Chandigarh

চণ্ডীগড়ের মেয়র নির্বাচনে খুন করা হয়েছে গণতন্ত্রকে

জাতীয়

 চণ্ডীগড়ের মেয়র নির্বাচনে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছে, স্পষ্ট জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। ওই নির্বাচনে কারচুপি করে জিতে সুপ্রিম কোর্টে সোমবার এমনই কড়া সমালোচনার মুখে পড়ল মোদী-শাহর বিজেপি। শুধু সমালোচনা নয়, ওই নির্বাচনের ভিডিও দেখে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ এদিন যে ভাষায় কেন্দ্রের শাসক দল নিয়ন্ত্রিত চণ্ডীগড়ের প্রশাসনকে তুলোধনা করেছে, তাতে সুপ্রিম কোর্ট কার্যত বিজেপি-কেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। এ‍‌ই সঙ্গেই প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ বলেছে, স্পষ্টই মেয়র নির্বাচনের প্রিসাইডিং অফিসার অনিল মসিহ ব্যালট পেপারকে বিকৃত করেছেন। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল চণ্ডীগড়ের ডেপুটি কমিশনারকে এদিনই বিকেল ৫টার মধ্যে ওই নির্বাচনের ব্যালট সহ সমস্ত কাগজপত্র ও ভিডিও পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশও দেয় বেঞ্চ। 
চণ্ডীগড় পৌর নিগমে মেয়র নির্বাচন ছিল গত ৩০ জানুয়ারি। নির্বাচনে আপ-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী কুলদীপ কুমার ২০টি ভোট পান, বিপক্ষের প্রার্থী বিজেপি’র মনোজ সোনকর পান ১৬টি ভোট। কিন্তু নিজেই আপ-কংগ্রেস জোটের কাউন্সিলরদের ৮টি ব্যালটে কালির দাগ দিয়ে সেগুলিকে বাতিল করে দেন মেয়র নির্বাচনের প্রিসাইডিং অফিসার অনিল মসিহ, বিজয়ী বলে ঘোষণা করেন সোনকরকে। ভিডিওতে ধরা পড়ে যায় তাঁর এই কুকীর্তি। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়ে সোস্যাল মিডিয়া সহ ডিজিটাল মাধ্যমে। পরের দিনই ওই নির্বাচন বাতিলের আরজি নিয়ে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে গিয়েছিলেন আপ-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী কুলদীপ কুমার। কিন্তু হাইকোর্ট তাঁর আবেদনে সাড়া না দিয়ে তিন সপ্তাহ পরে শুনানি হবে বলে জানায়। হাইকোর্টের সেই অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছেন কুলদীপ কুমার। এদিন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে তার প্রথম শুনানি হয়। সেই শুনানিতে বেঞ্চকে ওই নির্বাচনের ভিডিও দেখান কুলদীপ কুমারের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি।    
সেই ভিডিও দেখেই ক্ষোভে ফেটে পড়ে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় খোলাখুলি বলেন, এভাবে গণতন্ত্রকে হত্যা করতে দেওয়া যেতে পারে না। যা হয়েছে, তা গণতন্ত্রের প্রহসন। এই দেশের স্থিতিশীলতার বড় শক্তিই হলো নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা। দেখাই যাচ্ছে, প্রিসাইডিং অফিসার ব্যালট পেপার বিকৃত করেছেন। এই ব্যক্তির বিচার হওয়া উচিত। তিনি বলেই বসেন, প্রিসাইডিং অফিসারের আচরণ দেখে আদালত আতঙ্কিত। তিনি কেন ক্যামেরার দিকে তা‍‌কিয়ে পলাতক ব্যক্তির মতো দৌড়চ্ছেন? আদালতে উপস্থিত চণ্ডীগড় প্রশাসনের আইনজীবী তথা কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার উদ্দেশে তি‍‌নি বলেন, ‘‘ওনাকে বলে দেবেন, সুপ্রিম কোর্ট ওনাকে নজরে রাখছে।’’ শুনানিতে মেহতা একবার বলার চেষ্টা করেন, ভিডিওতে একপক্ষের ছবি রয়েছে। সমস্ত নথি দেখে আদালতের সুসংহত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। শীর্ষ আদালতের বেঞ্চ একরকম উড়িয়ে দেয় অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলের বক্তব্যকে। প্রধান বিচারপতি সোজাসুজি বলেন, একটি যথাযথ অন্তর্বর্তী নির্দেশের প্রয়োজন ছিল, যা দিতে ব্যর্থ হয়েছে হাইকোর্ট। স্পষ্টতই পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টও এদিন শীর্ষ আদালতের তোপের মুখে পড়েছে চণ্ডীগড়ের মেয়র নির্বাচন নিয়ে। আগামী বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) চণ্ডীগড় পৌর নিগমে কাউন্সিলরদের যে বৈঠক ডাকা হয়েছিল, তাও স্থগিত করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ সেদিন মেয়র নির্বাচনের প্রিসাইডিং অফিসার অনিল মসিহকে আদালতে হাজির হয়ে নিজের ভূমিকা ব্যাখ্যা করার নির্দেশও দিয়েছে। প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বেঞ্চে ছিলেন দুই বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং মনোজ মিশ্র।
এদিকে এদিন চণ্ডীগড়ে পৌর নিগমের দপ্তরের সামনে মেয়র নির্বাচনে বিজেপি’র রিগিংয়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখিয়েছে আপ। দলের কাউন্সিলর ও কর্মীরা সেখানে জমায়েত হয়ে দপ্তরে ঢুকতে যান। তখন পুলিশ দিয়ে তাঁদের হটিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাঁরা দপ্তরের সামনে অনশনে বসলে পুলিশ তাঁদের আটক করে। এই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে আপ’র নেতা-কর্মীদের বচসা ও ধস্তাধস্তি হয়। আপ এবং কংগ্রেস দুই দলের তরফেই এদিন সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণকে সামনে রেখে কড়া ভাষায় কটাক্ষ করা হয়েছে বিজেপি’র। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নয়াদিল্লিতে বলেছেন, জনগণের কণ্ঠস্বর দমন করতে বিজেপি যে গণতন্ত্রকে দুরমুশ করছে, এখন তা দেশের মানুষের সামনে পরিষ্কার হয়ে গেল। জনগণই এর উপযুক্ত জবাব দেবেন। আপ’র পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, বিজেপি’র মুখে গণতন্ত্র কথাটাই মানায় না। এদিন তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে শীর্ষ আদালতে। সোস্যাল মিডিয়ায় এই অভিমতও উঠে এসেছে যে, এদিন যে ভাষায় শীর্ষ আদালত ওই নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে‍‌ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে, তারপরে মেয়রের পদে বসে না থেকে ইস্তফা দেওয়া উচিত বিজেপি’র মনোজ সোনকরের। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এই মেয়র পদ পিছনের দরজা দিয়ে দখল করতে গিয়ে মোদী-শাহর মুখ পুড়ল বলেও কটাক্ষ করেছেন কেউ কেউ। সোস্যাল মিডিয়ায় ‌এমন মন্তব্যও ভেসে এসেছে যে, সুপ্রিম কোর্ট আসলে বুঝিয়ে দিল, বিজেপি গণতন্ত্র মানে না।

Comments :0

Login to leave a comment