MONDA MITHI — RISHIRAJ DAS | SUNDARBON — NATUNPATA | 15 JUNE 2024

মণ্ডা মিঠাই – ঋষিরাজ দাশ | বিপন্ন সুন্দরবন – নতুনপাতা | ১৫ জুন ২০২৪

ছোটদের বিভাগ

MONDA MITHI  RISHIRAJ DAS  SUNDARBON  NATUNPATA  15 JUNE 2024

মণ্ডা মিঠাই

বিপন্ন সুন্দরবন 
ঋষিরাজ দাশ 

নতুনপাতা


 

প্রায় ২৩০ বছর আগে ইংরেজরা সুন্দরবনের বিস্তৃত অঞ্চলকে ইজারা নেয় আর মেদিনীপুর ও অধুনা বাংলাদেশের যশোর খুলনা থেকে প্রচুর ভূমিহীন মানুষ সুন্দরবনে বসত গড়ে তুলতে আসেন। প্রথমেই তারা যেটা করেন সেটা হলো ম্যানগ্রোভ অঞ্চল সাফ করে যাবতীয় বন্যপ্রাণীদের বিতারণ করা এবং তারপর ভরা জোয়ার আর কোটালের জল যাতে দ্বীপে দিনে দুইবার ঢুকে পড়ে চাষবাস আর বসবাসের জমি ভাসিয়ে না দেয় তাই নদীর তীর বরাবর বাধ তৈরি করা হয়।এটার কারণ যেখানে তারা বসত গরেছিলেন সেই জায়গাগুলো কোনদিনই মাটি ফেলে এত উঁচু করা হয়নি বা যায়ইনি যাতে জোয়ারের জল ঢোকা আটকানো যায়। আর নদীর নোনা জল ঢুকলে তো চাষ আবাদ কিছু করা যাবে না, পানীয় জল না পাওয়া গেলে জীবন কাটানোই মুশকিল হবে। তাই যত দ্বীপে মানুষ বসবাস করতে শুরু করলো, ১০২ টি দ্বীপের মধ্যে ৫৪ খানা দ্বীপে এরকমই মাটির দেওয়াল বা বাঁধ দেওয়া হল।এবং সেটা করতে গিয়ে আর মানুষের বসতি ও জীবনধারণের বন্দোবস্ত করতে গিয়ে প্রায় পুরোটাই সরিয়ে দেওয়া হলো ম্যানগ্রোভের জঙ্গল। ফল হয়েছে এই, স্বাভাবিক জোয়ার ভাটায় পলি আসা যাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়ে পার্শ্ববর্তী জঙ্গল এলাকার তুলনায় এই মানুষের বসবাসকারী দ্বীপগুলো হয়ে গেল আরও নিচু, এবং স্বাভাবিক জোয়ার ভাটা বাধা পাওয়ায় নদী খাতেও নানান বদল দেখা দিল।
                                     বহুদিন ধরে এর ওপর অনেক গবেষণা হয়েছে এবং উপগ্রহ চিত্র ও অন্যান্য পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে ভারতীয় সুন্দরবনের একটা বড় অংশ জুড়ে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের এক ভীষণ ক্ষয় হচ্ছে। তার গঠন ও বৃদ্ধি কমে যাচ্ছে, তার সবুজের পরিমাণ কমে যাচ্ছে এবং গাছগুলো দুর্বল হয়ে গিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে লড়ার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।  সুন্দরবনের প্রায় ৭০ প্রজাতি ম্যানগ্রোভ ও বাদাবনের প্রজাতির গাছ দেখতে পাওয়া যায় আর তার ৩৫ টি হল প্রকৃত ম্যানগ্রোভ।