গল্প
জল
সৌরীশ মিশ্র
নতুনপাতা
মহীতোষ স্যারের বাড়ি থেকে প'ড়ে যখন বেরোলো ব্রত আজ, তখন সন্ধ্যে সাড়ে সাতটা প্রায়। মহীতোষবাবু অঙ্ক করান ওকে। সপ্তাহে দু'দিন ব্রত পড়তে আসে ওনার কাছে। ব্রতকে একাই পড়ান উনি।
"সাবধানে যাস ব্রত। বাড়ি পৌঁছে একটা ফোন করে দিস আমায়।" বারান্দায় দাঁড়িয়ে বলেন মহীতোষ সান্যাল।
"ঠিক আছে স্যার।"
বাড়ির মেন গেট দিয়ে বেড়িয়ে রাস্তা ধ'রে হাটতে শুরু করে ব্রত।
ব্রতদের বাড়ি খুব একটা দূরে নয় মহীতোষবাবুর বাড়ি থেকে। মিনিট দশেকের মতোন হাঁটা পথ মোটে।
ঠান্ডা বেশ ভালোই ঠাওর হচ্ছে গত ক'দিন ধরে। গায়ের জ্যাকেটের হুড-টা মাথায় টেনে নিল ব্রত। ব্রতর বেশ লাগছে এই ঠান্ডা-ঠান্ডা আবহাওয়াটায় হাঁটতে। শীত ভীষণই প্রিয় ঋতু ব্রতর।
রাস্তায় লোকজন কম আজ কেন জানি! এবার বড় রাস্তা ছেড়ে বাঁদিকে বাঁক নিয়ে ওদের পাড়ায় ঢোকার গলিটা ধরে ব্রত। আর, তখনই ব্যাপারটা চোখে পড়ল তার।
ওদের পাড়ার গলিটায় ঢুকে ডানদিকে যে কলটা আছে তা দিয়ে হুড়হুড় করে জল পড়ে যাচ্ছে।
এতো জল নষ্ট হচ্ছে দেখে ব্রত আর এক মুহূর্তও দেরী করে না। দ্রুত গিয়ে কলটা বন্ধ করে সে। জল পড়া বন্ধ হয়ে যায় সাথে সাথেই।
ঠিক তখনই, ওর পিছনে একটা পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনতে পায় ব্রত। "কি করছিস রে ব্রত?"
ব্রত ঘুরে দেখে ওদের পাশের বাড়ির নরেশ জ্যেঠু দাঁড়িয়ে। কাঁধে অফিসের ব্যাগ।
"কলটা থেকে জল পড়ে যাচ্ছিল জ্যেঠু। কেউ বোধহয় জল খেয়ে আর বন্ধ করে নি। তাই আমি বন্ধ করে দিলাম।"
"বাঃ। ভেরি গুড। এই তো চাই। খুব ভাল লাগছে জানিস ব্রত এই দেখে যে তুই এইটুকু বয়সেই জলের অপচয় করতে নেই এটা বুঝে গেছিস। কিন্তু, আনফরচুনেট ব্যাপারটা কি জানিস আমার বয়সীও অনেকেই এই ব্যাপারটাকে গুরুত্ব দেয় না। তাই, শাবাশ ব্রত।"
নিজের প্রশংসা শুনতে কেমন যেন লজ্জা লজ্জা করছিল ব্রতর। সে তাই বললে, "আমি যাই তবে জ্যেঠু?"
"সে কি রে, তুই একা যাবি কি! আমি বাড়ি যাব না! এখানেই থাকব নাকি সারা রাত!"
নরেশ জ্যেঠুর কথা শুনে মজা পায় ব্রত। হেসে ফেলে সে। নরেশ রায়েরও মোটা গোঁফের নিচে হাসি।
নরেশবাবু আর ব্রত দু'জনই পাশাপাশি আস্তে আস্তে হাঁটতে হাঁটতে, গল্প করতে করতে, হেমন্তের হালকা কুয়াশায় মোড়া, স্ট্রিট-লাইটের আবছা আলোয় আলোকিত ওদের পাড়ার গলিটা ধরে এগিয়ে চলল।
Comments :0