CBI JOB SCAM

দিনভর তল্লাশি, ক্রুদ্ধ ববি, সন্দেহ ‘আইওয়াশ’-র

রাজ্য

নিউ বারাকপুরের প্রাক্তন পৌর প্রধান তৃপ্তি মজুমদারের বাড়িতে তল্লাশি। ছবি: অভিজিৎ বসু

রাজ্যের পৌর উন্নয়ন দপ্তরের সঙ্গে পৌর নিয়োগের সম্পর্ক নেই। হাইকোর্টে দায়ের এ সংক্রান্ত মামলায় কলকাতা পৌরসভার নামও নেই। নিয়োগ দুর্নীতির দায় নিজের কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলতে এই দাবি করলেন রাজ্যের পৌরমন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

রবিবার সকাল থেকে সিবিআই’র আধিকারিকরা কলকাতা সহ মোট ১২ জায়গায় হানা দিয়েছে। কলকাতা মেয়র সহ এদিন সিবিআই’বের আধিকারীকরা তল্লাশি চালিয়েছে কাঁচড়াপাড়া, বারাকপুর, হালিশহর, দমদম, উত্তর দমদম, কৃষ্ণনগর, টাকি, কামারহাটি পৌরসভায়। কলকাতায় চেতলা ও ভবানীপুরে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং বিধায়ক মদন মিত্রের বাড়িতে চলেছে তল্লাশি। দক্ষিণেশ্বরে মদন মিত্রের ফ্ল্যাটেও তল্লাশি হয়েছে। একাধিক পৌর প্রধানের বাড়ি ও অফিসে তল্লাশির সঙ্গে চলেছে জিজ্ঞাসাবাদও।

দিনভর সিবিআই’র অভিযানের মাঝেই সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘তদন্ত হচ্ছে না আইওয়াশ? রোজ তদন্ত হচ্ছে। কোনও সন্দেহ নেই ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে। রাজ্য সরকার তদন্ত করেনি। ফলে আদালতের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু তল্লাশিতেই যেন তদন্ত আটকে না থাকে। দিল্লির নির্দেশে যেন ধামাচাপা না পড়ে।’’

দমদমের পৌর প্রধান হরেন্দ্র সিংয়ের বাড়িতেও চলেছে সিবিআই’র তল্লাশি। নিউ বারাকপুরের প্রাক্তন পৌর প্রধান তৃপ্তি মজুমদারের বাড়িতে চলেছে তল্লাশি। সিবিআই আধিকারিকদের দেখা গিয়েছে তৃপ্তি মজুমদারের গাড়ির নম্বর প্লেট থেকে নাম্বার লিখে নিতে।

তল্লাশি শুরু দশ ঘণ্টা পরে সিবিআই আধিকারিক কাগজপত্র নিয়ে কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রের দক্ষিণেশ্বরে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যায় সিবিআই’র তদন্তকারী দল। সন্ধ্যায় রাজ্যের পৌর মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান তদন্তকারীরা। এরপরই সাংবাদিক সম্মেলনে ক্ষোভ উগরে দেন হাকিম।

কলকাতার মেয়র উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘‘আমি জেলে থেকেছি, কিন্তু হাসপাতালে শুয়ে থাকিনি।’’ তিনি বলেন, ‘‘কলকাতা হাইকোর্টে পৌর নিয়োগ দুর্নীতির যে মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তল্লাশি সেখানে কলকাতা পৌরসভার নাম নেই।’’

ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘‘আমায় জেলে রাখুন, পরিবারকে নিয়ে হেনস্তা করবেন না। আমার দপ্তরের সঙ্গে এই পৌর নিয়োগের কোনও সম্পর্ক নেই। আইন অনুযায়ী নেই, কোনও প্রক্রিয়াজনিত সম্পর্কও নেই।’’

২০১৪ থেকে ২০১৮ বিভিন্ন পৌর সভায় নিয়োগ ঘিরে দুর্নীতির তদন্তে এই তল্লাশি বলে জানা গিয়েছে। শিক্ষায় দুর্নীতির তদন্তের সূত্রে পৌর দুর্নীতির হদিস মেলে ধৃত অয়ন শীলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি’তে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারীকে নাম না করে আক্রমণ করেন হাকিম। তিনি বলেন, ‘‘তুমি সিবিআই’র ভয়ে যেতে পার বিজেপি’তে আমি যাব না।’’ প্রশ্ন ছিল, বিজেপি থেকে কি প্রস্তাব এসেছে? নির্দিষ্ট জবাব দেননি পৌরমন্ত্রী।

তিনি জানিয়েছেন যে ভোটার পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, জমির দলিল, আইটি রিটার্নের জেরক্স সিবিআই আধিকারিকরা নিয়ে গেছেন। দলিল দেখতে চেয়েছিল। দেখানো হয়েছে।’’

আদালতকে আক্রমণ করেছেন ফিরহাদ। তিনি বলেন, ‘‘আদালতের উচিত চোখে কাপড় বেঁধে দাড়িপাল্লা ধরা। আগে থেকে ঠিক করে নির্দেশ দেওয়া আদালতের কাজ নয়।’’ এরপরই সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এবং সাংসদ ও আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যের নাম তোলেন তিনি। হাকিম বলেন, ‘‘সুজনবাবু, বিকাশ ভট্টাচার্য বলুন আমি কি চোর?’’ 

হাকিম বলেছেন, ‘‘সামাজিক সম্মানের বিষয় রয়েছে। সেই সম্মান নষ্ট করার চেষ্টা করছে।’’ 

শুভেন্দু অধিকারী আবার হাকিমের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘‘এমন দলে গিয়েছে যার একমাত্র এজেন্ডা টাকা তোলা এবং বাইরে পাঠানো।’’ 

আর মদন মিত্র বলেছেন, ‘‘রাজ্যের বেকারদের কাজের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়ব। দিল্লির নির্দেশে তদন্ত হচ্ছে।’’ তিনি বলেছেন, ‘‘ক’টি বাড়ি, সম্পত্তি জানতে চেয়েছিল। দেখিয়ে দিয়েছি। এটাকে তল্লাশি বলে না। ওরা আমাকে পৌর নিয়োগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেনি।’’ 

Comments :0

Login to leave a comment