Doctors Mass Resignation

জুনিয়রদের সমর্থনে গণইস্তফা উত্তরবঙ্গের সিনিয়রদের

রাজ্য জেলা

আমরণ অনশনে শামিল জুনিয়র ডাক্তার

অনিন্দিতা দত্ত (শিলিগুড়ি) - দীপশুভ্র সান্যাল (জলপাইগুড়ি)

ন্যায়বিচারের দাবিতে ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তার আমরণ অনশনে শামিল। তাঁদের দাবির সমর্থনে গতকাল আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৫০ জন সিনিয়র ডাক্তার একসঙ্গে ইস্তফা দিয়েছিলেন। বুধবার গণইস্তফার পথে হাটলেন‌ জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতাল ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের চিকিৎসকরা। উৎসবের দিনেও শিলিগুড়ি ও জলপাড়গুড়ি শহরে প্রতিবাদ জারি রয়েছে। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অধ্যাপক চিকিৎসক ও সিনিয়ার চিকিৎসকরা গণইস্তফা দিলেন। ষষ্ঠীর সকালে থেকে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস ও জলপাইগুড়ি নাগরিক সংসদের যৌথ উদ্যোগে, ‘অভয়া’র নৃশংস ধর্ষণ ও হত্যা কান্ডে দোষীদের গেপ্তার ও বিচারের দাবিতে এবং সাম্প্রতিক ডাক্তার দের ১০ দফা দাবিতে অনশন আন্দোলনের সমর্থনে ১২ ঘন্টার প্রতীকী অনশন শুরু হয়।  অনশনে পাঁচ জন চিকিৎসক ও পাঁচ জন নাগরিক অংশগ্রহণ করেন। আরজি করের দেখানো পথকে পাথেয় করেই বুধবার উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অনশনকারী জুনিয়ার চিকিৎসকদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে গণইস্তফায় একের পর এক ৪২জন অধ্যাপক চিকিৎসক ও সিনিয়ার চিকিৎসকেরা স্বাক্ষর করেছেন। গণ ইস্তফার বার্তা দিয়ে প্রতীকি পদত্যাগপত্র জমা করা হয়েছে। ইস্তফার সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
এদিন বিকেলে গণ ইস্তফা দেওয়া শুরু হয়েছে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ইতিমধ্যেই জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সিনিয়র ডাক্তার অধ্যাপক সুদীপন মিত্র, চিকিৎসক স্বস্তিশোভন‌ চৌধুরি‌ সহ মোট ১৮ জন চিকিৎসক ইস্তফা দিয়েছেন। তবে চিকিৎসা পরিসেবা স্বাভাবিক রেখেই জলপাইগুড়িতে অনশন শুরু করেছেন প্রতিবাদী চিকিৎসকরা। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে এই অনশন। জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের অধীনে থাকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারের পাশে অনশন মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। রয়েছেন আইনজীবী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষও।


