Md Salim

তৃণমূল তৈরি করেছে সন্দেশখালি, এখন প্রকাশ্যে ক্ষমা চান মুখ্যমন্ত্রী: সেলিম

রাজ্য

ধর্ষণের অভিযোগে সন্দেশখালির শিবু হাজরাকে গ্রেপ্তারের পরে এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে দাবি জানালেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। রবিবার আলিপুরদুয়ারে সাংবাদিক বৈঠকে এই দাবি জানিয়ে সেলিম বলেছেন, এই শিবু হাজরার অভিযোগে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে সিপিআই(এম) নেতা নিরাপদ সর্দারকে পুলিশ জেলে পুরেছে। আর শিবু হাজরাকে গ্রেপ্তারের জন্য চল্লিশ দিন ধরে লড়াই করতে হয়েছে সন্দেশখালির মানুষকে। ধর্ষণের অভিযোগে শিবু হাজরাকে গ্রেপ্তারের পরে মুখ্যমন্ত্রীর এখন প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
তৃণমূলের নেতা উত্তম সর্দারের পরে সন্দেশখালির মহিলাদের দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি এবং জেলা পরিষদের সদস্য শিবু হাজরাকে। এই প্রসঙ্গেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, এত দিন তৃণমূল বলেছিল, সন্দেশখালিতে কিছু হয়নি। এখন সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতারা ভাষণ দিতে যাওয়ার আগে ক্ষমা চান। মমতা ব্যানার্জি সারা রাজ্যে যত সন্দেশখালি তৈরি করেছেন, তার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চান। সন্দেশখালির মতো মুক্তাঞ্চল তৈরি করে তৃণমূল গরিব মানুষকে ভূমি সংস্কারে পাওয়া জমি থেকে উচ্ছেদ করেছে, ভেড়ি কেড়ে নিয়েছে। ভয় দেখিয়ে মানুষের মুখবন্ধ করতে পরিবারের মহিলাদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে। যুদ্ধের সময়ে মহিলাদের এভাবে ব্যবহার করা হয়, সন্ত্রাস সৃষ্টির জন্য নারী নির্যাতন। হাঁসখালি থেকে হাথরস, সর্বত্র একই কায়দা নেওয়া হয়েছে। বিজেপি ধর্মীয় পরিচয় দেখিয়ে অপরাধীদের আড়াল করে, অপরাধকে ধামাচাপা দেয়। তৃণমূলও এখানে অপরাধীদের আড়াল করছে। 
কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি যে তৃণমূলের এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার মনোভাব রাখে না, তার উল্লেখ করে সেলিম বলেছেন, কেন্দ্রের ইডি-সিবিআই অফিসাররা মার খাওয়ার পরে কেন্দ্রীয় সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে? শাহজাহান বাহিনীর হাতে মার খেয়েও ওরা যে সাহস দেখাতে পারে না, সন্দেশখালির মা-বোনরা সেই সাহস দেখিয়েছেন। সেই জন্যই পুলিশ সন্দেশখালির শিবু হাজরাকে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়েছে। 
বিজেপি এবং তৃণমূলের নকল লড়াইয়ের আড়ালে সেটিং স্পষ্ট করে দিয়ে সেলিম বলেছেন, গত তিন মাস ধরে অভিষেক ব্যানার্জিকে সিবিআই-ইডি আর ডাকছে না, ভাইপোকে নিয়ে শুভেন্দুও আর ঘাঁটাচ্ছেন না। কাকুর গলার স্বর ফুটে গেল, কিন্তু কেন্দ্রীয় এজেন্সি আর বিজেপি নেতারা চুপ করে গেলেন। কেন? কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্সি কিছুই করছে না। নইলে এত দিনে ভাইপোর জেলে থাকার কথা, শাহজাহানের ধরা পড়ার কথা। সেটিং তো এখন আর সিপিআই(এম)-কে বলতে হচ্ছে না, এখন তো সাধারণ মানুষ থেকে বিচারপতিরাও সবাই বলছেন। ভোটের আগে