উত্তর প্রদেশের লখিমপুর খেরি। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে এখানে চলা কৃষক আন্দোলনের উপর দিয়ে বিলাসবহুল গাড়ি চালিয়ে দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনির পুত্র। সেই ঘটনায় এক সাংবাদিক সহ ৪ কৃষক ঘটনাস্থলে প্রাণ হারিয়েছিলেন।
সংযুক্ত কৃষক মোর্চার দাবি ছিল টেনিকে সরাতে হবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে। সরাননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এমনকি এবারও অজয় মিশ্র টেনিকে খেরি থেকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। টেনি হেরেছেন। সমাজবাদী পার্টির প্রার্থীকে জিতিয়ে বিজেপিকে বার্তা দিয়েছেন এই কেন্দ্রের মানুষ।
শুধু লখিমপুর খেরি নয়, কৃষকদের দাবিকে গুরুত্ব না দেওয়ার ফলে পাঁচ রাজ্যের ৩৮টি লোকসভা আসন হারাতে হয়েছে বিজেপিকে। ২০১৯ সালে জেতা এই আসনগুলির পাশাপাশি ঝাড়খন্ডের খুন্তি আসন থেকে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন কেন্দ্রীয় কৃষি ও কৃষিকল্যাণ মন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা। কংগ্রেসের কালীচরণ মুন্ডা দেড় লক্ষ ভোটে অর্জুন মুন্ডাকে পরাজিত করেছেন।
২০২১ সালে শুরু হওয়া কৃষক আন্দোলনের ব্যাপক প্রভাব পড়েছিল পশ্চিম উত্তর প্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান ও মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষের অঞ্চলগুলিতে। ২০২৪ সালে এই অঞ্চলগুলির মধ্যে বিজেপির সবথেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে মহারাষ্ট্রে। হারিয়েছে ১২টি জেতা আসন। এছাড়া রাজস্থানে ১১টি, হরিয়ানায় ৫টি, পশ্চিম উত্তর প্রদেশে ৮টি এবং পাঞ্জাবে ২টি আসন খুইয়েছে বিজেপি।
প্রসঙ্গত ২টি আসন খুইয়ে পাঞ্জাবে সর্বস্বান্ত হয়েছে বিজেপি। এসে ঠেকেছে শূন্যে।
২০২৪ নির্বাচনের দীর্ঘ প্রচার পর্বেও আঁচ মিলেছিল কৃষকদের ক্ষোভের। এই পাঁচ রাজ্যের বহু জায়গায় বিজেপিকে প্রচারে বাধা দিয়েছিলেন কৃষকরা। হরিয়ানার বহু জায়গায় বিজেপি এবং সঙ্গী জেজেপি’র প্রার্থীরা বিক্ষোভের মুখে পড়েন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নতুন করে আন্দোলন শুরুর কথা ঘোষণা করেছিলেন কৃষকরা। দিল্লি পৌঁছতে না দিয়ে কৃষকদের পাঞ্জাব-হরিয়ানা সীমান্তে আটকে দেয় হরিয়ানার বিজেপি সরকার। পশ্চিম উত্তর প্রদেশের কৃষকদেরও দিল্লি ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
নির্বাচনের ফল বেরনোর পর দেখা গিয়েছে, কৃষক আন্দোলনের এলাকা, পশ্চিম উত্তর প্রদেশের মুজফ্ফরনগর, সাহারানপুর, কৈরানা, মোরাদাবাদ, সম্ভল, রামপুর, লখিমপুর খেরির মত আসন হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির।
চার বছর ধরে স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ কার্যকরী করার দাবিতে লড়াই চালাচ্ছেন কৃষকরা। স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, কৃষিকে লাভজনক করতে গেলে কৃষির খরচের দেড়গুণ কৃষককে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য হিসেবে দিতে হবে। এর পাশাপাশি কৃষিঋণ মুকুব এবং বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের বেসরকারীকরণ রোধের দাবিও তোলেন কৃষকরা।
লিখিত প্রতিশ্রুতি দিলেও এই দাবিগুলি পূরণ করেনি বিজেপি। মনে করা হচ্ছে, নির্বাচনে তারই পালটা জবাব দিলেন দেশের অন্নদাতারা।
বুধবার চন্ডীগড় বিমান বন্দরে এক সিআইএসএফ জওয়ানের সঙ্গে বচসায় জড়াতে দেখা যায় হিমাচল প্রদেশের মান্ডি আসনের বিজেপি সাংসদ কঙ্গনা রানাওয়াতকে। কঙ্গনার অভিযোগ, তাঁকে চড় মেরেছেন এক মহিলা সিআইএসএফ জওয়ান। যদিও এর সত্যতা এখনও পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে অভিযুক্ত সিআইএসএফ জওয়ান কুলবিন্দর কৌরকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘কৃষক আন্দোলনের সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ অগ্রাহ্য করে আমার মা অবস্থানে বসেছিলেন। তখন কঙ্গনা রানাওয়াত কৃষকদের অপমান করে একাধিকবার বিবৃতি দিয়েছিলেন। ওনার সাহস হবে ওখানে বসার?’’’
BJP FARMERS
কৃষক বিক্ষোভের পাঁচ রাজ্যে ৩৮ আসন খুইয়েছে বিজেপি
×
Comments :0