Md Salim Bangladesh Mamata

‘আমলকি-ললিপপ’ একই চিত্রনাট্যে, বিপদ সাম্রাজ্যবাদ, বললেন সেলিম

রাজ্য

মঙ্গলবার মুজফ্‌ফর আহমদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে মহম্মদ সেলিম।

এবার দক্ষিণ এশিয়ায় লীলাক্ষেত্র তৈরির চেষ্টা সাম্রাজ্যবাদের। ‘ললিপপ’ আর ‘আমলকি’ একই চিত্রনাট্যের অংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির জনতার ঐক্য ভাঙার চেষ্টা হচ্ছে। পশ্চিম এশিয়াতে যা ঘটেছে তার পরবর্তী লীলাক্ষেত্র হতে চলেছে দক্ষিণ এশিয়া।
মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নে একথা বলেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। 
ঢাকায় প্রাক্তন সেনাকর্তাদের মিছিল থেকে, নিজেকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিক পরিচয় দিয়ে, কলকাতা দখলের হুমকি দিতে শোনা যায় এক বিক্ষোভকারীকে। তা নিয়েই বিধানসভায় মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন,  ‘পশ্চিমবঙ্গ বিহার ওডিশা দখল করতে এলে আমরা ললিপপ খাবো না।’ 
বাংলাদেশে বিএনপি নেতা এবং প্রাক্তন সেনাকর্তা রুহুল রিজভিকে আবার বলতে শোনা গিয়েছে, ‘উনারা ললিপপ খাবেন না আমরাও আমলকি খাব না।’
এই ঘটনাক্রম নিয়ে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয় সেলিমকে। 
সেলিম বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মধ্যে বিদেশি এজেন্সি আছে। বাংলাদেশ হোক, ভারত হোক, পাকিস্তান হোক, সব জায়গায় শাসক শ্রেণি রয়েছে, শাসক দল রয়েছে।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে ২০১২’র মে-তে দেখা করতে এসেছিলেন আমেরিকার তৎকালীন বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টন। সে প্রসঙ্গ মনে করিয়ে সেলিম বলেন, ‘‘হিলারি ক্লিনটন এমনি এমনি এ বাংলার বুকে উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। ‘‘শাসন পরিবর্তনের নামে তখন মমতা ব্যানার্জি মুখ্যমন্ত্রী হন।’’
সেলিম বলেন, ‘‘আজকে যা সিরিয়াতে হচ্ছে, লিবিয়া, মিশর, ইরাক, আফগানিস্তানে যা হয়েছে তা এমনি এমনি হয়নি। এখানে যেমন মনে করা হয় পশ্চিমী দুনিয়ায় খ্রিস্টান এবং ইসলামের মধ্যে লড়াই হচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমের দেশগুলি, আমেরিকা ইংল্যান্ড বা ফ্রান্স পশ্চিম এশিয়ায় আল কায়েদা, আইসিস’র মতো সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে সব এক লাইনে দাঁড়ায়নি?’’ সেলিম বলেন, ‘‘আমাদের এখানে এবং বাংলাদেশেও, ধর্মীয় উন্মাদনার যারা তৈরি করছে, বুঝতে হবে তাদের টিকি কোথাও ধরা আছে। এটা মমতা ব্যানার্জি বলছেন না। এটা ওই আমলকিওয়ালা আমলা বলছে না। এই ধরনের উসাকনির সংলাপ চালিয়ে এখানকার মানুষকে জাত পাত ধর্ম বর্ণ দেশের নাম করে রণংদেহী সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘ওখানকার যে সরকার বসেছে সে নির্বাচনের মাধ্যমে বসেনি। ওখানেও মৌলবাদীরা সক্রিয়। এইভাবে আন্তর্জাতিক স্তরে একই সুতোর টানে অনেককে নাচানো হয়। আমাদের কাছে একজন বাঙালি হিসেবে, পশ্চিমবঙ্গবাসী হিসেবে এটা বুঝতে হবে যে বঙ্গোপসাগর, চট্টগ্রাম, ভারতীয় উপমহাদেশ, ভারত মহাসাগর- তাকে সাম্রাজ্যবাদীদের লীলা ক্ষেত্রে তৈরি করার জন্য এই ধরনের হিন্দু এবং মুসলমানের নাম করে, জাতপাতের নাম করে, ধর্ম বর্ণের নাম করে, ভাষার নাম করে প্রেম সারছে। আসল প্রেমটা হচ্ছে, কোথাও ওয়াশিংটনের সাথে, কোথাও সৌদির সাথে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘এটা যদি আমরা না বুঝি, ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি না বুঝি, তাহলে গত ৫০ বছরে যেভাবে প্রগতিশীল শক্তি, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে নষ্ট করা হয়েছে পশ্চিম এশিয়ায়, পরিকল্পিতভাবে কখনো খুন করা হয়েছে কখনো অভ্যুত্থান করা হয়েছে, তা এখানেও হবে।’’
সেলিম বলেন, ‘‘আজকে যারা বাংলাদেশ নিয়ে চিন্তিত তারা ক’টা কথা বলেছিল নাজিবুল্লাহকে নিয়ে, তাঁকে আফগানিস্তানে মুজাহিদরা ধরে রাষ্ট্রসঙ্ঘের দপ্তর থেকে বার করে নিয়ে রাস্তায় এনে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।’’
সেলিম প্রশ্ন তোলেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিদেশনীতিতে। তিনি বলেন, ‘‘দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির গোষ্ঠী ‘সার্ক’-কে কেন ভারতের নেতৃত্বে গুলিয়ে দেওয়া হলো। কেন আজ ‘সার্ক’ নেই?’’
সেই সঙ্গেই তিনি বলেন, ‘‘কেন বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে এমন মন্তব্য করতে হচ্ছে? কেন চার মাস পর বিদেশ সচিবকে ঢাকাতে যেতে হয়েছে? কেন বিদেশ মন্ত্রীকে মালদ্বীপে যেতে হলো (বিরোধ তৈরির) কয়েক বছর পর?’’
সেলিম বলেন, ‘‘ভারত সরকারকে ও তার বিদেশনীতি সম্পর্কে, প্রতিবেশী দেশ সম্পর্কে নীতি ফিরে দেখতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোর জনতাকেও বুঝতে হবে কার সাথে এবং কার স্বার্থে এই রাজনীতি হচ্ছে।’’

Comments :0

Login to leave a comment