‘‘সংবিধানে এমন কিছুই নেই যা আমাদের নিজের। পশ্চিমের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংবিধানের বিভিন্ন ধারা জুড়ে দেওয়া হয়েছে কেবল।’’
১৯৬৬-তে এই অভিমত জানিয়েছিলেন বিজেপি’র ভিত্তি সংগঠন আরএসএস’র দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক মাধব সদাশিব গোলওয়ালকর।
গোলওয়ালকর বলেছিলেন, ‘‘সংবিধানে এমন একটি পরিচালন নীতি নেই যা জাতীয় লক্ষ্যকে স্পষ্ট করতে পারে। আমাদের জীবনের লক্ষ্য কী হবে তা-ও অনুপস্থিত।’’
বিআর আম্বেদকর এবং ভারতীয় সংবিধান ঘিরে তির্যক মন্তব্য আরএসএস কেবল ঘটনাক্রমে করে ফেলেছে এমন নয়। ভারতীয় সংবিধান সম্পর্কে এই মনোভাব বারবারই প্রকাশ করে ফেলেছে আরএসএস।
সংসদে আম্বেদকর প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা অমিত শাহের মন্তব্যকে তাই বিচ্ছিন্নভাবে দেখতে নারাজ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশ।
আইন প্রণয়নের সময় আম্বেদকরকে যে বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল, আসছে সে আলোচনাও। ‘হিন্দু কোড বিল’ পেশ করেছিলেন আম্বেদকর জওহরলাল নেহরু মন্ত্রীসভার আইনমন্ত্রী হিসেবে। তিনি বিকের ওপর আলোচনায় নিজেই বলেছিলেন, ‘‘হিন্দু সমাজ কোনওভাবেই বর্ণবিভাজন প্রথা ছাড়তে চাইবে না। চাইবে না শূদ্রদের দমন করতে, নারীদের দমন করার এমন ব্যবস্থা।’’
সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য এবং দেশের নারী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক বৃন্দা কারাত এ সংক্রান্ত নিবন্ধে জানিয়েছেন মন্ত্রীসভারই সদস্যদের একটি অংশের বাধার মুখেও পড়তে হচ্ছিল সে সময় আম্বেদকরকে।
আরএসএস’র মুখপত্র ‘অর্গানাইজার’ ১৯৫০’র ১১ জানুয়ারির এক নিবন্ধে আম্বেদকরকে কেবল ‘লিলিপুট’ বলে ব্যঙ্গ করার চেষ্টাই করেনি, তাঁকে ‘আধুনিক মনু’ সম্বোধন ‘হাস্যকর’ বলেও মন্তব্য করেছিল।
কংগ্রেস এই বিতর্কে হাজির করেছে ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত ‘শ্বেতপত্র’ প্রসঙ্গও। আরএসএস অনুগামী বলে পরিচিত স্বামী হিরানন্দ সেই শ্বেতপত্রের প্রস্তাবনায় লিখেছিলেন, ‘‘আমাদের এই সংবিধান ভারতের সংস্কৃতি চরিত্র এবং বাস্তবতা বিরোধী। বিদেশি ধারণায় পরিচালিত। প্রথমেই এই সংবিধানকে খারিজ করা উচিত।’’
২০০০ সালে আরএসএস’র তৎকালীন প্রধান কেএস সুদর্শন বলেছিলেন, ‘‘সংখ্যালঘুর ধারণা আমাদের কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।’’
বৃন্দা কারাত লিখেছেন যে হিন্দু কোড বিলে নারীদের অধিকারের প্রসঙ্গ ছিল। আরএসএস এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদী বাহিনী সরাসরি রাস্তায় নেমে এই বিলের বিরোধিতা করেছে।
Ambedkar and RSS
আম্বেদকর, সংবিধানের সঙ্গে বরাবরের বিরোধ মনুবাদী আরএসএস’র
×
Comments :0