Minakshi Mukherjee at Basirhat

যৌবনের সমাবেশ হাড়োয়ায়, ন্যায়ের লড়াইয়ে আহ্বান মীনাক্ষীর

রাজ্য

ছবি- হাড়োয়ার জনসভায় মিনাক্ষী মুখার্জি। ছবি: শুভজিত সাধু।

প্রবীর দাস- বসিরহাট

সন্ত্রাস থেকে বের হয়ে আসুন। শিক্ষা, কাজের দাবিতে, নতুন পশ্চিমবঙ্গ গড়ে তুলতে ৭জানুয়ারি ব্রিগেড ভরিয়ে দিন। শুক্রবার ভিড়ে ঠাসা হাড়োয়া, বাদুড়িয়ার কাটিয়াহাটের জনসভায় আসা মানুষের উদ্দেশ্যে এমনই দৃপ্ত আহ্বান জানালেন ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি। ৫০দিন ধরে ইনসাফ যাত্রায় মানুষকে কথা দিয়েছি, জানকবুল লড়াইয়ের শপথ নিতেই ব্রিগেড সমাবেশ। একথাও এদিন তিনি বলেন। 
৭ জানুয়ারি যৌবনের ডাকে জনগণের ব্রিগেড সমাবেশ সফল করে তুলতে এদিন হাড়োয়ায় জনসভা, বসিরহাটে মশাল মিছিল, বাদুড়িয়ার কাটিয়াহাটে জনসভা হয়। জনসভা, মিছিল থেকে আওয়াজ ওঠে, বাংলার অতীত ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনো। জীবন-জীবিকার লড়াই দৃঢ় করো। যৌবনের বুকে আগুন ধরিয়ে কেন্দ্র থেকে বিজেপি’কে, রাজ্য থেকে তৃণমূলকে উৎখাত করতে ঐতিহাসিক ব্রিগেড রচনা করো। 
এদিন ডিওয়াইএফআই হাড়োয়া লোকাল কমিটির আয়োজনে হাড়োয়া ফেরিঘাট অটোস্ট্যান্ডে এদিনের সভায় সভাপতিত্ব করেন মহম্মদ নাজিব। কাটিয়াহাটের সভায় সভাপতিত্ব করেন ঋত্বিক বিশ্বাস। উভয় সভায় মীনাক্ষী মুখার্জি ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সফিকুল সরদার, উত্তর ২৪পরগনা জেলা সম্পাদক সপ্তর্ষি দেব, আশরাফুল আমিন, শৌভিক মণ্ডল ও ছাত্রনেত্রী সোনালি মজুমদার। শুরুতে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন গণশিল্পী সৌমেন রায় এবং হাড়োয়া আকরিক চক্র। অন্যদিকে, এদিন সংগঠনের বসিরহাট দক্ষিণ-১ও ২লোকাল কমিটির আহ্বানে মশাল মিছিল হয় বসিরহাট কলেজ সংলগ্ন এলাকা থেকে। উৎসাহে উদ্বেলিত চোয়াল শক্ত করা মিছিল টাকী রোড পেরিয়ে ইটিন্ডা রোড ধরে ৩কিমি পথ পায়ে পা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লাল সাদা বেলুন, সংগঠনের শ্বেত পতাকায় সজ্জিত যৌবনের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে ইছামতি ব্রিজ সংলগ্ন বসিরহাট বোটঘাটে। মিছিলে ছিলেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা রাজীব বিশ্বাস, রাজু আহমেদ, প্রতাপ নাথ সহ অন্যান্য যুব নেতৃবৃন্দ। বোটঘাটে মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সভায় মীনাক্ষী বলেন, তৃণমূলের দাদাগিরি আর চলবে না। এদিনের এই সংক্ষিপ্ত সভা মঞ্চে সংগঠনের তহবিলে পাঁচ হাজার টাকা মীনাক্ষী মুখার্জির হাতে তুলে দেন গ্রন্হাগার আন্দোলনের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী তাপস প্রধান।
২০১১ সালের পর থেকে এখানে শাসকদলের আইনই আইন। আইনের শাসন কার্যত এখানে মৃত। এহেন সন্ত্রাসের আঁতুরঘর হাড়োয়ায় বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সন্ত্রাস ভয় ভীতি উপেক্ষা করে কূল ছাপানো জনসভায় মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, হক বুঝে নিতে সমস্ত অন্যায়ের জবাব চাইতে ইনসাফ যাত্রা চলবে।
 


