আবার টানেলের কাজে পরিযায়ী হচ্ছেন মানিক তালুকদার। গত ১২ নভেম্বর উত্তরাখণ্ডে নির্মীয়মাণ সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে ধস নামায় আটকে পড়েছিল যে ৪১জন শ্রমিক তাদেরই একজন ছিলেন কোচবিহারের মানিক তালুকদার। ঘটনার ৫১ দিন পর ‘আর ভিনরাজ্যে যাব না’ এই কথা ফিরিয়ে নিলেন মানিক তালুকদার! এরাজ্যে কাজ মেলেনি, তাই ফের নাম লেখাবেন পরিযায়ী শ্রমিকের খাতায়, নিজের মুখেই জানিয়ে দিলেন মানিক তালুকদার!
উদ্ধার হওয়ার পর যখন মানিক তালুকদার বাড়ি ফিরে আসেন তখন তিনি এবং তাঁর পরিবারের সবাই বলেছিলেন, ‘‘উনি আর ভিনরাজ্যে কাজে যাবেন না। নিজের জেলাতেই থেকে যাবেন, কিছু একটা কাজ পেলেই।’’
মাসদুয়েক কাটার আগেই সংসারের দায়ে ভাবনা বদলাতে হয়েছে সেই মানিক তালুকদার ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের! সংসার বাঁচাতে কাজ তো চাই। এরাজ্যে কিছু মিলবে না সেটা বুঝে গেছেন উনি এবং ওঁর পরিবার। আর তাই ফের নিজের এলাকা ছেড়ে পরিযায়ী শ্রমিকের খাতায় নাম লেখাতে চলেছেন সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফেরা মানুষটা।
অথচ মানিক তালুকদার যখন সুড়ঙ্গ থেকে বেঁচে ফিরে এলেন তখন স্থানীয় শাসক দলের নেতা-মন্ত্রী, কে না যায়নি ওঁর সাথে দেখা করতে! মিডিয়ার ঘন ঘন ফ্লাশের আলোর ঝলকানির মাঝে তখন নেতা, মন্ত্রীদের আশ্বাস ছিল, ‘‘পাশে আছি’’। আর এখন কোচবিহার জেলার বলরামপুরের সেই মানিক তালুকদারের বাড়িতে মন খারাপের সুর, বিষাদের আবহাওয়া।
এদিন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে বলেন, রাজ্যটার সর্বনাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সে কারণেই ফের প্রাণহানির ঝুঁকি নিয়েই মানিক তালুকদারের মতো মানুষকে উত্তরাখণ্ডে কাজে চলে যেতে হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে অহরহ মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেন, তাঁর দলের নেতা, মন্ত্রীরাও যে সেই রাস্তায় হাঁটবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। রাজ্যে কাজের ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছে রাজ্য সরকার।
এদিন মানিক তালুকদারের গলায় আক্ষেপের সুর, ‘‘এখানে কোথাও একটা কাজ পেলাম না। সবাই আশ্বাস দিয়েছিল, কিছু একটা হবে। কিন্তু কিছুই তো হলো না! তাই আবার ফিরে যাব উত্তরাখণ্ডে। পুরানো কাজেই যোগ দেব।’’ তিনি জানালেন, ইতিমধ্যে কথা হয়েছে পুরানো কোম্পানির সাথে। সেখানে ইলেকট্রিশিয়ান পদে তিনি কাজ করতেন। কোম্পানি তাঁকে ফের কাজে নেবেন এই আশ্বাস দেওয়ায় আর দু’বার ভাবেননি মানিক তালুকদার। ইতিমধ্যে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, ফের তিনি যাবেন উত্তরাখণ্ডে।
পরিবারের সদস্যদের ক্ষোভ, মানিক তালুকদারের সাথে অন্য রাজ্যের যারা সুড়ঙ্গে আটকে ছিলেন, সেখানকার রাজ্য সরকার কাজের ব্যবস্থা করেছে। দিয়েছে অন্যান্য সাহায্যও। মানিক তালুকদারের ছেলে মণি তালুকদারের গলাতেও আক্ষেপের সুর, ‘‘বাবার পাশে কেউই দাঁড়ালো না। নিরুপায় বাবা ফিরে যাবে উত্তরাখণ্ডে।’’
এদিন মণি তালুকদার জানান, রাজ্য সরকারের ভূমিকায় আমরা হতাশ। অন্য রাজ্যের আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, তাঁদের পাশে রাজ্য সরকার দাঁড়িয়েছে। আমাদের রাজ্যে ঠিক উলটো ঘটল।
তিনি জানান, বাবা উত্তরাখণ্ডে ফিরে যাবেন। চলতি মাসের ২২ অথবা ২৩ তারিখেই ওই কোম্পানিতেই তিনি কাজে যোগ দেবেন। আপাতত এটুকুই ঠিক হয়ে আছে।
এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সোমবার বলেন, উনি যখন সুড়ঙ্গে ৪১দিন আটকে থাকার পর প্রাণ হাতে নিয়ে ফিরে আসার পর রাজ্যের শাসক দলের নেতা, মন্ত্রীরা ওঁর পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে একের পর এক মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিলেন। এখন সে সব মিথ্যে বুঝতে পেরেই মানিক তালুকদারকে ফের পরিযায়ী শ্রমিকের খাতায় নাম লেখাতে হচ্ছে। এর চাইতে লজ্জার আর কী আছে?"
MANIK SILKIWARA
কাজ মেলেনি রাজ্যে, ভিনরাজ্যে সুড়ঙ্গ কাটতেই ফিরছেন মানিক
×
Comments :0