ভাস্কর দাশগুপ্ত- পুরুলিয়া
শাসকের বুকে কাঁপন ধরিয়েই বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া জেলা জুড়ে শুরু হল ডিওয়াইএফআই’র ইনসাফ যাত্রা। স্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়েছে জনপদ। পথের ক্লান্তি ভুলে পথকে সঙ্গী করে স্লোগানে ভেসেছে শহর থেকে গ্রাম। রাজপথের ধুলি গোটা শরীরে মেখে ইনসাফ যাত্রায় আওয়াজ উঠেছে রঘুনাথপুর মহকুমায় কোথায় গেল শিল্প, কোথায় গেল ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব, কেন এ জেলার বেকার যুবকদের পরিযায়ী শ্রমিকের তকমা নিয়ে ভিন রাজ্যে বসবাস করতে হবে। যারা স্বপ্ন দেখিয়েছিল স্বপ্নচুরির দায় তাদেরকে দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাতে ইনসাফ যাত্রা পশ্চিম বর্ধমান থেকে দামোদর নদীর উপর থাকা সুভাষ সেতু অতিক্রম করে পুরুলিয়ার নিতুরিয়াতে এসে পৌঁছেছিল। সেখানে বিশ্রামের পর এদিন সকালে নিতুরিয়াতে সরবড়ি থেকে শুরু হয় পদযাত্রা।
গত ১২ বছরের বঞ্চনা বুকে নিয়ে রঘুনাথপুর মহকুমার মানুষ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে ইনসাফ যাত্রার পদযাত্রীদের অভিবাদন জানিয়েছেন। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে শিল্পের জন্য যারা জমি দিয়েছিলেন তাদের পরিবারের ছেলেরা এখন পরিযায়ী শ্রমিক। সেই পরিযায়ী শ্রমিকের বাবারাও রাস্তার দু'ধারে দাঁড়িয়ে স্লোগান তুলেছেন কেন হবে না রঘুনাথপুরে শিল্প। রঘুনাথপুরকে ঘিরে বিশাল শিল্পাঞ্চলের সম্ভাবনা যার হাত দিয়ে তৈরি হয়েছিল সেই বাসুদেব আচারিয়াকে স্মরণ করে এদিন পদযাত্রা শুরু হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্য রাখেন ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সম্পাদিকা মীনাক্ষী মুখার্জি সহ জামির আলি মোল্লা প্রমূখ। সেখান থেকে হাড়মাড্ডি, গোবাগ হয়ে রঘুনাথপুর শহরে যখন মিছিলে এসে পৌঁছায় তখন কার্যত জনজোয়ার। রঘুনাথপুর শহরে ঢোকার মুখে ইনসাফ যাত্রার পদযাত্রীদের অভ্যর্থনা সমিতির পক্ষ থেকে বরণ করে নেওয়ার পাশাপাশি তাদের অভিবাদন জানায় কৃষক সভা, সিআইটিইউ, পেনশনার্স সমিতি, বীমা কর্মী সমিতি, এবিটিএ সংগঠনের পক্ষ থেকে। ছিলেন গণআন্দোলনের নেতা কাশীনাথ ব্যানার্জি। এই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে জায়গায় জায়গায় থমকে দাঁড়িয়েছে পদযাত্রীরা। মানুষ ছুটে এসে ফুলের মালা গলায় পড়িয়েছেন, পুষ্প বৃষ্টি করেছেন। ছোট ছোট মেয়েরা রঙিন শাড়ি পড়ে অভিবাদন জানিয়েছেন পদযাত্রীদের। শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষরাও ইনসাফ যাত্রায় শামিল হয়েছেন। রঘুনাথপুর বাসস্ট্যান্ডে সভায় পদযাত্রীদের মঞ্চে উঠে এসে সম্বর্ধনা জানান সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধা মঞ্জু নাগ। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, গত দশটা বছরে এই দেশকে বিক্রি করে দিয়েছে শাসক দল। আবার রাজ্যের শাসক দল গরিব মানুষের টাকা লুট করেছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন কেন রঘুনাথপুরে শিল্প হয় না, কেন কয়লা খনি চালু হয় না। এই কারখানা হলে এই অঞ্চলের বেকার ছেলেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে, বাবা মাকে ছেড়ে দূর দেশে পাড়ি দিতে হতো না। মদ খেয়ে কেউ মারা গেলে দু লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায় কিন্তু এই জেলার শ্রমিকদের কথা রাজ্যের সরকার ভাবেনা। তিনি বলেন পাহাড় আমাদের সম্পত্তি। পাহাড় মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখে। কিন্তু রাজ্যের শাসক দল সেই পাহাড়কেও বিক্রি করে দিচ্ছে। হাঁটছি পুরুলিয়ার ভবিষ্যৎ পাল্টাবার জন্য।
রঘুনাথপুর শহর থেকে ইনসাফ যাত্রা আনারা, ঝাপড়া মোড়, কুস্তাউর হয়ে বোঙ্গাবাড়িতে যখন এসে পৌঁছয় সেখানে রাস্তার দু'ধারে কয়েক হাজার মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তাদের অপেক্ষার সময় বেশ কয়েক ঘন্টা পেরিয়ে গেছে তবুও তাদের মধ্যে কারুর কোনো বিরক্তি নেই। পুরুলিয়া শহরে ঢোকার মুখে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পদযাত্রীদের বরণ করে নেওয়া হয়।
Comments :0