মীনাক্ষী মুখার্জি এদিন বলেন, রাজ্যের মানুষ ভালো নেই। সর্বত্র লুট চলছে। চাকরি চুরি হচ্ছে। রেশনের চাল মিড-ডে-মিলে শিশুদের চাল চুরি করছে। হাসপাতালের রোগীদের চাল, তাও চুরি করে খেয়েছে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বাকিবুররা। ৩৬মাস ধরে ২৬লক্ষ ভুয়ো রেশন কার্ড তৈরি করে মাথাপিছু ৫কেজি করে চাল ৪০টাকা দরে বাজারে বিক্রি করেছে। এই চাল কার? আমার আপনার পেটের অন্ন চুরি করেছে। মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, রাজ্যে ২১হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ৮৪লক্ষ ভুয়ো জবকার্ড তৈরি করে কোটি কোটি টাকা চুরি করে খেয়েছে তৃণমূলের ছোট, বড়, মাঝারি নেতারা। আপনারা কী পেলেন? গ্রামে কাজ না পেয়ে ভিনরাজ্যে চলে যেতে হচ্ছে আপনাদের। এই উত্তর ২৪পরগনা থেকে সবথেকে বেশি পরিযায়ী শ্রমিক অন্য রাজ্যে চলে গেছে।
‘দুয়ারে সরকার’ নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, কতবার করে আপনাদের দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে যেতে হচ্ছে? কটাক্ষের সুরে বলেন আসলে সবটাই ভাঁওতা। এই ভাঁওতাবাজি, দুর্নীতি, চুরির জবাব চাইতে হবে। মার খেতে জানি। মাথা ফাটিয়ে স্টিচের যণ্ত্রণা জানি। থানায় বসিয়ে রেখে বাবা মায়ের নামে গাল দেওয়া জানি। বিনা অপরাধে জেল খাটতে হয় তাও জানি। জানি না খুনি চোরদের ক্ষমা করতে। জনসভায় আসা যৌবনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, লুটতরাজ, বিভাজনের বিরুদ্ধে জোর লড়াই শুরু হয়েছে। এই লড়াই জিততে হবে। চাই একতার লড়াই, বন্ধুত্বের লড়াই, বিশ্বাসের লড়াই। ৫০ দিনের ইনসাফ যাত্রায় লক্ষ লক্ষ মানুষের উষ্ণ অভিবাদন অফুরন্ত ভালোবাসা সাহস বাড়িয়ে দিয়েছে। শহীদ মইদুল মিদ্দা, আনিস খানদের মৃত্যু বিফলে যাবে না। শহীদ ক্ষুদিরাম বসু, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর বাংলা। সব হিসাব পাই টু পাই বুঝে নিতে হবে। ভগৎ সিং বলতেন, কে শাসন করল সেটা বড় কথা নয়, আমার থালায় রুটি পেঁয়াজ আছে কিনা সেটাই বড় কথা। জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া। কৃষক ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। খেতমজুরের মজুরি বাড়ে না। অসহনীয় এই অবস্থা থেকে মুক্তি চাই। বসিরহাট মহকুমার গ্রামে গ্রামে কাজের দাবিতে আবাস যোজনায় ঘরের দাবিতে জাত ধর্ম বর্ণের নামে বিভেদের বিরুদ্ধে জান কবুল লড়াইয়ের আরও একবার আহ্বান জানিয়ে ভয়কে জয় করে মনে সাহস জোগাতে মীনাক্ষী মুখার্জি শোলে ছায়াছবিতে গব্বর সিংয়ের সেই বিখ্যাত ডায়ালগ উল্লেখ করে বলেন, ‘যো ডর গয়া, সমঝো ও মর গয়া’।

Comments :0

Login to leave a comment