Even though corporate loans are waived, the central government is not willing to let farmers go

কর্পোরেটের ঋণ মকুব হলেও কৃষকদের ছাড়ে নারাজ কেন্দ্র

জাতীয়

মোদী সরকারের কর্পোরেট ঋণ মকুব পর্ব চললেও তার কৃষি ঋণ মকুবের কোনও দায় নেই। কেন্দ্রে দ্বিতীয়  দফায় ক্ষমতায় এসে মোদী সরকার তার কৃষি ঋণ মকুবের দায় পাকাপাকি তুলে দিয়েছে। অন্যদিকে কর্পোরেটের  ঋণমকুব থেকে তার কর মকুব চলছে দেদারে। ২০২৩-২৪ সালে কর্পোরেট শিল্পে ঋণ মকুব হয়েছে ১.৭ লক্ষ কোটি টাকা। কেন্দ্র দেশে কৃষি ঋণ মকুবের দায় থেকে হাত ঝেড়ে ফেলেছে। ফলে কর্পোরেটের যে ঋণমকুব হয়েছে সেই প্রায় এক পরিমাণ ঋণের বোঝায় নাভিশ্বাস উঠেছে কৃষকের। বর্তামানে দেশে অনাদায়ী কৃষি ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। কেন্দ্র কৃষি ঋণ মকুবের দায় ছেড়ে দেওয়ায় দেশে  রাজ্যগুলিকে চরম আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যে কৃষি ঋণের মকুবের দায় নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে। রাজ্যের ভোটে তাই রাজনৈতিক দলগুলিকে কৃষি ঋণ মেটাতে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটে যেতে হয়েছে। তাতে কৃষকের ঋণের বোঝা থেকে রেহাই মেলেনি। এতে সর্বস্বান্ত অবস্থা ছোট কৃষকদের। তাই ফের কেন্দ্রীয় সরকারকেই কৃষি ঋণ মকুবের দায়িত্ব নেওয়ার সুপারিশ করল কৃষি সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। মঙ্গলবার সংসদে পেশ হয়েছে স্থায়ী কমিটি রিপোর্ট। সংসদে বর্তমানে কৃষির বেহাল অবস্থার কথা জানিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ হলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রাজস্থানের সভায় দাবি করেন, তাঁর আমলে কৃষিতে বিশাল উন্নতি হয়েছে। একই সঙ্গে কংগ্রেস কিছুই করেনি বলে কৃষির সঙ্কটের সব দায় তিনি ঝেড়ে ফেলেন।
কর্পোরেটের ঋণ বাড়লে ঋণ মকুব হয় যায়। কর বকেয়া বাড়লে কর মকুব হয়ে যায়। কিন্তু কৃষকের ‘দুয়োরানি’ অবস্থা। কৃষি ঋণ মেলার ক্ষেত্রে যে সমস্যা, সেই  কৃষি ঋণের বোঝা বেড়ে গেলে তার সমস্যা আরো বেড়ে যায়। কৃষির এই সঙ্কটের কথা তুলে ধরা হয়েছে সংসদীয় কমিটি রিপোর্টে। কমিটি চেয়ারম্যান পাঞ্জাবের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্নু জানাচ্ছেন, কৃষকদের প্রতি কোনও সহানুভুতি নেই মোদী সরকারের। কৃষকরা তাদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) নিয়ে আইন তৈরির দাবি জানালেও তা মানেনি। তিনি বলেন, এমএসপি নিয়ে আইন হলে শুধু কৃষকরা উপকৃত হবেন তা নয় এতে কৃষির অনেক আর্থিক উন্নতি হবে। গ্রামীণ অর্থনীতির চেহারাও বদলে যাবে। গ্রামীণ বাজারে চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। যা শিল্পের বিকাশে সাহায্য করবে। তিনি জানান, স্বামীনাথন কমিশন এমএসপি স্থির করতে যে সি-২+ ৫০ শতাংশ সূত্রের প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্রকে তা কার্যকরের দাবি জানানো হয়েছে। যদিও মোদী সরকার এমএসপি নিয়ে স্বামীনাথনের সূত্র মানেনি। ফলে কৃষকদের কোন ফসল বিক্রিতে লোকসানের বহর বাড়ছে।
এদিকে, কর্পোরেট ঋণ মকুবে মোদী সরকার যতটা উদার তার বিপরীত চিত্র মেলে কৃষি ঋণ মকুবে। বিরোধীদের দাবিতে ১০ বছর আগেও কেন্দ্র অর্থ বরাদ্দ করেই কৃষি ঋণ মকুবের কথা ঘোষণা করতো। এখন কেন্দ্রের কৃষি ঋণ মকুবের পাঠ উঠে গিয়েছে। কৃষি মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান প্রশ্নের জবাবে জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্র এখন কৃষি ঋণ মকুব করে না। রাজ্যগুলি তাদের নিজস্ব উদ্যোগে কৃষি ঋণ মকুব করে থাকে। কোথায় কোন রাজ্য কত কৃষি ঋণ মকুব করছে তার তথ্য কেন্দ্রীয় সরকার সংরক্ষণ করে না বলে তিনি জানিয়ে দেন। ফলে কৃষকের কৃষি ঋণ এখন কেন্দ্রের অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই। এতে প্রশ্ন তুলেছে