প্রবন্ধ
আমার সন্তান যেন
কৃশানু ভট্টাচার্য
মুক্তধারা
গ্রামের মাঝে বট অশত্থর যুগলবন্দীতে সুতো বেঁধে রাখছেন মা। আবার শহরে বহুতলের ঠাকুর ঘরের কোনায় একটা বটের ডাল আর একটা অশত্থের ডালে সুতো পাচ্ছেন আরেক মা। উদ্দেশ্য একটাই। যে সন্তানকে হাতের কাছে পেলেন না, যে সন্তানের এখনকার ঠিকানা কেন্টাকি কিংবা পেনসিলভানিয়া , কিংবা রিয়াধ, আবুধাবি , কিংবা কেরল কিংবা তামিলনাড়ু, তাদের সবার জন্যই আজকের এই অরণ্য ষষ্ঠীর ব্রত উদযাপন। ব্রত উদযাপন যেকোনো ধরনের শারীরিক মানসিক প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও যেন তারা সুখে থাকে, আনন্দে থাকে , শান্তিতে থাকে।
ভারতীয় লোকাচারে, ষষ্ঠী দেবী নিঃসন্দেহে সন্তানের মঙ্গল কামনার জন্য বারে বারে পূজিত হন। দেশের নানা প্রান্তে নানা নামে তিনি বছরের বিশেষ বিশেষ দিনে পূজা পেয়ে থাকেন। সন্তান যেন সুখে থাকে সে কারণে মায়েরা তাদের নিজেদের মতো করে ষষ্ঠী দেবীর আরাধনা করেন। এই বাংলায় মঙ্গল কাব্যের যুগ থেকে জৈষ্ঠ মাসের শুক্লাপক্ষে ষষ্ঠী তিথির এই দিনটি অরণ্য ষষ্ঠী বা জামাই ষষ্ঠী নামে পরিচিত।।
হঠাৎ করে জামাই প্রসঙ্গ কেন? কারণ কেউ কেউ বলেন কন্যা সন্তান এবং পুত্র সন্তান দুই তো মায়ের বড় প্রিয়। এই সুযোগে বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েটাকে তো মা দেখতে পায়। আর সে কারণেই জামাইকে আদর করে আপ্যায়ন করা, জামাইকে পুত্র স্নেহে কাছে নিয়ে আসা, পরিবারের গণ্ডি টাকে আরেকটু বিস্তৃত করা এবং সর্বোপরি একটা আনন্দের বাতাবরণে নানা প্রতিকূলতায় জর্জরিত এই জীবনটাকে অন্যভাবে দেখা। এটাই সন্তান মঙ্গল কামনার আরাধনা কে সামাজিক উৎসবের আঙিনায় নিয়ে আসে। তৈরি করে এক মধুর বাতাবরণ , জন্ম দেয় বহু নতুন সম্পর্কের।
আজকের ভারত বর্ষে, গ্রাম থেকে শহর থেকে উধাও হয় ষষ্ঠী তলা। বট অশত্থর যুগলবন্দী জায়গায় গড়ে ওঠে বহুতল। কাগজে-কলমে থেকে যায় এই বাংলার ষষ্ঠী তলা। আর তাই নাগরিক জীবনের গতানুগতিক ছন্দে আপস করতে করতে মানুষ খুঁজে নেয় বিকল্প। বটের ডাল আর অশত্থের ডাল। কিন্তু বদলায় না প্রীতি ও আনন্দের বাতাবরণ।
সেখানেও তো এসেছে, আর্থিক অনিশ্চয়তার কালো মেঘ। সন্তান যখন নিজেকে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য নিতান্ত বাধ্য হয়ে দেশ ছাড়ে মা তখনও সেই সন্তানের মঙ্গল কামনায় প্রতিদিন প্রতিমুহূর্ত দিনাতিপাত করেন। অরণ্য ষষ্ঠীর দিনে তাই মা আবার ওই গাছের গোড়ায় জল ঢালেন। মনে মনে বলেন, "আমার সন্তান যেন থাকতে দুধে ভাতে"।
{ad
Comments :0