নির্বাচনী বন্ডের তথ্য আড়াল করতে সুপ্রিম কোর্টে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিচালনাধীন দেশের বৃহত্তম ব্যাঙ্ক এসবিআই, মঙ্গলবার সাংবাদিক করণ থাপারের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সরাসরি এই অভিযোগ করলেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি শুধু এই অভিযোগই তোলেননি, বন্ডের তথ্য প্রকাশে আরও সময় চাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আদালতে মিথ্যা কথা বলার জন্য এসবিআই (স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া) এবং এই ব্যাঙ্ক যার নিয়ন্ত্রণে, সেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। ইয়েচুরি বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বলে এই মিথ্যার দায় এড়াতে পারে না কেন্দ্রীয় সরকারও। শপথ ভেঙে আদালতে মিথ্যা বলার জন্য দরকারে সিপিআই(এম) সুপ্রিম কোর্টে আবার মামলাও দায়ের করতে পারে বলে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন ইয়েচুরি। মঙ্গলবার নিজের এক্স হ্যান্ডেলে এই সাক্ষাৎকারের ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি। সেই সঙ্গে তিনি লিখেছেন, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দুর্নীতিকে বৈধতা দিতে চাওয়া হয়েছিল। বিষয়টি এখন জনতার আদালতে। যারা স্বাধীন ভারতের এই বৃহত্তম দুর্নীতির চিত্রনাট্য রচনা করেছিলেন, ভোটদাতাদের অবশ্যই তাদের প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য প্রকাশ করার জন্য এসবিআই-কে নির্দেশ দেওয়ার পরেও দেশের বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক যে তা মানল না, সাক্ষাৎকারে সেই বিষয়ে ইয়েচুরির মতামত জানতে চেয়েছিলেন থাপার। উত্তরে ওই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচনী বন্ডে অর্থের দাতা ও প্রাপকদের তথ্য মেলাতে সাড়ে তিন মাস সময় লাগবে বলে সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিল এসবিআই। অথচ সবাই জানেন, প্রতিদিন কাজের সময়ের শেষে প্রতিটি ব্যাঙ্ককে সেদিন কত টাকা জমা পড়েছে এবং কত টাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের গ্রাহকদের পক্ষ থেকে তোলা হয়েছে, তার হিসাব মেলাতে হয়। স্পষ্টতই এসবিআই হয় সুপ্রিম কোর্টকে বিভ্রান্ত করেছে এবং মিথ্যা কথা বলেছে। প্রশ্ন হলো, এসবিআই নিজের থেকে এই আচরণ করেছে না কি চাপে পড়ে করেছে? তিনি নিশ্চিত, কেন্দ্রীয় সরকারের চাপেই এসবিআই এই কাজ করেছে। সুতরাং এসবিআই শীর্ষ আদালতে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা কথা বলেছে। সুপ্রিম কোর্টকে একবার বন্ডের সব তথ্য প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়ার পরে বন্ডের আলফানিউমেরিক কোড নম্বর জানানোর নির্দেশ আবার দিতে হয়েছে। তার মানেই এসবিআই তা গোপন করেছে। সুপ্রিম কোর্ট প্রথম রায়ে বন্ডের সব তথ্য প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছিল এসবিআই-কে। তারপর দ্বিতীয় নির্দেশে শীর্ষ আদালতকে পরিষ্কার বলতে হয়েছে, কোনও তথ্য গোপন করতে পারবে না এসবিআই। এর অর্থ, এসবিআই সৎ আচরণ করেনি, মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। সেই কারণেই এসবিআই’র এই আচরণ শুধু আদালত অবমাননা হতে পারে না, এ ইচ্ছাকৃত মিথ্যাচারণ। তাই আদালতে মিথ্যা কথা বলার জন্য এসবিআই’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই একই ব্যবস্থা নিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধেও। কারণ, এই ব্যাঙ্কের মালিকানা রয়েছে সরকারের হাতেই। এই সাক্ষাৎকারেই আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, এসবিআই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে বন্ডের আলফানিউমেরিক কোড নম্বর জানিয়ে দিলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, কখনও বিজেপি ইডি-সিবিআই পাঠিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির থেকে তোলা আদায় করেছে, কখনও বন্ডের মাধ্যমে দলীয় তহবিলে টাকা পাওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই স্বজনপোষণ করে সরকারি বরাত তুলে দিয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির হাতে, কোনও কোনও ক্ষেত্রে শিখন্ডী কোম্পানি খুলে কালো টাকা সাদা করতে বন্ডকে ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
Comments :0