একশো দিনের কাজের প্রকল্প আরও কম গুরুত্ব পেতে চলেছে কেন্দ্রীয় বাজেটে, এমনই আশঙ্কা রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের আধিকারিকদের। গত দু’বছর রাজ্যের জন্য রেগার কোনও টাকা বরাদ্দ করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। মণিপুর, গোয়ার মতো রাজ্য এবং আন্দামান নিকোবরের মতো কয়েকটি কেন্দ্রশাসিত এলাকাতেও গত আর্থিক বছরে রেগার টাকা দেওয়া হয়নি। কিন্তু রাজ্যে একশো দিনের টাকা না পাঠানোর পিছনে কেন্দ্রীয় সরকারের অভিযোগ প্রধানত তৃণমূলের দুর্নীতি। আগামী বছরে রাজ্য একশো দিনের প্রকল্পে কোনও টাকা পাবে কিনা, তা এখনও অনিশ্চিত। আগামী বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সেখানে বকেয়া টাকা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
কিন্তু সামগ্রিকভাবে রেগা প্রকল্পকে আদৌ দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির পক্ষে উপযোগী বলে মনে করছে না কেন্দ্রীয় সরকার। প্রথম ইউপিএ সরকারের সময়ে এই প্রকল্প চালুর প্রধান লক্ষ্যই ছিল গ্রামে কাজের সুযোগ সৃষ্টি, কিছুটা দারিদ্র মোচন। নরেন্দ্র মোদী লাগাতার এই প্রকল্পে টাকা কমিয়েছে। এবার প্রকল্পের লক্ষ্যপূরণ নিয়ে তাঁর সরকার সন্দেহ প্রকাশ করেছে। সোমবার প্রকাশিত হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সমীক্ষা, ২০২৩-২৪। সেখানে রেগা প্রকল্পের একটি মূল্যায়ন রয়েছে। রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন,‘‘বেশ কিছু রিপোর্ট, সমীক্ষার উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় সরকার বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে, পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলির জন্য রেগা কোনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে না। ইঙ্গিত অনেকটাই স্পষ্ট রেগায় বরাদ্দ কমতে পারে বাজেটে।’’ তিনি আরও জানান,‘‘কেন্দ্রীয় সরকার মনে করছে রেগায় কাজের চাহিদা গ্রামীণ দারিদ্র নিরূপণের প্রকৃত মাপকাঠি নয়। বরং তা অনেকটাই রাজ্যগুলির প্রশাসনিক দক্ষতা এবং ন্যূনতম মজুরির উপর নির্ভরশীল।’’
কেরালা, তামিলনাডু, উত্তর প্রদেশ, বিহারের রাজ্য এই প্রশ্নে কেন্দ্রীয় সরকারের বিবেচনায় থেকেছে। পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি তাদের বিবেচনাতেই নেই।
কেন্দ্রীয় সরকারের সেই মূল্যায়ণে দাবি করা হয়েছে যে, দেশের দরিদ্র মানুষের ০.১শতাংশের বসবাস কেরালায়। তামিলনাডুতে বাস করেন দেশের দরিদ্র মানুষের ১ শতাংশ। অথচ এই দুটি রাজ্য মিলে রেগায় বরাদ্দ টাকার ১৯শতাংশ খরচ করেছে। এই দুই রাজ্য মিলে ৫১কোটি শ্রমদিবস সৃষ্টি করেছে ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে। অন্যদিকে, দেশের দরিদ্র মানুষের ৪৫শতাংশ বাস করেন উত্তর প্রদেশ এবং বিহারে। কিন্তু এই দুটি রাজ্য মিলে মাত্র ৫৩কোটি শ্রমদিবস সৃষ্টি করেছে। রেগার জন্য বরাদ্দ মোট টাকার মাত্র ১৭শতাংশ এই দুই রাজ্যে খরচ হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এর থেকে সিদ্ধান্তে এসেছে যে, দারিদ্রের মানদন্ডর সঙ্গে রেগার টাকা খরচ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনও আনুপাতিক সম্পর্ক নেই। শুধু তাই নয়, মোদী সরকারের অর্থ মন্ত্রক মনে করছে যে, রাজ্যগুলির যে গ্রামীণ জেলাগুলিতে দারিদ্র বেশি সেখানে রেগার টাকা বেশি খরচ করেছে, এমনও কোনও উদাহরণ নেই।
তবে রেগার টাকা খরচের সঙ্গে রাজ্যগুলির ন্যূনতম মজুরির সম্পর্কটিকেও এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে একটি বাধা বলে কেন্দ্রীয় সরকার মনে করছে। রেগার মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির ন্যূনতম মজুরি একটি মানদন্ড হয়ে থাকে। কেরালা, হরিয়ানা, তামিলনাডু, কর্ণাটকের মতো রাজ্যে ন্যূনতম মজুরি বেশি। ফলে সেখানে রেগার দৈনিক মজুরিও বেশি হয়। ফলে সেই রাজ্যগুলিতে রেগার টাকা খরচও বেশি হয়।
তবে স্থিতিশীল উন্নয়নের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ এগোচ্ছে বলে মোদী সরকার জানিয়েছে। এই ক্ষেত্রে রাজ্যে যতই শুভেন্দু অধিকারী, সুকান্ত মজুমদাররা তৃণমূলের বিরুদ্ধে চিৎকার করুন, কেন্দ্রে তাঁদের সরকার জানাচ্ছে তৃণমূলের দুর্নীতি, শিক্ষায় দুর্দশা, শিল্পহীনতা, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যর্থতা সত্বেও পশ্চিমবঙ্গ স্থিতিশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে (এসডিজি)তে দেশের ‘ফ্রন্ট রানার স্টেট।’ দেশের ১০টি রাজ্যকে এই তকমা দিয়েছে মোদী সরকার। সেই রাজ্যগুলি হলো অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, মণিপুর, ওডিশা, রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, দাদরা নগর হাভেলি দমন ও দিউ। কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, নীতি আয়োগের সমীক্ষার ভিত্তিতে ‘স্থিতিশীল উন্নয়ন’র এই তালিকা তৈরি হয়েছে মূলত আর্থিক বিকাশের গতি, শিক্ষা, স্বনির্ভরতায় অগ্রগতির বিভিন্ন আঙ্গিককে বিচার করে।
প্রশ্ন স্বাভাবিক, যাদের সরকারই মনে করছে রাজ্য তৃণমূলের নেতৃত্বে ছুটছে, সেই বিজেপি রাজ্যে কুস্তি করছে কেন?
Comments :0