দ্বিতীয় দিনের মাথায় এসে হয়তো কিছু সময়ের জন্য থমকে গেল ইজারায়েল-হামাস বন্দি বিনিময়। ‘সাময়িক সংঘর্ষ বিরতি’র মধ্যে ইজরায়েল বারে বারে শর্ত লঙ্ঘন করলেও শনিবার দ্বিতীয় দফায় ইজরায়েল-হামাস দু’তরফে বন্দি বিনিময় হওয়ার কথা। শুক্রবার প্রথম দফায় বন্দি মুক্তির পরে এদিনও হামাস ১৪জন ইজরায়েলী বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার কথা। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী দপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবার রাতেই তারা দ্বিতীয় দিনে যাদের মুক্তি পাওয়ার কথা, তাঁদের তালিকা পেয়ে গেছে। যাদের এদিন ছাড়া হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই শিশু। ইজরায়েল জানিয়েছে, ওই ১৪জন ফিরলে তারাও ইজরায়েলের জেলে বন্দি ৪২জনকে ছেড়ে দেবে।
তবে ভারতীয় সময় রাত দশটায় সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বন্দি মুক্তির প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হচ্ছে। কারণ, গাজায় ত্রাণ-সহায়তা সরবরাহ আটকে দিচ্ছে ইজারায়েলী বাহিনী। তা চালু না করা পর্যন্ত হামাসের তরফে ইজরায়েলীদের ছাড়ার ব্যাপারটা থমকে গেছে। শুক্রবারও রাফা সীমান্ত দিয়ে কিছু সহায়তা সামগ্রী নিয়ে ট্রাক ঢুকেছে। জ্বালানি ও রান্নার গ্যাস নিয়েও কিছু ট্রাক ঢুকেছে। কিন্তু শনিবার সেই সরবরাহ ইজরায়েল আটকে রেখেছে বলেই খবর।
এই খবরের খানিক আগেই অবশ্য হামাস সূত্র উল্লেখ করে সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছিল, দ্বিতীয় দফায় বন্দি মুক্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। হামাসের ওই সূত্রকে উদ্ধৃত করা জানানো হয়েছিল, ‘খান ইউনিসে রেড ক্রসের হাতে ইজরায়েলের বন্দিদের দ্বিতীয় দলটিকে তুলে দেওয়া শুরু করেছে এদিন আল-কাসিম ব্রিগেড। ওই দলটিতে ১৪ জন রয়েছেন।’ কিন্তু তার খানিক পরই এল বন্দি বিনিময় থমকে থাকার খবর।
সংঘাত শুরুর সাত সপ্তাহ পরে হামাস-ইজরায়েলের মধ্যে চারদিনের সংঘর্ষ বিরতির বোঝাপড়া অনুযায়ী একের বদলে তিন সূত্রে এই বন্দি মুক্তি হচ্ছে। মানে, একজন ইজরায়েলীকে ছাড়ার বিনিময়ে ইজরায়েলী তিনজন প্যালেস্তিনীয় বন্দিকে ছাড়ছে। সেই হিসাব মতো, শনিবার ১৪জনকে ইজরায়েলীর বিনিময়ে ৪২জন প্যালেস্তিনীয় বন্দিকে ছাড়া হবে বলে জানিয়েছে ইজরায়েলের প্রিজন সার্ভিস।
ঠিক রয়েছে, হামাস ছাড়বে ৫০ জনকে, ইজরায়েল ১৫০ জনকে। তারই প্রথম দফায় শুক্রবার প্রথম দফায় বন্দি বিনিময় হয়েছে। সেই হিসাব মতোই শুক্রবার সন্ধ্যায় ১৩জন ইজরায়েলীকে ছেড়েছিল হামাস। বাস্তবে হামাস মুক্তি দিয়েছিল মোট ২৪জনকে। ১৩জন ইজরায়েলী নাগরিকের ছাড়া হয়েছিল ১০জন থাইল্যান্ডের ও ১ জন ফিলিপাইন্সের বন্দিকেও। এই থাই ও ফিলিপিনোরা ইজরায়েলে শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন। সমঝোতার আরও একটি শর্ত মেনেই হামাস এই বিদেশি নাগরিকদের মুক্তি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক