মঙ্গলবার নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ১২৮তম জন্মদিন ‘দেশপ্রেম দিবস’ হিসাবে রাজ্যের সর্বত্র পালন করবে বামফ্রন্ট। কলকাতায় মিছিল ছাড়াও জেলায় জেলায় নেতাজীর জন্মদিবসে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সংবিধান রক্ষায় সোচ্চার হবেন বামপন্থীরা। বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, রাজ্যের সর্বত্রই দেশপ্রেম দিবস পালন করা হবে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে। কলকাতায় সকাল ১১টায় মিছিল শুরু হবে ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে থেকে, মিছিল শেষ হবে সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে। সেখানে নেতাজী মূর্তিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন সহ অনুষ্ঠান হবে।
এদিন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সাংবাদিকদের বলেছেন, আমরা নেতাজীর জন্মদিবসকে দেশপ্রেম দিবস ঘোষণার দাবি জানালেও আরএসএস এবং কেন্দ্রের সরকার ২৩ জানুয়ারির থেকে ২২ জানুয়ারিকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে দেখাতে চাইছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা ২২ জানুয়ারির বদলে ২৩ জানুয়ারি ফেলা হয়েছে। যারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামে অংশ নেয়নি তারা স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, আন্দোলন, ত্যাগ সব ইতিহাস মুছে দিতে চাইছে ধর্মীয় উন্মাদনায় ‘নতুন যুগ’ দেখিয়ে।
কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলায় ব্রিটিশ সরকারের হাতে শহীদ রামপ্রসাদ বিসমিল, রাজেন্দ্র লাহিড়ী, ঠাকুর রৌশন সিং, আসফাকউল্লা খানের নাম উল্লেখ করে সেলিম বলেন, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে একযোগে লড়াইয়ের এই ঐতিহ্যই বামপন্থীরা বহন করছে। নেতাজীর জন্মদিবসেও সেই কারণে রাজ্যজুড়ে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে। রক্তদান, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, প্রভাত ফেরি ইত্যাদি নানা অনুষ্ঠানে দেশপ্রেম দিবস পালন করা হবে।
সুভাষচন্দ্র বসুর লেখা, তাঁর ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রাম, আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন এসবেই জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবার সমানাধিকারের ভিত্তিতে ধর্মনিরপেক্ষ ভারত গঠনের মতাদর্শ স্পষ্ট। আরএসএস এবং হিন্দু মহাসভার হিন্দুত্ববাদী ধারণা সহ সব সাম্প্রদায়িক ভাবনার বিরুদ্ধে তিনি কঠোর ছিলেন। অথচ কেন্দ্রের বর্তমান শাসক দল বিজেপি সহ সঙ্ঘ পরিবারের পক্ষ থেকে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও সাভারকরের মতো উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের সঙ্গে সুভাষচন্দ্র বসুকে একাসনে বসানোর চেষ্টা চলছে। ইতিহাস বলছে, শ্যামাপ্রসাদের জনসঙ্ঘ-পূর্ববর্তী হিন্দু মহাসভার মিটিং ভেঙে দিয়েছিল সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বাধীন ফরওয়ার্ড ব্লকের বাহিনী। সুভাষচন্দ্র বসুর সভাপতিত্বেই এআইসিসি কংগ্রেস এবং হিন্দু মহাসভার দ্বৈত সদস্যপদ নিষিদ্ধ করেছিল। মুসলিম লিগের জন্যও সেই একই আইন প্রয়োগ করা হয়েছিল। ১৯৪০ সালের ৪মে ফরওয়ার্ড ব্লকের পত্রিকায় ‘কংগ্রেস এবং সাম্প্রদায়িক সংগঠন’ শিরোনামে সুভাষচন্দ্র বসু সম্পাদকীয়তে লেখেন, “হিন্দু মহাসভা এবং মুসলিম লিগের মতো সাম্প্রদায়িক সংগঠনের কোনও সদস্য কংগ্রেসের কোনও নির্বাচনী কমিটির সদস্য হতে পারবেন না।”
এই প্রেক্ষিতেই আজকের দিনে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা যখন আক্রান্ত, তখন সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিবসকে দেশপ্রেম দিবস হিসাবে পালনের মধ্য দিয়ে দেশরক্ষার সংগ্রামকে শক্তিশালী করতে চাইছেন বামপন্থীরা।
Comments :0