INDIA

অক্টোবরের প্রথমেই ‘ইন্ডিয়া’র প্রথম যৌথ সমাবেশ ভোপালে

জাতীয়

নির্বাচনমুখী মধ্য প্রদেশের ভোপালে সমাবেশ করে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরুর বার্তা দিল বিরোধীদের মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই ওই সমাবেশ হবে। বুধবার দিল্লিতে এনসিপি প্রধান শারদ পাওয়ারের বাসভবনে ‘ইন্ডিয়া’র সমন্বয় কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই সঙ্গে আকাশছোঁয়া বাজার দর, তীব্র বেকারত্বের পাশাপাশি জাতভিত্তিক জনগণনার মতো জ্বলন্ত বিষয় নিয়ে দেশজুড়ে সরব হবে বিরোধীরা।
‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের তিনটি বৈঠক হয়েছে ইতিমধ্যে। মুম্বাইয়ে সর্বশেষ বৈঠকে প্রচার আন্দোলনকে দেশজুড়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে যোগাযোগ রক্ষার লক্ষ্যেই সমন্বয় কমিটির পাশাপাশি আরও কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়। এদিন সেই সমন্বয় কমিটির প্রথম বৈঠক বসে পাওয়ারের বাসভবনে। বৈঠকে কমিটির ১৪ সদস্যের মধ্যে ১২ জন উপস্থিতি ছিলেন। অন্যতম সদস্য তৃণমূল কংগ্রেসের অভিষেক ব্যানার্জি দুর্নীতি মামলায় আদালত নির্দেশিত ইডি’র জেরায় কলকাতায় থাকায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। বৈঠক শেষে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের পক্ষ থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে সেকথা উল্লেখও করা হয়েছে। আর সিপিআই(এম) সদস্যের নাম এখনও জানানো হয়নি বলে কেউ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না।
লোকসভা ভোটের আগে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই মঞ্চের প্রথম যৌথ সমাবেশ ডাকা হয়েছে ভোপালে। এরপর দেশের প্রতিটি রাজ্যে এই যৌথ সমাবেশ হবে বলে জানিয়েছেন মঞ্চের নেতৃবৃন্দ। তবে অনুমান করা হচ্ছে, প্রথম দিকের যৌথ সমাবেশগুলি হবে নির্বাচনমুখী রাজ্যতেই। এই সমাবেশগুলিতে মানুষের দৈনন্দিন যে সঙ্কট নেমে এসেছে মোদী সরকারের নীতির জন্য, তা তুলে ধরবেন নেতারা। এরই সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক হিংসা, মণিপুরের জাতি সংঘর্ষ, মোদীর দয়ায় তাঁর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের বিশেষত আদানি গোষ্ঠীর বাড়বাড়ন্তের কথা দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যেই সমাবেশগুলি হবে। সমাবেশের পাশাপাশি প্রচার, সমাজমাধ্যম, মিডিয়া এবং গবেষণা বিষয়ক কমিটিও বৈঠকে বসবে পর পর বলে জানা গিয়েছে। সেই বৈঠকেও বিরোধীদের প্রচারকে আরও কত বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, সে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। 
একই সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এদিন সমন্বয় কমিটি। মিডিয়া কমিটির সাব-গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। তারা বাছবে কোন কোন সমাজমাধ্যমকে বয়কট করা হবে। এমনকি টক-শোয়ে কোন সঞ্চালক শাসক গোষ্ঠীর চূড়ান্ত ধামাধরা, তা চিহ্নিত করবে ওই গ্রুপ এবং সেই অনুষ্ঠানে ‘ইন্ডিয়া’র কোনও প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন না। 
উল্লেখ্য, এদিন বৈঠকে ছিলেন শারদ পাওয়ার (এনসিপি), কে সি বেণুগোপাল (কংগ্রেস), টি আর বালু (ডিএমকে), তেজস্বী যাদব (আরজেডি), হেমন্ত সোরেন (জেএমএম), মেহবুবা মুফতি (পিডিপি), ওমর আবদুল্লা (ন্যাশনাল কনফারেন্স), সঞ্জয় রাউত (শিবসেনা-উদ্ধব), লালন সিংহ (জেডিইউ), জাভেদ আলি খান (সমাজবাদী পার্টি), ডি রাজা (সিপিআই) এবং রাঘব চড্ডা (আপ)।
এদিন বৈঠকে লোকসভা ভোটে বিরোধীদের আসন সমঝোতা নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। এপ্রসঙ্গে কমিটির অন্যতম সদস্য কংগ্রেসের কে সি বেণুগোপাল জানিয়েছেন, মঞ্চের অন্তর্গত দলগুলি এনিয়ে আলোচনা শুরু করবে এবং দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা চালাবে। তবে এই প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা সহ কয়েকটি রাজ্যে সেভাবে আসন সমঝোতা হবে না তা যদিও আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিল বামপন্থীরা। এমনকি ১ সেপ্টেম্বর ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের মুম্বাই বৈঠকেও বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘যথাসম্ভব সমঝোতা’র চেষ্টা চালানো হবে।
তবে জাতিভিত্তিক জনগণনা নিয়ে সবাই একমত হয়েছেন এদিনের বৈঠকে। এবিষয়ে বিজেপি’র প্রবল আপত্তি আছে। বিরোধীরা এবিষয়টিকে যথেষ্ঠ গুরুত্ব সহকারেই দেখছে বলে এদিন আলোচনার পর যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণাও করা হয়েছে। জুলাইয়ের বৈঠকেও ‘সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ এবং হিংসার’ প্রতিবাদে সামাজিক, শিক্ষাগত এবং আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের ‘স্বচ্ছ’ শুনানির স্বার্থেই জাতভিত্তিক জনগণনা চালু করা উচিত। ইতিমধ্যে বিহারে এই জনগণনা চালু করেছে মহাগটবন্ধন সরকার। বিষয়টি অবশ্য এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।
এদিকে, বিরোধীদের সমন্বয় কমিটির বৈঠককে বিজেপি সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। দলের নেতা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর ওই বৈঠককে ‘হিন্দু-বিরোধী সমন্বয় কমিটি’র বৈঠক বলে সাম্প্রদায়িক জিগির তোলার চেষ্টা করেছেন। ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের নেতা সোনিয়া গান্ধী কিংবা রাহুল গান্ধী যুব ডিএমকে প্রধান দয়ানিধি স্ট্যালিনের ‘সনাতন ধর্ম’ নিয়ে মন্তব্যের কেন বিরোধিতা করেননি সেই প্রশ্ন তুলে ‘হিন্দু-বিরোধী’ বলে কটাক্ষ করেছেন। এরই সঙ্গে মঞ্চের নেতারা দু্র্নীতিগ্রস্ত বলেও তাঁর দাবি।

Comments :0

Login to leave a comment