বিজেপি এবং আরএসএস নাজি জার্মানি এবং হিটলারের থেকেই প্রেরণা নেয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই আমাদের দেশে বিভাজনের রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এই প্রয়াসের তীব্র নিন্দা করছি।
উত্তর প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডে কানওয়ারি বা কাঁওয়ার যাত্রার পথে দোকান ব্যবসায়ীদের পাঠানোর নির্দেশিকা ঘিরে এই মন্তব্য করলেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাত। শনিবারই এই নির্দেশিকা বাতিলের দাবি জানিয়েছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো।
দুই রাজ্যের বিজেপি সরকার এই নির্দেশিকা জারি করেছে ‘পরিচয় জানানোর’ যুক্তিতে। উত্তর প্রদেশের মুজফ্ফরনগরের পুলিশ দোকান ব্যবসায়ীদের নির্দেশিকা পাঠায়। একই পদ্ধতি অনুসরণ করে উত্তরাখণ্ড।
বিজেপি সরকারের এই পদক্ষেপের নিন্দায় সরব হয়েছে বিভিন্ন অংশ। তাদের বক্তব্য, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কানওয়ার যাত্রীরা রাস্তায় বহু দোকানে বসেন, খাবারও কিনে খান। বহু দোকানদার অ-হিন্দু। এই অংশের জীবিকার ওপর সরাসরি আক্রমণ চালাতে নেমেছে বিজেপি।
কারাত বলেন, ‘‘এমন চিহ্নিতকরণ সারা বিশ্ব দেখেছে জার্মানিতে নাজি শাসনের সময়ে। ইহুদিদের ঘর, দোকান চিহ্নিত করে দেওয়া হতো। তাদের জীবিকা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল এভাবে চিহ্নিত করে, বেছে নিয়ে সর্বনাশ করা হতো।’’
তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি এবং আরএসএস নাজি জার্মানি এবং হিটলারের থেকেই প্রেরণা নেয়। এই মতাদর্শ নিয়েই আমাদের দেশে বিভাজনের রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এই প্রয়াসের তীব্র নিন্দা করছি।’’
বিজেপি সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনায় সরব হতে হয়েছে জোট শরিক আরএলডি এবং জনতা দল (ইউ)’র মতো দলগুলিকে। পুলিশের নির্দেশিকায় প্রশ্ন তুলেছে শরিক দলগুলিও।
বিজেপি’র ব্যাখ্যা, বিশুদ্ধ নিরামিষ খাবার পাওয়া যায় কোথায় দর্শনার্থীদের তা জানানো দরকার। সে কারণে দোকানদার এবং তাদের কর্মচারীদের নাম পরিচয় জানাতে বলা হয়েছে। যাতে সাত্ত্বিক রীতি মেনে তৈরি খাবার খেতে পারেন কানোয়ার যাত্রীরা। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের দপ্তর থেকে এমন ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদী বহু অংশই বলছে, মুসলিম ব্যবসায়ীরাও দর্শনার্থীদের ধর্মবিশ্বাসের প্রতি সচেতন থেকেই খাবার বানান। নিরামিষ খাবার চাইলে ঠিক সেটিই দেন। পারস্পরিক আস্থা এবং ভরসা থাকে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে। এই সম্পর্ক বিষিয়ে দিতে তৎপর বিজেপি এবং সঙ্ঘ।
কারাত এই ব্যাখ্যারও কড়া সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিশুদ্ধতার মাপাকঠি কী হবে? আমাদের দেশে বিশুদ্ধ-অশুদ্ধ বলে আলাদা কোনও সংজ্ঞা তো নেই। কাল আপনি বর্ণবাদী জাতিবাদী প্রথা মেনে কাউকে বিশুদ্ধ বা অশুদ্ধ বলবেন?’’
পলিট ব্যুরো বলেছে, উত্তর প্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকারের এই পদক্ষেপ সংবিধান বিরোধী। সংবিধানে সব নাগরিককে সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। এই অধিকারের গোড়ায় আঘাত করছে এই পদক্ষেপ।
পলিট ব্যুরো বলেছে, বিজেপি সরকারের আশু লক্ষ্য হলো সাম্প্রদায়িক মেরকরণ। কিন্তু এ ধরনের পদক্ষেপে জাতভিত্তিক সংঘাত এবং জাতনির্ভর সামাজিক শোষণ দ্রুত বাড়িয়ে তুলতে পারে। ‘মনুস্মৃতি’ অনুসরণ করে এই দিকেই আমাদের সমাজকে পুনর্গঠিত করতে চাইছে বিজেপি। সংবিধানের মূল ধারণাকে অস্বীকার করছে। সব নাগরিকের জন্য স্বাধীনতা, সমানতা, ভ্রাতৃত্ব এবং ন্যায়ের অধিকারকে নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে সংবিধানে।
কারাত বলেন, ‘‘উত্তর প্রদেশ সরকার সংবিধানকে ধ্বংস করছে। সমাজে বিভাজন তৈরি করা এবং মুসলিমদের ঘিরে ভয় ছড়াতে এমন নির্দেশিকা জারি হয়েছে। একটি পুরো সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করে বিপন্ন করা, তাদের জীবিকার ওপর হামলা করা, তাদের অস্তিত্বের ওপর হামলা করা হচ্ছে।’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘বছরের পর বছর এই দর্শনার্থীরা এই রাস্তা দিয়ে যান। কখনও সমস্যা তো হয়নি। বিজেপি সরকার নতুন করে সমস্যা খাড়া করতে চাইছে। আসল উদ্দেশ্য সমাজকে বিভাজিত করা।’’
আদালতের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন কারাত। তিনি বলেন, ‘‘আদালত তো বহু বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দয়ের করে। এই ঘটনায় করছে না কেন সেটিও বিবেচনার বিষয়।’’
লোকসভা নির্বাচনে ধাক্কা খাওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর একের পর এক আক্রমণ চালাচ্ছে বিজেপি এবং আরএসএস। সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো এই মর্মে প্রতিবাদ জানিয়েছে আগেই। চলতি সপ্তাহেই উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে খ্রীস্টান ধর্মালম্বীদের অনুষ্ঠানে সঙ্ঘ পরিবারের অনুগামীরা আক্রমণ চালিয়েছে। তার প্রতিবাদে বিক্ষোভও দেখিয়েছে সিপিআই(এম)।
Comments :0