দুই পক্ষের কোমরে দড়ি পরানোর কথা, কিংবা ভাগ ভাগ বলা তো আসলে নাটকের ডায়ালগ। যে দুষ্কৃতীতন্ত্র মমতা ব্যানার্জি, শুভেন্দু অধিকারীদের হাত ধরে রাজ্যে তৈরি হয়েছে, সেই তন্ত্রের যন্ত্র হিসাবে নাটবল্টুর মতো কাজ করছে শাহজাহানরা। ২৫-৭৫ ভাগে লুটের বখরা পৌঁছে দিচ্ছে। বিজেপি’র কায়দায় হিন্দু-মুসলিম, আদিবাসী-তফসিলি এসবে মানুষকে ভাগ করলে এর বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে না, মানুষকে এককাট্টা করে লড়তে হবে। আর রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার, সাম্প্রদায়িকতায় মহিলাদের উপরে নির্যাতন সারা দেশেই বেড়েছে।
সেলিম বলেন, কেন্দ্র এবং রাজ্যের পুলিশ, এজেন্সিকে পোষা হয় কেন? সাধারণ নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য। কিন্তু তারা কেন্দ্র এবং রাজ্যের চোরদের পাহারা দিচ্ছে। তাই কোনও চোর ধরা পড়ছে না। শাহজাহান আর শিবুর মধ্যে ধর্মীয় ফারাক খুঁজলে চলবে না, দু’জনকেই ধরতে হবে। যারা বিজেপি’র সঙ্গে সেটিং করছে, তাদের ধরছে না ইডি-সিবিআই। প্রধানমন্ত্রীকে রামকে নিয়ে আসতে পারেন, আর শাহজাহানকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা কেন খুঁজে পাচ্ছেন না? অপরাধীদের এখন স্বর্গরাজ্য চলছে, শুধু দুই শাসক দলের কারও একটা ঝান্ডা ধরলেই হবে। 
এদিন আলিপুরদুয়ারে সিপিআই(এম)’র জেলা দপ্তরে পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সভা ও জেলা কমিটির বর্ধিত সভায় অংশ নেন মহম্মদ সেলিম। এরই মধ্যে সাংবাদিক বৈঠক করেন, তাঁর সঙ্গে ছিলেন পার্টির জেলা সম্পাদক কিশোর দাস এবং পার্টির নেতা অলোকেশ দাস। তারপর সন্দেশখালির ঘটনার প্রতিবাদে এবং কমরেড নিরাপদ সর্দার সহ সাজানো মামলায় ধৃত সব কমরেডের মুক্তির দাবিতে পৌরসভা থেকে বিএফ রোড ধরে আলিপুরদুয়ার চৌপতি পর্যন্ত মিছিল হয়, এতেও অংশ নেন মহম্মদ সেলিম। 
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেলিম বলেছেন, ‘‘শুধু আলিপুরদুয়ার জেলা নয়, গোটা রাজ্যে পার্টির সদস্য সংখ্যা বেড়েছে। মহিলা ও অল্পবয়সিরা বেশি সংখ্যায় আসছেন। গণসংগঠনগুলিতেও সদস্য সংখ্যা বেড়েছে। আলিপুরদুয়ারে চা বাগানের শ্রমিকরাও আসছেন। কিন্তু আমরা সন্তুষ্ট নই, আরও মানুষের কাছে পৌঁছাতে চাই। তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে সবাইকে জড়ো করছি। মানুষ বেকারত্ব, দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি, রুটিরুজির সমস্যা ইত্যাদিতে অতিষ্ঠ। তাই তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরুদ্ধে সংগ্রামে আসছেন লাল ঝান্ডা হাতে। গণসংযোগকে আরও প্রসারিত করে, মানুষকে এককাট্টা করে বিধানসভা এবং সংসদে প্রতিনিধি পৌঁছে দিতে হবে এই লড়াইয়ের। তার জন্য নির্বাচনী লড়াইয়ে বাম শক্তিকে সংহত করে বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরোধী অন্য শক্তির সঙ্গেও আমরা আলোচনা করব। ইন্ডিয়া কোনও নির্বাচনী জোট নয়। আমরা শুরু থেকেই বলেছি, একেকটা রাজ্যের পরিস্থিতি অনুযায়ী আসন সমঝোতা হবে। পশ্চিমবঙ্গেও হবে। তৃণমূল এবং বিজেপি’র বিরোধী সবাইকে একজোট করা হবে।’’ 
 

 

Comments :0

Login to leave a comment