সংসদীয় কমিটি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এমএসপি ঠিকমতো কার্যকর না হওয়ায় কৃষকদের ফসলের দাম মিলছে না। এতে ধারে ঋণে বিপর্যস্ত অবস্থা কৃষকের। রাজ্য সরকারগুলি আর্থিক সঙ্কটে রয়েছে। এতে অনেক রাজ্য সরকার কৃষকের ঋণ মকুবের উদ্যোগ নিতে পারছে না। তাই কেন্দ্রকে কৃষি ঋণ মকুবে উদ্যোদ নিতে হবে। কেন্দ্রকে কৃষি ঋণ মকুব প্রকল্প ঘোষণা করতে হবে। এতে কৃষকদের এবং খেতমজুরদের ঋণ মকুবের পরিকল্পনা নিতে হবে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী চৌহান কৃষি উন্নয়নে সরকার যথেষ্ট উদ্যোগ নিয়েছে বলে দাবি করলেও সংসদীয় কমিটি জানাচ্ছে, মোদী সরকার কৃষিতে কেন্দ্রীয় আর্থিক বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে। মন্ত্রী টাকার অঙ্ক দেখিয়ে বরাদ্দ বেড়েছে বলে দাবি করলেও আসলে শতাংশের হিসাবে বরাদ্দ হ্রাস পেয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০-২১ থেকে ২০২৪-২৫ এই সময়ে কৃষিতে কেন্দ্রীয় বাজেটে বরাদ্দ কমেছে। যেমন ২০২০-২১ সালে কৃষি দপ্তরে বরাদ্দ হতো মোট কেন্দ্রীয় বরাদ্দের ৩.৫৩ শতাংশ। তা ২০২৩-২৪ সালে কমে হয়েছে ২.৫৪ শতাংশ।
প্রসঙ্গত, কেন্দ্র কৃষকদের আয় বাড়াতে পিএম কিষান প্রকল্প ঘোষণা করলেও তাতে কৃষকদের জীবনজীবিকার বিশেষ কোনও উন্নতি হয়েনি তা সংসদীয় কমিটি রিপোর্টে জানানো হয়েছে। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত উচ্চপর্যায়ের কমিটি একই কথা জানিয়েছে। গত মাসে সুপ্রিম কোর্টে সেই রিপোর্ট জমা পড়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে দেখা যাচ্ছে কৃষকদের আয় বিশেষ বাড়েনি। বর্তমানে কৃষকদের আয় দৈনিক মাথাপিছু কমে ২৭ টাকায় দাঁড়িয়েছে। কৃষিতে এত কম আয়ে প্রতি দিন তার উপর নির্ভর করে টিকে থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তাই তাঁদের আয় বাড়াতে এমএসপি ঠিক মতো চালু করতে আইন প্রণয়ন করা সরকার। পাঞ্জাব হরিয়ানা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নবাব সিং ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত এই কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি গত ২১ নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টে এই রিপোর্ট জমা দেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ফসলের দাম না মেলায় কৃষিতে বিনিয়োগ কমে গিয়ে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। ২০২৩-২৩ সালে পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় কৃষকদের মাথাপিছু ঋণ বেড়ে হয়েছে যথাক্রমে ৭৩ হাজার ৬৭৩ টাকা এবং ৭৬ হাজার ৬৩০ টাকা। কৃষকদের ঋণের বোঝা বেড়ে চলায় তাদের মধ্যে আত্মহত্যার মহামারী দেখা যায় বলে মন্তব্য করা হয়েছে রিপোর্টে। তাতে জানানো হয়েছে, গত এক দশকে ঋণ জেরবার হয়ে ৪ লক্ষ কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন।
কৃষকরা ঋণে জেরবার হয়ে আত্মঘাতী হলেও কর্পোরেটেদের ঋণ দেদার মকুব হয়েছে। মোদী জমানায় গত ১০ বছরে কর্পোরেটের অনাদায়ী ঋণ মকুবের পরিমাণ হলো ১২.৩ লক্ষ কোটি  টাকা।  প্রতি বছরে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা কর্পোরেট ঋণ মকুব হয়েছে। শুধু কর্পোরেট ঋণ নয় তাদের কর মকুব হবেছে বিপুল। অর্থমন্ত্রী সংসদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছেন, ২০২০-২১ সালে কর্পোরেটের কর ছাড় দেওয়ায় আয় কমেছে ৭৫ হাজার  ২১৮ কোটি টাকা, ২০২১-২২ সালে  কর ছাড় দেওয়ায় আয় কমেছে  ৯৬ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ সালে কর ছাড় আরও বেড়ে আয় কমে হয় ১ লক্ষ ৯ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। কর ছাড়ে মুনাফা বেড়েছে কর্পোরেটের আর এতে আয় কমেছে সরকারের। 
কৃষকরা ধারে ঋণ বিপর্যস্ত হলেও তার না মেলে ঋণ মকুব না মেলে ফসলের দামের নিশ্চয়তা।

Comments :0

Login to leave a comment