দীপশুভ্র সান্যাল- জলপাইগুড়ি
উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গে হাতির সংখ্যা প্রায় ৮০০। কেন্দ্রীয় সরকারের বন মন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে এমনটাই। প্রায়ই খবরে জানা যায় কখনও খাবারের সন্ধানে আবার কখনও পথ হারিয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে হাতির দল। ক্রমশ কমছে জঙ্গল, কারণ জঙ্গল কেটে তৈরি হচ্ছে রাস্তা, গড়ে উঠেছে রিসোর্ট। খাবারের খোঁজে হাতির পাল ঢুকে পড়তে হয় লোকালয়ে। নষ্ট হচ্ছে মাঠের ফসল, ঘর বাড়ি। হাতির আক্রমণে কখনও জখম হচ্ছেন মানুষ আবার কখনও মৃত্যুর খবরও পাওয়া যায়। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে হাতির আক্রমণে রাজ্যে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০২৪ সালে ১৩ জনের। এবার হয়তো আর হাতিকেও খাবারের খোঁজে ঢুকে পড়তে হবে না লোকালয়ে। এবার খরচ কমাতে কুনকি হাতি দত্তক দেওয়ার পথে হাঁটতে চলছে বনদপ্তর। জানা যাচ্ছে শর্ত মেনে গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগে কুনকি হাতি দত্তক নেওয়া যাবে বলে প্রচার করা হচ্ছে বন দপ্তরের তরফে। প্রচারে বলা হচ্ছে গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগ একটি অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে হাতি-মানুষ বন্ধুত্ব গড়ে তোলার জন্য। আসলে সরকারের তরফে প্রয়োজনীয় ফান্ড না মেলায় এই সিদ্ধান্ত বলে জানাচ্ছেন বনকর্মীরা। এই প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে কেউ চাইলে এখন দত্তক নিতে পারবেন হাতি, তবে কিছু শর্ত তাঁকে মানতে হবে।
বনদপ্তর সূত্রে খবর বর্তমানে গরুমারায় কুনকি হাতির সংখ্যা ২৯ টি, ছয়টি শাবক সহ। এই হাতিগুলির রক্ষণাবেক্ষণ, খাওয়াদাওয়া এবং চিকিৎসায় বছরে অনেক খরচ হয়ে থাকে। তাই, এই খরচ বহন করতে আগ্রহী কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা দত্তক নেওয়ার আবেদন করতে পারবেন। বছরে পূর্ণবয়স্ক হাতির জন্য খরচ ২লক্ষ ২০ হাজার টাকা, বছরে অপ্রাপ্তবয়স্ক হাতির জন্য খরচ ১ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা এবং শাবকের জন্য ১ লক্ষ ৪০হাজার টাকা। গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও দ্বিজপ্রতিম সেনের বলেন, ‘‘আবেদন প্রক্রিয়া মেনে অনুমোদন পাওয়া গেলে, সাধারণ মানুষ বা সংস্থা হাতি দত্তক নিতে পারবেন। এই উদ্যোগে একদিকে হাতির প্রতি মানুষের সচেতনতা বাড়বে, অন্যদিকে খরছের চাপ কমবে বনদপ্তরের। রাজ্য বন দফতরের অনুমোদন পেলে এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হবে।’’
বনদপ্তরের এই উদ্যোগ প্রসঙ্গে পরিবেশপ্রেমীদের বক্তব্য এভাবে দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে পারেনা বনদপ্তর। ফান্ড না থাকলে হাতির জন্য প্রয়োজনীয় ফান্ডের বন্দোবস্ত করতে হবে। জঙ্গলে কলা, চালতা,আতা সহ অন্যান্য ফলের গাছ চাষ করা প্রয়োজন হাতির প্রয়োজনীয় খাবারের জন্য। বনদপ্তরের এই উদ্যোগে বাস্তবে কি কমবে মানুষ বন্যপ্রাণের সংঘাত সেই প্রশ্নই ছুঁড়ে দিয়েছেন পরিবেশপ্রেমীরা।
Elephant Adoption
খরচ কমাতে কুনকি হাতি দত্তকের উদ্যোগ বন দপ্তরের
×
Comments :0