এর মধ্যে অন্তত দুটো প্রজাতি এই লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে এই দেশের সুন্দরবন থেকে প্রায় লুপ্ত হয়ে গেছে, আর সে দুটি হল সুন্দরী ও গোলপাতা। অত্যাধিক ভাবে কমে গেছে সবচেয়ে ক্ষয়রোধী গর্জন যা মূলত খাড়ির ধারে দেখা যায়। ধুধুল, পশুর এমনকি কাঁকড়া  গরিয়া এর মত গাছ যথেষ্ট সংখ্যায় আর নেই। গোটা সুন্দরবন জুড়ে এখন বানি, গেওয়া কিছুটা খর্বকায় গরান আর উঁচু জমিতে হেতাল এর মন  কালচারের মতো পরিস্থিতি প্রায়। আর কেওড়ার প্রজাতিগুলি রয়েছে বিচ্ছিন্নভাবে, আর এর একটি প্রজাতি ওড়া বা ম্যানগ্রোভ আপেল ভারতের পূর্ব সুন্দরবনে খুব কমে গেছে এবং অপেক্ষাকৃত কম লবণাক্ত অংশ ও পশ্চিম সুন্দরবনে কিছু আছে।
ম্যানগ্রোভের ক্ষয়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয় হয়ে চলেছে সুন্দরবনের আশ্চর্য জীববৈচিত্র্য,যা বাদাবনের মাটিতে, কাদায় আর জলে থাকে। প্রায় হাজারের ওপর অমেরুদন্ডী প্রাণীর প্রজাতি এবং ৫০০প্রকারের মেরুদন্ডী প্রাণীর বসবাস এই সুন্দরবনে। আর তার মাথা হয়ে আছে বাঘ। শেষ সুমারি অনুযায়ী ভারতীয় সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা মাত্র ১০৫। বাঘের সংখ্যা কমলেও বাঘের মানুষকে আক্রমণ করার ঘটনা কমেনি। আর তার কারণ পরিবর্তিত পরিবেশ এ বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে আর এদের শিকার শাকাহারি প্রাণীর সংখ্যা কমছে।বাঘের বিচরণ এখন সেই সব দ্বীপেই যেখানে মাছ, কাঁকড়া আর মধু আহরণে মানুষের আনাগোনা। জঙ্গলের নদীর ধার বরাবর জাল ফেলে গ্রামের দিকে যাওয়া বন্ধ করা গেছে বটে কিন্তু এর ফলে জঙ্গলের ধার ঘেঁষে মাছ কাঁকড়া ধরার সময় আক্রমণ উল্টে বেড়েছে এমনটাই প্রত্যক্ষদর্শীদের মত। যাই হোক এই বিচিত্রতার কথা মাথায় রেখেই আমাদের সুন্দরবনকে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ ঘোষণা করা হয়েছিল।যেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মানুষ থাকবে মিলেমিশে। কোর এলাকায় কারও প্রবেশ নিষেধ, ওখানে প্রজেক্ট টাইগার, যার জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা। তার বাইরে বাফার এলাকায় আছে অভয়ারণ্য, যেখানে মাছ, কাঁকড়া ধরা মধু আহরণ চলতে পারে। এরও বাইরে থাকবে মানুষের বসবাসের উপযোগী ম্যানিপুলেশন জোন,যেখানে চাষ বাস, মৎস্য চাষ উদ্যান ও পশু পালন কুটির শিল্প চলতে পারে, থাকতে পারে স্কুল কলেজ অফিস 
                     ম্যানগ্রোভের স্বাভাবিক বৃদ্ধি,সেই অঞ্চলের মাটির বৈশিষ্ট্য, ভূপ্রকৃতি,জলের স্রোত, উচ্চতা ও লবণাক্ততার ওপর নির্ভর করে     প্রজাতি নির্বাচন করতে হবে।  তাই এক কথায় এ হবে আঞ্চলিক ভিত্তিক সমাধানও যা নিশ্চিত ভাবে একটি বড় ক্লাইমেট অ্যাকশন বা জলবায়ু প্রকল্প।

সপ্তম শ্রেণী 
কল্যাননগর বিদ্যাপীঠ খড়দহ ,
মজুমদার ভিলা কল্যাণ নগর, খড়দহ, উত্তর চব্বিশ পরগনা,
8582835653

Comments :0

Login to leave a comment