Sitharaman's Husband

অর্থ মন্ত্রীর স্বামীর মন্তব্যে বিদ্ধ মোদী

জাতীয়

এত দিন বিরোধীরা বলেছেন। এবার স্বয়ং দেশের অর্থ মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের স্বামী ড. পারাকাল প্রভাকর নির্বাচনী বন্ডকে বিশ্বের সবথেকে বড় আর্থিক জালিয়াতি বলে চিহ্নিত করলেন। মোদী সরকারের তৈরি করা নির্বাচনী বন্ড সম্পর্কে মোদী সরকারেরই অর্থ মন্ত্রীর স্বামীর এই মন্তব্য নিশ্চিতভাবেই মারাত্মক অস্বস্তিকর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর বাহিনীর পক্ষে। 
বুধবার সংবাদ মাধ্যমের কাছে নির্বাচনী বন্ড নিয়ে এই মন্তব্য করেছেন অর্থনীতিবিদ ড. পারাকাল প্রভাকর। তিনি বলেছেন, শুধু ভারতবর্ষ নয়, নির্বাচনী বন্ডের নামে ‘আইনসিদ্ধ তোলাবাজি’ গোটা বিশ্বের সব থেকে বড় আর্থিক জালিয়াতি। এই জালিয়াতির চক্র জনগণের কাছে এখন পরিষ্কার এবং এই পুরো বিষয়টিই বিজেপি’র নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় চরম বিপাকে রয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল। এই সংগঠিত অর্থ তছরুপের খুঁটিনাটি জনসমক্ষে চলে আসার জেরেই এবারের নির্বাচন বিজেপি ও সাধারণ মানুষের মধ্যে দেশ বাঁচানোর লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। এই লড়াইয়ে চরম শাস্তি পেতে চলেছে বিজেপি।
অন্ধ্র প্রদেশের রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র হিসেবে একসময়ে কাজ করেছেন এই প্রাক্তন আমলা। দেশের অর্থ মন্ত্রীর স্বামীর মুখে বিজেপি-আরএসএস’র এমন তুলোধনায় রীতিমতো অস্বস্তিতে বিজেপি। ২০১৭ সালে দেশে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার নাম করে ও রাজনৈতিক দলগুলির তহবিল সংগ্রহে ‘দুর্নীতি বন্ধ’ করতে এই নির্বাচনী বন্ড প্রকল্প চালু করেছিল মোদী সরকার। এর জন্য আর্থিক বিষ‌য় সংক্রান্ত একাধিক আইন সংশোধন করে মোদী সরকার। অচিরেই অভিযোগ উঠতে শুরু করে যে, এই প্রকল্প আদতে টাকা নয়ছয়ে যুক্ত কোম্পানিগুলির কালো টাকা সাদা করার এক অসাধারণ মাধ্যম। এর মধ্যেই সিপিআই(এম), অ্যাসোসিয়েশন অব ডেমোক্রেটিক রাইটস (এডিআর) নামে একটি সংগঠন এবং কংগ্রেসের জয়া ঠাকুরের পক্ষ থেকে এই বন্ডের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় সুপ্রিম কোর্টে। গত ১৫ ফেব্রুয়া‍‌রি এক ঐতিহাসিক রায়ে এই বন্ডকে অসাংবিধানিক বলে বাতিল করে দেয় প্রধান বিচারপতির ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের ৫ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ। সেই সঙ্গেই শীর্ষ আদালত স্টেট ব্যাঙ্ককে বন্ড সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য নির্বাচন কমিশনের হাতে তুলে দেওয়ার এবং তারপর কমিশনকে তার ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করার নির্দেশ দেয়। একপ্রস্থ টালবাহানার পরে স্টেট ব্যাঙ্ক বন্ডের ইউনিক কোড নম্বর সহ সবই তুলে দেয় কমিশনের হাতে এবং কমিশনও তা প্রকাশ করে দেয় নিজস্ব ওয়েবসাইটে। তারপরেই কীভাবে বন্ডকে ব্যবহার করে বিজেপি দলীয় তহবিল ভরতে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে কার্যত তোলাবাজি চালিয়েছে, একের পর এক তার তথ্যপ্রমাণ বেরিয়ে এসেছে। 
ধরা পড়ে গিয়েছে যে, কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কখনও ইডি বা সিবিআই বা আয়কর তল্লাশির মুখে ফেলে বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা বিজেপি’র তহবিলে ভরার ব্যবস্থা করেছেন মোদী-শাহ, ঠিক হুমকি দিয়ে তোলা আদায়ের মতো। কখনও বিজেপি’র তহবিলে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে ব্যবসায়ীদের হাতে তাঁরা তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন মোটা অঙ্কের সরকারি কাজের বরাত, যাকে বিরোধী নেতৃবৃন্দ ‘চান্দা দো, ধান্দা লো’ প্রকল্প বলে কটাক্ষ করেছেন। কখনও বি‍‌জেপি’র তহবিলে তোলার বিনিময়ে নিম্ন মানের ওষুধকে বাজারে বিক্রি করতে বা ওষুধের দাম ইচ্ছে মতো বাড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে মোদী-শাহ জুটির তরফে। ইতিমধ্যেই এগুলির তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি ম‍‌ল্লিকার্জুন খাড়গে, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সহ বিরোধী নেতৃবৃন্দ নির্বাচনী বন্ডকে দেশের ইতিহাসে বৃহত্তম রাজনৈতিক দুর্নীতি বলে অভিহিত করেছেন। এবার হুবহু সেই একই কথা শোনা গেল মোদীর আস্থাভাজন অর্থ মন্ত্রীর স্বামীর মুখেও, যিনিও বিজেপি’র সঙ্গে থাকা ব্যক্তিই। এমনকী এই তোলাবাজির অপরাধের জন্য এবারের নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে ভুগতে হবে এবং বিজেপি-কে দেশের মানুষ শাস্তি দিতে চলেছেন বলেও তিনি সোজাসাপটা মন্তব্য করেছেন।

Comments :0

Login to leave a comment