রেড ক্রসের মাধ্যমে এই বন্দি বিনিময় হচ্ছে। গাজা থেকে মুক্তি পেয়ে এই ২৪জন রাফা সীমান্ত দিয়ে মিশরে পৌঁছে যান। সেখানেই ইজরায়েলের হাতে এঁদের তুলে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ইজরায়েলের ভূখণ্ডে পৌঁছে গিয়েছেন। মুক্ত ২৪জনই সুস্থ ও অক্ষত রয়েছে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন ইজরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার অধিকর্তারা।
কাতারের মধ্যস্থতাতেই চার দিনের সংঘর্ষবিরতি ও বন্দি বিনিময় চলছে। হামাস ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের জনগণের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছে, বন্দির ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে পৌঁছালে তাঁদের স্বাগত জানাতে বিরাট সমাবেশ করতে। শুধু হামাসই নয়, সমস্ত প্যালেস্তিনীয় প্রতিরোধ গোষ্ঠী সম্মিলিতভাবেই ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে সমবেত হবার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু ইজরায়েলী সেনাদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ বেধে যাওয়ার আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে। ঘরের প্রিয় মানুষটিকে ফিরে পাওয়ার আশায় খানিকটা খুশি রয়েছেন প্যালেস্তিনীয়রা। সঙ্গে উৎকণ্ঠা, যদি মুক্ত করার তালিকায় নিজের ঘরের মানুষটির জায়গা না হয়, তা নিয়ে।
এদিনই আবার সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, ইজরায়েল এখন মুক্তি দেওয়া হতে পারে এমন ৩০০ প্যালেস্তিনীয় বন্দির একটা তালিকা প্রকাশ করেছে। একের বিনিময়ে তিন তত্ত্ব মানলে ৩০০ প্যালেস্তিনীয়কে মুক্ত করাতে গেলে হামাসকে ১০০ ইজরায়েলী বন্দিকে ছাড়তে হবে। কাতারের মধ্যস্থতায় করা সমঝোতা অনুযায়ী ৫০জনের বেশির অতিরিক্ত বন্দি ছাড়তে হলে প্রতিদিন ১০ জন পিছু সংঘর্ষ বিরতি চালানোয় সম্মত হয়েছে ইজরায়েল। তবে শনিবার পর্যন্ত সম্মত ৫০’র মধ্যে ২৬জনকে ছেড়ে দিয়েছে হামাস। বাকি ২৪জনকে রবিবার ও সোমবার ১২জনের ব্যাচে হামাস ছাড়লে, তার বিনিময়ে ইজরায়েলকে ৩৬জনের ব্যাচে ফেরাতে হবে ৭২ প্যালেস্তিনীয়কে।
এদিকে সংঘর্ষবিরতি চলাকালীন কোনও সামরিক তৎপরতা হবে না বলেই সমঝোতা থাকলেও ইজরায়েল সংঘর্ষবিরতির সব শর্ত মানেনি। শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে সংঘর্ষবিরতি শুরু হলে নতুন করে বিমান হানা হয়নি। তবে উত্তর গাজা থেকে ঘরছাড়া হয়ে দক্ষিণে আশ্রয় নেওয়া মানুষরা আর উত্তরে ফিরতে পারবেন না বলে ইজরায়েলী সেনারা বিমান থেকে লিফলেট ফেলে হুমকি দিয়ে যায়। তাসত্ত্বেও মানুষ উত্তরে ফেলে আসা ঘরের দিকে যেতে গেলে ইজরায়েলী সেনারা গুলি চালায়। তাতে অন্তত ২জন নিহত ও ১১ জন জখম হয়েছেন। সংবাদসংস্থা এপি জানিয়েছে, এই নিহতদের দেহ তারা দেখেছে।
Israel Palestine War
দ্বিতীয় দফায় বন্দি মুক্তি শুরুর মুখেই থমকালো
×
Comments :0