অনসন মঞ্চে উপস্থিত জলপাইগুড়ির বিশিষ্ট চিকিৎসক পান্থ দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন‘ ‘‘গোটা রাজ্যে যে থ্রেট কালচার চলছে ২০১২ পরবর্তী সময়ে জলপাইগুড়িতে এই থ্রেট কালচারের কারণে বহু সরকরী চিকিৎসক ডাক্তার বাবু চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনায় সরকার যে অসহনশীল ও অনমনীয় মনোভাব পোষণ করছে তার বিরুদ্ধে ডাক্তার বাবুদের এই প্রতিবাদ।’’ এখন পর্যন্ত ১৮ ইস্তফা দিয়েছেন আরও অনেকে আসছেন। চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত করে নয় প্রয়োজনে অভয়া ক্যাম্পে রোগী দেখে আন্দোলন চলবে।
গণইস্তাফা দিলেও চিকিৎসকেরা তাদের পরিষেবা স্বাভাবিক রেখেছেন। তবে শারদোৎসবের সময় একযোগে এতো সংখ্যক চিকিৎসকের ইস্তফার ফলে চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হবার প্রবল আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত তিনদিন ধরে অব্যাহত রয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে জুনিয়ারদের অনশন। 
অনশনের ৭২ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালেও গণ ইস্তফার বার্তা দেওয়া হয়েছে। প্রতীকি পদত্যাগপত্র জমাও দিয়েছেন একাধিক সিনিয়ার চিকিৎসক। মঙ্গলবার রাতে প্রবল ঝড় বৃষ্টির জেরে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অনশন মঞ্চ ভেঙে পড়ে। বাধ্য হয়েই আপাতত হাসপাতালের অধ্যক্ষের দপ্তরের সামনে অনশন মঞ্চ তৈরী করে সেখানে দুইজন জুনিয়ার চিকিৎসক অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। বুধবারও বেশ কয়েকজন চিকিৎসক, প্রাক্তনী, প্রাক্তন অধ্যাপক তারাও অনশনে সামিল হয়েছেন। সব মিলিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আন্দোলনের চাপ ক্রমশ বাড়ছে। এদিন চিকিৎসকেরা গণইস্তফা দিলেও উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা কোনভাবেই ব্যাহত হয়নি। গণইস্তফা দেবার পরেও চিকিৎসকেরা তাদের রোগী পরিষেবার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আন্দোলনের গভীরতা বিষয়ে সরকার নমনীয় না হলে আগামী দিনে চিকিৎসকেরা গণছুটিতে যাবার চিন্তাভাবনা শুরু করবেন। 
উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে অধ্যাপনা করেছেন চিকিৎসক অতনু রায়। এদিন অনশনকারী ওই চিকিৎসক বলেন, ‘‘সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। সরকার দূর্যোগের সময়তেও উৎসব খুঁজে পাচ্ছেন। চূড়ান্ত অমানবিকতা ও অসংবেদশীলতার পরিচয় দিচ্ছে তৃণমূল সরকার। গোটা রাজ্য জুড়ে ‘শব’র উৎসব হচ্ছে। সেখানে তথাকথিত উৎসবের আহ্বান জানানো মুর্খতা ছাড়া অন্য কিছুই নয়। আগামীদিনে গণ ছুটির পথে পা বাড়াতেও পিছপা হবেন না আন্দোলনে সামিল চিকিৎসকেরা।’’ 
সিনিয়ার চিকিৎসক তথা অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরসদের পক্ষে উৎপল বন্দোপাধ্যায় বলেন, চাপ বাড়াতে নয়, আমরা আমাদের দাবি বিষয়ে সরকারের প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাইছি। গণ ইস্তফাপত্রে স্বাক্ষর করেছি। ষষ্ঠীর দিনে আমাদের ঘরের ছেলেমেয়েরা ৭২ঘন্টার বেশী সময় না খেয়ে রয়েছে। অবিলম্বে সরকার অনশনকারী চিকিৎসকদের ন্যায় সঙ্গত দাবিগুলিকে মেনে নিয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে অনশনকারী চিকিৎসকদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর ব্যবস্থা করুক। তা নাহলে চূড়ান্ত শারিরীক অবস্থার অবনতি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। চিকিৎসকরা কোথাও কোন অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টায় নেই। শান্তিপূর্ন পথে আন্দোলনে নেই। চিকিৎসকদের দাবি সাধারণ মানুষের দাবিতে পরিনত হয়েছে। অপর সিনিয়ার চিকিৎসক ডাঃ অরুনাভ সরকার বলেন, ‘‘অনশনকারী জুনিয়ার চিকিৎসকরা সত্যিই অনশনে আছেন। সরকারের পদক্ষেপের আশায় রয়েছি।’’
প্রসঙ্গত গত রবিবার থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অনশন কর্মসূচি শুরু করেছেন জুনিয়ার চিকিৎসকেরা। সোমবার থেকে উত্তরবঙ্গ ডেন্টাল কলেজের ইন্টার্ন সৌভিক ব্যানার্জি ও উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মনঃস্তত্ত্ব বিভাগের পিজিটি অলোক কুমার ভার্মা আমরন অনশনে বসেছেন। তাদের সাথে প্রতীকি অনশনে যোগ দিয়েছেন অন্যান্য চিকিৎসকেরাও। জুনিয়ার চিকিৎসকদের আন্দোলনকে মান্যতা দিয়ে গণ ইস্তফার বার্তা দিয়েছেন হাসপাতালের সিনিয়ার চিকিৎসকেরা। সিনিয়র চিকিৎসকদেরও প্রশ্ন, জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিগুলি মানতে কেন এত অনীহা রাজ্য সরকারের, কেন ভয়ের পরিবেশ দূর করা যাচ্ছে না কলেজ হাসপাতালগুলি থেকে। সামগ্রিকভাবে রোগীদের স্বার্থে এই দাবিগুলি পূরণ করলে সাধারণ মানুষেরই উপকার হবে।

Comments :0

Login to leave a comment