Boroli fish

তিস্তা-তোর্ষায় বাড়ন্ত বোরোলি মাছ

জেলা

বাঙালীরা বলেন, মাছের রাজা ইলিশ কিন্তু কোচবিহার বা উত্তরবঙ্গে পর্যটকেরা এলেই তাঁরা বলেন, যাই বলো ভাই মাছের রাজা বোরোলি।
ইন্দিরাগান্ধী থেকে জ্যোতি বসু এমন কি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রত্যেকেরই ভালো লাগা মাছের নাম বোরেলি। খাবারের পাতে ইলিশকে অনায়াসে টেক্কা দিতে পারে বোরোলি এমন মনে করতেন রাষ্ট্রপতি প্রনব মুখার্জিও। সেই বোরোলি মাছ এখন বাড়ন্ত তোর্ষা ও তিস্তায়! পরিবেশবিদরা এর জন্য নদী দূষণকেই দায়ী করছেন।
বোরোলি মাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম ব্যারিলিয়াস ব্যারিলা। এই মাছ পাহাড়ি খরস্রোতা নদীতে থাকতে ও বংশবিস্তার করে। বোরোলি লম্বায় সাড়ে তিন থেকে চার ইঞ্চি সাইজের হয়। সাদা আঁশ যুক্ত চকচকে রুপোলি এই মাছ জল থেকে উঠলেই মারা যায়। রুপোলী রঙের জন্য এই মাছকে আদর করে 'রুপোলী শস্য' নামেও ডাকেন অনেকে।
বোরোলির খ্যাতি যখন দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছে তখনই জেলের জালে বোরোলি ধরা পড়ছে না আগের মত। শীতের মরশুমে জঙ্গলে কিংবা পাহাড়ে ঘুরতে এসে পর্যটকেরা এসে বোরোলি খুঁজলেও হোটেল আর হোমস্টে-র মালিকরা বলছেন যে সব দিতে পারবো তবে বোরোলি পাতে দিতে পারবো কী না কথা দিতে পারছি না।
বোরোলি মূলত তিস্তা ও তোর্ষায় মেলে বোরোলি আর মেলে মানসাই, ধরলা, রায়ডাক, কালজানি, করলা ও বালাসন নদীতে। কোন নদীর বোরোলি সেরা সে নিয়েও তর্ক চলছে আগে থেকে। তবে অধিকাংশই এগিয়ে রাখেন তোর্ষার বোরোলিকে।  স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় বোরোলি মাছ।
কোচবিহারের তোর্ষা পারের মৎসজীবি সনাতন দাস কিংবা মেখলিগঞ্জের তিস্তাপারের মৎসজীবি অখিল দাসের গলায় আক্ষেপের সুর। তাঁরা জানাচ্ছেন, "আগে দূর্গাপুজোর সময় থেকে মানে অশ্বিন মাস থেকে শীতকাল অব্দি সারারাত নদীতে জাল ফেলে মিলতো ৮/১০ কেজি বোরোলি।এখন সারারাতে এক কেজি বোরোলি জালে ওঠাই দুস্কর।
কোচবিহার জেলার মৎস দপ্তরের আধিকারিকেরাও একমত। নদীতে কমছে বোরোলি মাছ। বছর দশেক আগেও তোর্ষা নদীতে মাসে ১৫০ কেজি বোরোলি মিলতো। এখন ১৫/২০ কেজি উঠছে জালে। ফলে মাছের দাম ইলিশের দেড়গুন! 
অভিযোগ উঠেছে একদিকে নদী দূষণ অন্যদিকে মৎসজীবিদের একাংশ মাছ ধরতে মশারী জালের ব্যবহার করে বোরোলি মাছের ক্ষতি করছে।মাছ ধরতে কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ করার দাবিও উঠেছে।
স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় বোরোলি প্রসঙ্গে জেলার ভারপ্রাপ্ত মৎস আধিকারিক প্রনব বিশ্বাস জানিয়েছেন,একবার পুকুরে বোরোলি চাষের চেষ্টা হয়েছিল কিন্তু সে চেষ্টা ফলপ্রসূ হয় নি।ফলে তিস্তা ও তোর্ষা,মানসাই ও ধরলা নদীর সুস্বাদু বোরোলিকে বাঁচাতে নদী দূষণ ঠেকানোর পাশাপাশি মশারি জালের ব্যবহার ও কীটনাশক ব্যবহার করে মাছ ধরার প্রবনতা বন্ধ করতেই হবে।

Comments :0

Login to leave a comment