
সত্যেন্দ্রনাথ বসু। তিনি ছিলেন একজন স্বাধীনতা
সংগ্রামী। তিনি চেয়েছিলেন এই কিশোরদের নিয়ে
এক বিপ্লবী দল গঠন করতে।ক্ষুদিরাম স্কুলে ভর্তি হয়েই
তাঁর সাহচর্য পেয়ে যান। একদিন ক্ষুদিরাম ক্লাসের
সহপাঠীদের মুখ থেকে শুনলেন এক বিস্ময়কর মন্দিরের
কথা।যে মন্দিরটা ছিল বনদেবী।সেই দেবীর কাছে যে যা
মানত করেন তিনি তা পূরণ করেন।তবে মন্দিরটা এখান থেকে
অনেকদূরে।কংসাবতী নদী পেড়িয়ে একটা ঘন জঙ্গলের মধ্যে।
যে বনে হিংস্র জীবজন্তু ও বিষাক্ত সাপে পরিপূর্ণ।
দু-তিনদিন সত্যেন বোস ক্ষুদিরামকে ক্লাসে দেখতে পেলেন না।
সকলে জানেন সত্যেন বসুর সাথেই তিনি বেশি সময় কাটান।
সত্যেনবাবু ক্ষুদিরামের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানলেন ক্ষুদিরাম বাড়িতে যান নি।মহা চিন্তায় পড়লেন সত্যেন বসু।তাঁর কাছেই
বিপ্লবী দলের জন্য তাঁর বেশি সময় কাটে।সকলে তাঁর
নামেই দোষারপ করবেন।তিনি ছেলেদের কাছে খবর
নিয়ে জানতে পারলেন বনদেবীর মন্দিরের কথা।
তিনি অনেক কষ্টে সেই বনে এসে উপস্থিত হলেন।
দেখেন মন্দিরের চাতালে ক্ষুদিরাম ধর্না দিয়ে পড়ে আছেন।
দু'তিনদিন খাননি বলে শরীর খুব দুর্বল। সত্যেন বসু ক্ষুদিরামকে
জিজ্ঞেস করলেন--তুমি এখানে কি করছো?
ক্ষুদিরাম ক্ষীন কণ্ঠে জবাব দিলেন--এই দেবী খুব
জাগ্রত।যার যা রোগ হয় তিনি তা ভালো করে দেন।
স্যার জিজ্ঞেস করলেন--তোমার কি রোগ হয়েছে?যার
জন্য তুমি দেবতার উদ্দেশ্যে ধর্না দিয়ে এখানে পড়ে
আছো?
ব্যথিত কণ্ঠে ক্ষুদিরাম জবাব দিলেন--আমার অসুখের
জন্য আমি এখানে আসেনি।এসেছি ভারত মায়ের
দাসত্ব রোগের মুক্তির জন্য। বনদেবীকে বললাম - মা
আমার ভারত মাকে দাসত্ব রোগ থেকে মুক্তি দে।আমার
মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়ে দে।তাই আমি দু'দিন ধরে
উপোস করে এখানে ধর্না দিয়ে দিন রাত পড়েছিলাম।
এইটুকু ছেলের দেশপ্রেম দেখে সত্যেন বসু তাঁকে
বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন--দেখো তোমার নাম
চিরদিন ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ভারতের
প্রথম কিশোর শহিদ হিসাবে ক্ষুদিরামের নাম আজও
অমর হয়ে আছে।
উনিশ বছর বয়েসে ১১ই আগস্ট ১৯০৮খ্রিস্টাব্দে মুজাফফরপুর
জেলে সকাল ৬টায় ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয়।
ক্ষুদিরাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন ৩রা ডিসেম্বর ১৮৮৯খ্রিষ্টাব্দে।
তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন অবিভক্ত মেদেনীপুর জেলার
এক অখ্যাত গ্রাম হবিবপুরে। 
 

Comments :0

Login to leave a comment