RAT MINERS UTTARKASHI

‘র‌্যাট মাইনার্স’-দের হাতের কাজে সুড়ঙ্গের শেষে আলো

জাতীয়

 

চূড়ান্ত পর্বের ‘অপারেশন’ সফল করেছেন তাঁরাই। দিল্লি এবং ঝাঁসি থেকে নিয়ে আসা সরু সুড়ঙ্গ খুঁড়তে পারদর্শী শ্রমিকরাই সুড়ঙ্গের শেষে দেখিয়েছেন আলো। মঙ্গলবার রাত আটটা নাগাদ ১৭ দিন আটকে থাকা ৪১ শ্রমিককে বের করা গিয়েছে তাঁদেরই দক্ষতায়।
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা প্রতিষ্ঠান এনডিএমএ’র সদস্য এই ‘র‌্যাট মাইনার’-দের কৃতিত্ব স্বীকার করেছেন সোচ্চারে। তিনি বলেছেন, ‘‘পাইপের মধ্যে শুয়ে হাতে যন্ত্র নিয়ে ধস কাটার কঠিন কাজ করেছেন এঁরা। মাত্র চব্বিশ ঘন্টায় প্রায় ১০ মিটার বা ৩৩ ফুটের বেশি মাটি খুঁড়েছেন এভাবেই।’’
উদ্ধারকাজ শুরু হওয়ার পর যাবতীয় সাফল্যের একাধিক দাবিদার মিলে গিয়েছে প্রত্যাশামতোই। উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি বা কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী ভিকে সিং থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতীন গড়করির ভিডিও বার্তা ভেসে গিয়েছে সংবাদমাধ্যমে। কেউ কেউ দেখিয়েছেন শেষবেলায় একদল জড়ো হয়ে স্লোগানই তুলছে, ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়!’
১২ নভেম্বর দিওয়ালির দিন ভোরে উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা টানেলের ভেতরে নামে ধস। সুড়ঙ্গ মুখ থেকে প্রায় ২০০ মিটার ভেতরে কংক্রিটের চাঙড়, মাটির স্তূপে আটকে পড়েন ৪১ শ্রমিক। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ৩ শ্রমিকও রয়েছেন। প্রায় ৬০ মিটার পুরু ধস কেটে উদ্ধারের কাজে পদে পদে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে গত ১৭ দিন।
ভারী যন্ত্র ব্যবহার করলে সুড়ঙ্গে ঝাঁকুনিতে নামতে পারে ধস। পরপর বিকল হয়েছে একাধিক যন্ত্র। বিশেষ করে গত শুক্রবার আমেরিকা অগার মেশিন বিকল হয়ে ভেঙে পড়ে সুড়ঙ্গের ভেতর। ততক্ষণে যদিও প্রায় ৪৮ মিটার পাইপ বসানো হয়ে গিয়েছে। এই পাইপের ব্যাস ৭০০ মিলিমিটারের কিছু বেশি। তার মধ্যে চাকা লাগানো স্ট্রেচার পাঠিয়ে একে একে বের করে আনা হয়েছে শ্রমিকদের। কিন্তু শেষ ১০-১২ মিটার হাতে খুঁড়তে হয়েছে এই সরু পাইপের মধ্যে। 
কয়লা খনিতে ‘র্যা ট মাইনিং’ নিষিদ্ধ হয় ২০১৪’তে, জাতীয় পরিবেশ ট্রাইবুনালের রায়ে। বেআইনি খননে এই পদ্ধতি ব্যবহার হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়, ঘটেছে একাধিক প্রাণঘাতী বিপর্যয়। ভারী যন্ত্র ব্যবহার বা করে ছোট ব্যাসের সুড়ঙ্গ হাতে কাটার পদ্ধতির সঙ্গে ইঁদুরের গর্ত খোঁড়ার মিল রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা তাই বলেন ‘র‌্যাট মাইনিং’। তবে সরু সুড়ঙ্গ খননে পারদর্শীদের অন্য কাজে ব্যবহার করা হয়। দিল্লি ও ঝাঁসি থেকে উড়িয়ে আনা হয়েছিল তাঁদেরই ১১২ জনকে। 
আটকে থাকা শ্রমিকদের বের করা শুরু হওয়ায় টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরায় উচ্ছ্বাস ধরা পড়েছে এই উদ্ধারকারীদের। উচ্ছ্বাস ছিল গত ১৭ দিন ধস কাটার কাজে অক্লান্ত বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মী, শ্রমিক, প্রযুক্তিবিদদের মধ্যেও। হিমালয়ের অনিশ্চিত ভূপ্রকৃতিতে বারণ সত্ত্বেও চারধামের মতো প্রকল্প করার মাশুল দিতে গিয়েছেন তাঁরা। একের পর এক নতুন পরীক্ষায় বসতে হয়েছে তাঁদেরই। ‘মুমকিন’ বা উদ্ধার সম্ভব হয়েছে তাঁদেরই জন্য।  
 

Comments :0

Login to leave a comment