STORY \ MRIDUL PAL \ SHABDASAN \ MUKTADHARA \ 16 DECEMBER 2024

গল্প \ অহিংস্র শ্বাপদ — মৃদুল পাল \ মুক্তধারা \ ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

সাহিত্যের পাতা

STORY  MRIDUL PAL  SHABDASAN   MUKTADHARA  16 DECEMBER 2024

গল্প

অহিংস্র শ্বাপদ
মৃদুল পাল

মুক্তধারা

কালীপূজোর রাত।সূর্য অস্ত,চন্দ্র নিরুদ্দেশ, তবুও এতো আলো,এতো শব্দ উল্লাস।হাজারো বাজির মিলিত শব্দ একত্রে,নিকষ কালো কোলকাতাকে ঢেকে দিয়েছে আলোর ছাতার মতন। 
রাতের খাবার নিয়ে শীর্ষ রুমে ফিরছে।গেটের হুড়কো খুলে শীর্ষ ফ্ল‍্যাটের দিকে পা বাড়ায়। ঠিক সেসময় ঈষদুন্মুক্ত গেটের ভেতর দিয়ে পাড়ার রাস্তাবাসী একটি কুকুর কাঁপতে কাঁপতে শীর্ষদের আবাসন চত্বরে ঢুকে পড়ল।
:কি রে কাঁপচ্ছিস কেনো?তোর আবার জন্ডিস টন্ডিশ হয়নিতো?-শীর্ষ কুকুরটিকে জিজ্ঞেস করলো।
কুকুরটি ফ‍্যালাফ‍্যালা দৃষ্টিতে শীর্ষের দিকে তাকিয়ে রইল।
শীর্ষের ফ্ল‍্যাটটি নীচের তলায়।সে দরজার তালা খোলার জন‍্য উদ‍্যত।কুকুরটি শীর্ষের পায়ের কাছে ঘুরপাক খেতে থাকে।কুকুরটি তার পরিচিত।একটু আধটু সখ‍্যতাও রয়েছে।গংগা জলকে যেমন হিন্দুরা পবিত্র মনে করে,কিন্তু পান করতে চায়না,ঠিক তেমনি শীর্ষ ওকে আদর করে চোখে চোখে,কিন্ত স্পর্শ করে না।ঘরের দর্জা খুলতে না খুলতেই কুকুরটি অতর্কিতে ঘরের ভেতর ঢুকে গেল।শীর্ষ কিছুই আন্দাজ করে উঠতে পারল না।এর আগেও দর্জার সামনে এসে কুকুরটি ঘরের ভেতর উকি মারত।শীর্ষ ভাবল আজো উকি মেরে কুকুরটি চটপটাং হয়ে যাবে।কিন্ত সে যে এক্কেবারে ঘরের ভেতর ঢোকে লেজের বিড়ে পাকিয়ে বসে পরবে এটা শীর্ষের কল্পনাগম‍্য হয়নি।
বাইড়ে তখনো দুমদাম বাজি ফুটছে।শীর্ষ এবার বুঝতে পারলো কেন কুকুরটি দুম করে ঘরে ঢোকে পড়লো?প্রথমে সে তার স্বভাবসিদ্ধ আদুরে ভংগিতে কুকুরটিকে বাইড়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন‍্য যাঞ্চা  করে।কিন্ত কুকুরটি  ঘরের ভেতর ছোটাছুটি করতে লাগলো।বিছানার নিচে সে উবু হয়ে বসে।শীর্ষ কি করবে কি করবে না কিছুই ঠাওর করতে না পেরে একটি বোতল থেকে এক গন্ডোষ জল হাতের মুঠোয় নিয়ে কুকুরটির গায়ে ছুড়ে।এতে কুকুরটির শরীরে কোনো অভিব‍্যক্তির সঞ্চার হইল না।এবার শীর্ষ ফ্রিজের পেছন থেকে একটি লাঠি বের করে এনে কুকুরটির শরীরে  গুতো দেয়।
-বের হ,বের হ বলছি।
কুকুরটি কেঁ কেঁ স্বরে চিৎকার করে বিছানার নিচ থেকে বেড়িয়ে রান্না ঘরের দিকে গিয়ে শরীর ঝাঁকাতে থাকে।তার শরীর থেকে জলবিন্দু আশে পাশের আসবাবপত্রে ছিটকে পড়ে। এই দেখে শীর্ষের পায়ের রক্ত মাথায় উঠল।এমনিতে শীর্ষের শুচিবায়ুর বেরাম নেই,কিন্ত রাস্তার কুকুরের শরীরের লোম,ক্ষতিকারক অণুজীবের স্পর্শে তার রান্নাঘর অশুচি হবে।খাবারের পাত্র নোংরাক্রান্ত হবে।ক্রোধোন্মোত্ত শীর্ষ এইবার কুকুরটিকে বকা ধকা করতে থাকে।একটি প্লাষ্টিকের চেয়ার হাতে তুলে মাটিতে আছার মারল।এতেও কুকুরটির মনে কোনো ভয়ের সঞ্চার হইল না।সে বাইড়ে যাওয়ার বদলে ঘরের ভেতরেই ঝান্ডা গেড়ে বসে রইল।মিষ্টি কথা,গায়ের জোর এসব যখন ব‍্যর্থ হয়,তখন মগজাস্ত্রে শাণ দিতে হয়।শীর্ষ ভাবতে থাকে,কিভাবে কুকুরটিকে তাড়ানো  যায়?তক্ষনেই সে একটা উপায়ের কথা ভাবলো।যদিও ব‍্যাপারটা খুবেই বিপদজনক।কিন্ত এছাড়াএমন একটা বিদঘুটে পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ লাভের কোনো উপায় নেই।অন‍্যদের মতন কুকুরকে জাপটে ধরে বাইড়ে ফিক্কা মারার সাহসো তার নেই।যদি কুকুর কামড়ে দেয়?তাহলে এই মুদ্রাস্ফীতির বাজারে আবার দু-তিন হাজার টাকার দন্ডি।
প্রায় বছর খানেক আগেই চম্পাহাটী থেকে সে কিছু বাজি কিনেছিলো।হকি বিশ্বকাপে ভারত জিতলে উল্লাস করবে বলে।কিন্ত ভারত জিতেওনি,আর সেই বাজি ফুটেওনি।বাজির প‍্যাকেট থেকে একটি বাজিতে আগুন ধরিয়ে সে কুকুরটির গায়ে ছুঁড়ে মারে।এক দু ছেকেন্ড পর  প্রচণ্ড শব্দ করে বাজিটি ফুটে।ঘরের ভেতর ধোঁয়াশা, বাতাসে বেরিয়াম নাইট্রেটের গন্ধ,বিস্ফোরণের কম্পনে  খালি জলের বোতলটি টেবিল হইতে নিচে পড়ে যায়।শীর্ষ চোখ মুখ কাচু মাচু করে  কুকুরটিকে খুঁজতে থাকে।কুকুরটি এক অদ্ভুত চিতকার করে।বাজির শব্দে তার হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যায়।কিছুক্ষণ মরণকাতর চেঁচামেচি করার পর তার প্রাণবায়ু বাজির ধোঁয়ার সাথে মিশে যায়।সমগ্র ঘর গন্ধে ভরে উঠল।মৃত্যুর।

Comments :0

Login to leave a comment