কমিটির সভাপতি তৃণমূলের। অধিকাংশ সদস্যও তৃণমূলের। সেই কমিটি বিধানসভায় রিপোর্ট পেশ করে জানিয়েছে, রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে স্কুলগুলিতে যথেষ্ট শিক্ষক নেই। অনেক শিক্ষক পদ শূন্য। আবার মেয়েদের স্কুলগুলিতে ছাত্রী কমছে।
বিধানসভার বিদ্যালয় শিক্ষা সংক্রান্ত এই স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রধান তৃণমূলের বিধায়ক কালিপদ মণ্ডল। শ্যামপুরের এই বিধায়ক গত ৭ ডিসেম্বর স্ট্যান্ডিং কমিটির এই রিপোর্ট পেশ করেছেন। অথচ মমতা ব্যানার্জির সরকার এবারও বিধানসভায় দাবি করেছে যে, রাজ্যে স্কুলছুট কমেছে তাদের শাসনে।
রিপোর্টে ২০২১’র এপ্রিল থেকে ২০২৪’র মার্চ— এই সময়কালে রাজ্যে স্কুলগুলির অবস্থা তুলে ধরা হয়েছে। বামফ্রন্ট সরকারের সাফল্য আড়াল করার চেষ্টা চালিয়েছে স্ট্যান্ডিং কমিটি। এমন কোনও স্কুলে কমিটির সদস্যরা যাননি, যা ১৯৭৭ থেকে ২০১১’র মধ্যে তৈরি, যদিও রাজ্যের বেশিরভাগ স্কুল ওই ৩৪ বছরেই তৈরি হয়েছে।
কমিটির রিপোর্টে ‘সুপারিশ’ শিরোনামে লেখা হয়েছে, ‘‘গ্রামাঞ্চলে বিদ্যালয়গুলিতে যথেষ্ট শিক্ষক/ শিক্ষিকার অভাব রয়েছে। বিশেষ করে নিউ সেট আপ বিদ্যালয়গুলিতে, উক্ত বিদ্যালয়গুলিতে শূন্যপদ পূরণের বিষয়ে বিভাগকে সচেষ্টা হতে হবে।’’ এই ক্ষেত্রে তিনটি জেলার হাল বলা হয়েছে রিপোর্টে। পূর্ব মেদিনীপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শূন্যপদ আছে ৩৩৩৩টি। মুর্শিদাবাদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শূন্যপদ আছে ৭৪৯টি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে শূন্যপদের সংখ্যা ৫৫০৭। হাওড়া জেলায় প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শূন্য শিক্ষক পদের সংখ্যা ৪৭২৪।
উল্লেখ্য, ২০১০-১১ সালে রাজ্যে সরকারি স্কুলে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে শিক্ষক ছিলেন ৪ লক্ষ ১৪ হাজার ৭২৪ জন। এই হিসাব শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকদের ধরে। কেন্দ্রীয় সরকার দেশের স্কুলগুলির পঠনপাঠন সংক্রান্ত সাম্প্রতিক রিপোর্ট পেশ করেছে গত ডিসেম্বরে। সেই রিপোর্ট বলছে, এখন রাজ্যে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে সরকারি স্কুলে শিক্ষকদের সংখ্যা ২ লক্ষ ৭২ হাজার ৪৪৩। এর সঙ্গে প্রায় ৭৫ হাজার শিক্ষক আছেন এসএসকে, এমএসকেগুলিতে। অর্থাৎ প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণির জন্য সরকারি শিক্ষক আছেন ৩ লক্ষ ৪৭ হাজারের কাছাকাছি।
অর্থাৎ শূন্য হয়ে আছে অন্তত ৬৯ হাজার শিক্ষকপদ।
শুধু প্রাথমিক এবং উচ্চপ্রাথমিক স্তরেই নয়। রাজ্যে শিক্ষকের অভাব মাধ্যমিক স্তরেও। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সম্প্রতি জানিয়েছে যে, সব মিলিয়ে সাড়ে ৩ লক্ষ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর পদ শূন্য। যদি বা শিক্ষক থাকে, তাঁদের পড়ানো ছাড়াও নানা কাজের দায়িত্বে ব্যস্ত রাখা হচ্ছে। শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ২০০৮ সালের ১:৩৫ থেকে এখন হয়ে গিয়েছে ১:৭৩। সাম্প্রতিককালে সরকার ৮২০৭টি স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে এই স্কুলগুলিতে ৩০-এর বেশি ছাত্র-ছাত্রী নেই। এমন স্কুলের কথা স্ট্যান্ডিং কমিটিও তার রিপোর্টে জানিয়েছে।
শুধু তা নয়। কতটা অসহায় অবস্থায় আছে ছাত্র-ছাত্রীরা, তাও স্পষ্ট করা হয়েছে রিপোর্টে। লেখা হয়েছে, ‘‘জেলায় অনেক প্রাথমিক/মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্থায়ী প্রধান শিক্ষক নেই। প্রধান শিক্ষক না থাকার কারণে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজ ও পঠনপাঠনের কাজ ব্যহত হচ্ছে।’’ আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলিও এখন পর্যন্ত মেরামত করে উঠতে পারেনি সরকার। সেই বিষয়টিও স্বীকার করে রিপোর্টে হাওড়ার শ্যামপুরের একটি স্কুলের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। লেখা হয়েছে, ‘‘শ্যামপুর থানার অন্তর্গত রাধাপুর বহুমুখী বিদ্যালয়ে আমফান ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া তিনতলার উপর শেড ও ঘরগুলি মেরামত করার জন্য কমিটি সুপারিশ করছে।’’
প্রসঙ্গত, আমফান আছড়ে পড়েছিল ২০২০ সালের মে মাসে। তিন বছরের বেশি সময় পার হয়ে গিয়েছে। তবু ভাঙা স্কুলের মেরামতি হয়নি।
ছাত্রীদের সংখ্যাও রাজ্যে কমছে, তার উল্লেখ আছে রিপোর্টে। লেখা হয়েছে, ‘‘রাজ্যের অনেক বালিকা বিদ্যালয়ে ছাত্রীদের সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান। উক্ত হ্রাসমানতা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিটি বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।’’ স্ট্যান্ডিং কমিটির এই রিপোর্ট কন্যাশ্রী প্রকল্পের সাফল্যের দাবিকেই চ্যালেঞ্জ করছে।
Comments :0