সোমবার রাঁচির শহীদ ময়দানে সমাবেশে ভাষণে এই লক্ষ্য জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। আপাতত ঝাড়খণ্ডে রয়েছে কংগ্রেসের ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’। যাত্রাপথের সভা থেকে এমনটা বলেছেন রাহুল।
রাহুল বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নিজেকে অন্য অনগ্রসর অংশ (ওবিসি) বলে দাবি করতেন ভোটের দিকে তাকিয়ে। কিন্তু যখন ওবিসি’দের প্রকৃত সংখ্যা জানার দাবিতে আমরা জাতভিত্তিক জনগণনার ডাক দিলাম, তখন তিনি বলতে শুরু করলেন-দেশে কেবলমাত্র ২টি জাতি। ধনী এবং গরীব।’’
সোমবার ঝাড়খণ্ডের রাঁচির সভা থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করে এই মন্তব্য করেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
তার ঘন্টাখানেকের মধ্যে সংসদ ভাষণে নাম করে রাহুল এবং কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেন নরেন্দ্র মোদী। অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট অধিবেশনের রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার উপর ধন্যবাদ সূচক ভাষণের সময় প্রধানমন্ত্রী লোকসভায় নিজেকে দেখিয়ে বলেছেন, ‘‘বিরোধীরা দেখতে পাচ্ছেন না দেশের সব থেকে বড় ওবিসি’কে? তাঁরা মানুষে মানুষে ভাগ করার জন্য সমীক্ষা করার কথা বলছেন। আমরা বলছি, দেশের সবথেকে বড় চারটি জাতি হলেন গরিব মানুষ, মহিলা, কৃষক এবং যুব সম্প্রদায়।’’
রাহুল গান্ধীর বক্তব্য এবং তার পালটা নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট, জাতভিত্তিক জনগণনার দাবিকে ঘিরে সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিজেপি।
যদিও মোদীর বক্তব্যের আগেই যেন রাহুল গান্ধী আগাম আঁচ করে নিয়েছিলেন, কি বলতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। সেই অঙ্ক মিলে গিয়েছে এদিন। রাঁচীর শহীদ ময়দানের সভায় রাহুল বলেছেন, ‘‘নির্বাচনে ভোট চাওয়ার সময় নরেন্দ্র মোদী নিজেকে ওবিসি বলে দাবি করেন। কিন্তু যখনই ওবিসি, দলিত কিংবা আদিবাদী মানুষকে অধিকার দেওয়ার প্রশ্ন আসে, তখন তিনি বলতে শুরু করেন দেশে এই ধরনের কোনও জাত নেই।’’
বস্তুত এদিনও লোকসভায় বিরোধীদের উদ্দেশ্যে মোদী বলেছেন, দেশকে ভাগ করার চেষ্টা হচ্ছে। জাতভিত্তিক জনগণনার দাবি উঠলেই এই ভাষণ দিয়ে চলেছেন মোদী।
সভা থেকে রাহুল প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ‘‘২০২৪’র লোকসভা নির্বাচন ইন্ডিয়া বিন্যাস জিতলে দেশজুড়ে জাতভিত্তিক জনগণনা করা হবে। বর্তমানে সংরক্ষণের ক্ষেত্রে উর্ধসীমা ৫০ শতাংশ। আমরা সেই ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেব।’’
রাহুলের যুক্তি, ‘‘দেশের কেউ জানেনা ওবিসি, তপশিলি জাতি, এবং আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের প্রকৃত সংখ্যা। আমাদের ধারণা দেশের অন্ততপক্ষে ৫০ শতাংশ মানুষ ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত।’’
গান্ধী বলেছেন,‘‘দেশের দলিত, আদিবাসী এবং ওবিসি’দের সঙ্গে দাস শ্রমিকের মত আচরণ করা হয়। বড় সংস্থাগুলি, হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, আদালতে এই অংশের মানুষের কোনও প্রতিনিধিত্ব নেই। সরকারের ৯০ জন সেক্রেটারি পদে মাত্র ৩জন ওবিসি সম্প্রদায়ের মানুষ।’’
রাহুল জানিয়েছেন, ‘‘তেলেঙ্গানার রেভন্ত রেড্ডি সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল রাজ্যে জাতভিত্তিক জনগণনা করার। তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, তেলেঙ্গানায় ইতিমধ্যেই জনগণনার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই রাজ্যের মানুষ জানতে পারবেন মোট জনসংখ্যায় কোন সম্প্রদায়ের কত শতাংশ অংশীদারিত্ব।’’
ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, হিন্দুত্ববাদ বর্ণবাদের সব থেকে বড় সমর্থক। আরএসএসের শীর্ষপদে তথাকথিত উঁচু জাতের মানুষ ছাড়া কেউ বসেননি আজ অবধি। আদর্শগত ভাবে আরএসএস এবং বিজেপি জাতভিত্তিক জনগণনার বিরোধী। মূলত জাতভিত্তিক জনগণনার দাবিকে নস্যৎ করার জন্য আরএসএস হিন্দুত্বের উগ্রতাকে আরও বাড়াতে চায়। সেখানে তথাকথিত নিচু জাতের মানুষকে বোঝানো হচ্ছে, ‘‘তোমার সবথেকে বড় পরিচয় তুমি হিন্দু’’।
বিরোধীরা বলছেন, অধিকারের বেলায় বঞ্চিত রাখা হচ্ছে ঐতহাসিকভাবে সামাজিক বঞ্চনার শিকার বিপুল অংশকে।
Comments :0