কেউ বলছেন মেরুকরণের ভোট। আবার কেউ বলছেন চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। বাস্তবচিত্র অনেকটাই তেমনি বলছে। আর তা হলো হাসনাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে গেল। পঞ্চায়েতের ১৬টি আসনের মধ্যে ৯টি বিজেপি পেয়েছে। তৃণমূল ৫টি,বামফ্রন্ট সমর্থিত সিপিআই(এম) ও সিপিআই ১টি করে আসন পেয়েছে। মেরুকরণ কেন বলছেন? সিপিআই(এম) নেতা নেছার উদ্দিন গাজি বলেন, এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ৮০ শতাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। বাকি ২০ শতাংশ মুসলিম। ফলে তৃণমূলের সহযোগিতা নিয়ে বিভাজন এখানে স্পষ্ট হয়ে ধরা দিয়েছে। কেমন? যেমন হাসনাবাদ ব্লক পর্যায়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বড় নেতা আনন্দ সরকার। পাশাপাশি নিমাই দাস বিজেপির আরও একটু বড় নেতা। এদের দুজনের অঘোষিত বোঝাপড়ার কারণে হাসনাবাদ পঞ্চায়েতে বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। হাসনাবাদ ব্লক জুড়ে যেখানে বুঝেছে সিপিআই(এম) তথা বামফ্রন্ট জিততে পারে সেখানেই তৃণমূলের সমাজবীরোধীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কোথাও আখের আলির নেতৃত্বে আবার কোথাও পিন্টু মোল্লা, আমিরুল, কোথাও স্থানীয় দুষ্কৃতীরা। নমিনেশন পর্ব থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত বুথে বুথে তান্ডব চালিয়ে ছাপ্পা ভোট দিল অথচ হাসনাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ভোট শান্তিপূর্ণ। দীর্ঘ ৫০ বছরের উপর রাজনৈতিক জীবন। ১০ বছর (১৯৮৩- ৮৮, ১৯৯৮ - ২০০৩) হাসনাবাদ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন সুবিদ আলি গাজি। হাসনাবাদের অধিকাংশ মানুষের বক্তব্য আসলে তৃণমূল আর বিজেপি হলো চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। সাধারণ মানুষের এই বক্তব্যের সাথে একমত হয়ে সুবিদ আলি গাজি বলেন, তৃণমূল নেতা আনন্দ সরকার ঠিকাদারি ব্যবসার সাথে যুক্ত। বিজেপি নেতা নিমাই দাস মাছ চাষের হ্যাচারি ব্যবসায়ী। বর্তমানে ধনী ব্যক্তি।
এই নিমাই দাসের কল্যাণে হাসনাবাদ হিঙ্গলগঞ্জ জুড়ে ৯০০ - ১০০০ বিঘা জমি পতিত জমিতে পরিণত হয়েছে। ভেনামী চিংড়ি চাষের লোভ দেখিয়ে বহু মানুষকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। তারা এখন গ্রাম ছাড়া দেনার দায় ঘাড়ে নিয়ে। এই দুজনের ব্যবসায়ীক স্বার্থ বজায় রাখতে হাসনাবাদ পঞ্চায়েত বিজেপির হাতে তুলে দিয়েছে তৃণমূল। যার কারণে এই গ্রাম পঞ্চায়েত শুধু দখলে নিয়েছে তা নয়। হাসনাবাদ ব্লকের ৪টি পঞ্চায়েতে সমিতির আসন বিজেপি পেয়েছে যার মধ্যে ৩টি হাসনাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে। যার আসন সংখ্যা ১৬,১৭,১৮। উদাহরণ টেনে এনে সুবিদ আলি গাজি বলেযন, ওহাসনাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতকে ঘিরে আছে বরুনহাট রামেশ্বরপুর, পাটলিখানপুর,আমলানি, ভবানীপুর- ১ গ্রাম পঞ্চায়েত। হাসনাবাদ ব্লকের সর্বত্র অধিকাংশ বুথ দখল করে ছাপ্পা ভোট দিল তৃণমূলীরা। অথচ হাসনাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতে নির্বিঘ্নে ভোট হয়ে গেল। আরও খোলসা করে তিনি বলেন, হাসনাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১৯ নং পার্টের ১৩ নং আসনে ভোট হয় চকখাঁপুকু্র এফ পি স্কুল ও ১২১ নং পার্টের ১৫ নং আসনে চকখাঁপুকু্র স্টেট প্লান এফ পি স্কুলে ভোট হলো একেবারে শান্তিপূর্ণ। অথচ এই দুটি বুথের লাগোয়া মাত্র ৪০০ মিটার দূরে পাটলিখানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে চললো দিনভর ছাপ্পা ভোট। হাসনাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১১৬ নং পার্টের ১০ নং আসনে শরৎস্মৃতি বিদ্যালয়ে ভোট হয় শান্তিপূর্ণভাবে। লাগোয়া ৭০০ মিটার দূরে বরুনহাট রামেশ্বরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পার্ট নং ১২৩ আসন সংখ্যা ২ দক্ষিণ রামেশ্বরপুর এফ পি স্কুলে দুলকি চালে ছাপ্পা ভোট দিল তৃণমূলীরা। নির্বাচনের মনোনয়ন পর্ব থেকে ভোটের দিন পর্যন্ত হাসনাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েত ছিল সন্ত্রাসহীন। পুলিশ প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদত, বিপরীতে তৃণমূল বিজেপির রাজনৈতিক বোঝাপড়া না থাকলে হাসনাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেত বামফ্রন্ট এবং অন্যান্য সহযোগীরা। বলছেন মুসলিম অধ্যুষিত হাসনাবাদ, মনোহরপুর, শিমুলিয়া, হিন্দু অধ্যুষিত খাঁপুকু্র, কালুতলা, ট্যাংরামারি, আঙনারা গ্রামের কৃষিজীবি মানুষ।
Comments :0