প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাবমূর্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্য সব মন্ত্রকের মতো রেল মন্ত্রকও মোদীর প্রচারে কোনও কার্পণ্য করছে না। সারাবছর কোনও না কোনও উপলক্ষ্য হাজির করে মোদীর প্রচার চলছে। রেলের সব স্টেশন-অফিসে জ্বল জ্বল করে মোদীর ছবিসহ বাণী— ‘স্বচ্ছতাই সেবা’। কিছুদিন পরপরই ঘটা করে উদ্যাপন হয় পরিচ্ছন্নতা সপ্তাহ বা পরিচ্ছন্নতা পক্ষ। তার জন্য স্টেশনগুলিতে মোদীর ছবিওয়ালা পোস্টারে ঢেকে দেওয়া হয়। যেকোনো স্টেশনে গেলেই যাত্রীদের নজরে পড়ে মোদীর বিশাল বিশাল কাটআউট বা হরেকরকমের পোস্টার-ফেস্টুন। ভারতীয় রেল এখন যথার্থ অর্থেই মোদীময়। কেউ যদি প্রশ্ন তোলেন রেলমন্ত্রক কি তবে মোদীর প্রচার মন্ত্রকে পরিণত হয়ে গেছে— ভুল কিছু হবে বলে মনে হয় না।
মোদীর নতুন ভারতে রেলেরও নাকি ভোল বদলে ফেলা হবে। পুরানো সবকিছু দ্রুত বদলে ফেলা হচ্ছে। রেলের লক্ষ্যও বদলে যাচ্ছে। জনকল্যাণ বা জনস্বার্থ থেকে মুখ ঘুরিয়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। একসময় যে রেল ছিল দেশের বৃহত্তম নিয়োগকর্তা, সবচেয়ে বেশি মানুষ কাজ করতেন রেলে। এখন সেখানে নিয়োগ কার্যত বন্ধ। কর্মীসংখ্যা কমতে কমতে এক-পঞ্চমাংশে নেমেছে। রেল দেশের বৃহত্তম গণপরিবহণ ব্যবস্থা। অতি অল্প ভাড়ায় মানুষ যাতায়াত করতে পারতেন। সরকার ভরতুকি দিয়ে ভাড়া কম রাখে সাধারণ মানুষের স্বার্থে। সেই রেলকে বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনা শুরু হয়েছে। আয় বাড়াতে হবে, ভরতুকি বন্ধ করতে হবে। রেল চলবে লাভজনকভাবে। তাই পুরানো ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। বাড়ছে বেশি ভাড়ায় ট্রেন। বাতানুকূল কোচ বাড়ছে। সাধারণ যাত্রীদের কমভাড়া ট্রেনগুলি তুলে দিয়ে নতুন বন্ধে ভারত ট্রেন চালু হচ্ছে। এটা মোদীর ট্রেন বলেই পরিচিত। এই ট্রেন মোদী ছাড়া কেউ উদ্বোধন করতে পারে না। এটা নাকি তুলনামূলকভাবে বেশি দ্রুতগামী। পুরো বাতানুকূল। অত্যধিক বেশি ভাড়া। সবকোচে সর্বক্ষণ চলে মোদীর সীমাহীন প্রচার। অর্থাৎ কম আয়ের সাধারণের ট্রেন তুলে দিয়ে বেশি আয়ের ট্রেন বন্ধে ভারত।
এদিকে বলা হচ্ছে গোটা রেল পরিকাঠামো ঢেলে সাজিয়ে উন্নত ও দ্রুতগামী রেল চালু করছে মোদী সরকার। জাপানের অর্থে ও কারিগরি সহায়তায় মুম্বাই-আমেদাবাদ তৈরি হচ্ছে বুলেট ট্রেন। মোদীর স্বপ্নের প্রকল্প। ভারতে ট্রেনের গড় গতি তিনি অনেক উচ্চতায় তিনি নিয়ে যাচ্ছেন। গতির যুগে অপরাপর বিশ্বের সঙ্গে সমতা আনছেন তিনি। কিন্তু মোদীর পক্ষে দুর্ভাগ্যের হতে সত্য তাঁর আমলে ভারতীয় রেলের গড় গতি হ্রাস পাচ্ছে। মোদীর নতুন ভারতের রেল চলে পুরানো ভারতের থেকে ধীরগতিতে। সদ্য প্রকাশিত রেলের পরিসংখ্যান বলছে গত বছর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরে ভারতীয় যাত্রীবাহী ট্রেনের ঘণ্টায় গড়গতি ছিল ৪৭.৬ কিলোমিটার। এবছর ঐ একই সময়ে সেই গতি কমে হয়েছে ৪২.৩ কিলোমিটার। পণ্যবাহী ট্রেনের অবস্থা আরও শোচনীয়। কমেছে ঘণ্টায় ৩১.৭ কিলোমিটার থেকে ২৫.৮ কিলোমিটারে।
Comments :0