Opposition unity on Kerala's demand

কেরালার দাবিতে সোচ্চার বিরোধীরা

জাতীয়

 শুধু কেরলার প্রতি বঞ্চনার প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা রক্ষার দাবিতে বামপন্থীদের সঙ্গেই একযোগে সোচ্চার হলেন বিরোধীরা। বৃহস্পতিবার কেরালার ওপর মোদী সরকারের আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারির বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ ধ্বনিত হলো দিল্লিতে। শুধু কেরালা নয়, বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিতে মোদী সরকারের বঞ্চনা, বৈষম্যমূলক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভের কথাও উচ্চারিত হয়েছে এদিনের বিক্ষোভ, প্রতিবাদের কর্মসূচি থেকে। এই প্রতিবাদের আঁচ এসে পৌঁছেছিল সংসদের ভিতরেও। সংসদের উভয়কক্ষে এই ইস্যুতে সোচ্চার হন বামপন্থী সাংসদরা। তাঁদের সঙ্গে কেরালা সহ তামিলনাডুতে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন ডিএমকে’র সাংসদরাও।
দেশের গণতন্ত্র, সংবিধান, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা রক্ষার দাবিতে এদিন দিল্লিতে বিক্ষোভ ধরনামঞ্চে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনরাই বিজয়নের সঙ্গে সোচ্চার হন দিল্লির আপ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান। নিজে উপস্থিত না হতে পারলেও তামিলনাডুর মন্ত্রী পালানিভেল থিয়গরাজনকে এদিন পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। তিনি ভিডিও বার্তাতে সংহতি জানান। উপস্থিত ছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ফারুখ আব্দুল্লাও। তাঁরা সকলেই কেন্দ্রের কাছে রাজ্যগুলির বকেয়া থাকা ন্যায্য পাওনার দাবিতেও সরব হন। সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতরাম ইয়েচুরি, সিপিআই’র সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা ছাড়াও বিভিন্ন বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ এই ধরনা বিক্ষোভে শামিল হয়ে সংহতি জানান। কর্মসূচিতে শামিল না হয়েও এদিন কেরালার প্রতি কেন্দ্রের একের পর এক অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও।
এদিন কেরালার প্রতি মোদী সরকারের বঞ্চনা, উপেক্ষার প্রতিবাদে দিল্লিতে যন্তরমন্তরের সামনে ধরনা বিক্ষোভে তাঁর মন্ত্রীসভার সদস্যদের সঙ্গে বসেন মুখ্যমন্ত্রী পিনরাই বিজয়ন। ওই রাজ্যের সিপিআই(এম) নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক মোর্চা (এলডিএফ) সমস্ত, সাংসদ, বিধায়করা। তাঁদের সঙ্গেই এদিন এলডিএফ’র নেতৃবৃন্দ। কেরালা ছাড়াও দিল্লি, হরিয়ানা সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা বামপন্থী কর্মী সমর্থকরাও যন্তরমন্তরের সামনে বিক্ষোভ আন্দোলনে শামিল হন।      
এদিন সকালে কেরালা হাউস থেকে শুরু হয় বিশাল মিছিল। মিছিলের সামনেই ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন সহ তাঁর মন্ত্রীসভার সদস্যার এবং জনপ্রতিনিধিরা। ওই মিছিলে এসে পৌঁছায় দিল্লির যন্তরমন্তরে। 
বিক্ষোভ ধরনা কর্মসূচির উদ্বোধন করতে গিয়ে বিজয়ন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে ক্রমশ পঙ্গু করে দিয়ে অগণতান্ত্রিকভাবে রাজ্যগুলির ওপর কেন্দ্রকে বসানো হচ্ছে। বিশেষকরে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিতে এই অগণতান্ত্রিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের এই মনোভাবের একজোট হয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে রক্ষা করতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা ঘোষণা করেন বিজয়ন। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো রক্ষায় এবং রাজ্যগুলির ন্যায্য পাওনার দাবিতে এক নতুন লড়াইয়ে সূচনা হয়েছে। যা রাজ্যগুলির ন্যায়সঙ্গত দাবিগুলি পূরণে নিশ্চিত করবে। এই লড়াই দেশে নতুন ভোরের সূচনা করছে। যা কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখবে বলেও জানিয়েছেন বিজয়ন। এদিনের এই সংগ্রাম ভারতীয় সাধারণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন বলেও উল্লেখ করেন। এদিনের বিভিন্ন প্রকল্পে দীর্ঘ দিন বকেয়া অবস্থায় পড়ে থাকা রাজ্যের ন্যায্য পাওনার হিসাবও তুলে ধরেন।   
এই সভায় বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির প্রতি মোদী সরকারে ভূমিকার প্রতি তীব্র সমালোচনা করে ইয়েচুরি বলেন, রাজ্যগুলি যাতে ভিক্ষার থালা নিয়ে কেন্দ্রের দ্বারস্থ হোক এমনই মনোভাব নিয়ে চলেছে কেন্দ্র। যা কখনই মেনে নেওয়া যায় না। এই আচরণ শুধু স্বৈরাচারী শাসনের প্রবণতাই নয়, একই সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে চাইছে মোদী সরকার। তারা একই সঙ্গে দেশের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র চরিত্রকে দ্রুত বদলে ফ্যাসিবাদী, অসহিষ্ণু হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছে। এই  কারণেই মোদী সরকারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর জায়গায় একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রকাঠামো প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে ভাষণে উল্লেখ করেন ইয়েচুরি।        
এদিনের সভায় বিরোধী শাসিত রাজ্যের নাগরিকরা কি ভারতীয় নয় বলে প্রশ্ন তোলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। তিনি বলেন মোদী সরকার কেরালা ছাড়াও অন্যান্য বিরোধী রাজ্যগুলির প্রতি তীব্র বৈষম্যমূলক আচরণ করে চলেছে। কেন্দ্রের বিরোধিতা করলেই তাঁদের প্রতিনিয়ত হ্য়রানি করা হচ্ছে। রাজ্যগুলিতে আর্থিক সঙ্কট তৈরি করে, রাজ্যপালের অসাংবিধানিক হস্তক্ষেপ এবং কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির অপপ্রয়োগের মধ্য দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তারা ন্যায্য পাওনার টাকা না দিয়ে কেরালাকে সঙ্কটের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করছে। পাঞ্জাবেও একই অবস্থা করতে চাইছে কেন্দ্র। 
কেরালার ওপর কেন্দ্রের একের পর এক আগণতান্ত্রিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হয়ে কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে বলেন মোদী সরকার কেরালা ছাড়াও তামিলনাডু, কর্ণাটক, তেলেঙ্গানার মতো বিরোধী রাজ্যগুলির প্রতি চরম অবজ্ঞা দেখিয়ে চলেছে। যে রাজ্যগুলিতে বিজেপি ক্ষমতায় নেই সেখানে কেন্দ্রীয় তহবলি থেকে অর্থ দেওয়া হচ্ছে না। মোদীর ১০ বছরের শাসনে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চরম সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে বিরোধীদের ক্ষমতাচ্যুত করতে এই সময়কালে মোট ৪১১ জন বিধায়ক মোটা টাকার বিনময়ে দল ভাঙিয়ে এনেছে।  

 

Comments :0

Login to leave a comment