প্রবল সমালোচনার মুখে সাংবাদিক সম্মেলনে বসতে হলো অমিত শাহকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবি, বাবাসাহেব আম্বেদকরকে ঘিরে তাঁর বিক্তব্য বিকৃত করেছে কংগ্রেস।
বুধবার সকালেই আম্বেদকরকে ঘিরে অমিত শাহের মন্তব্যের জেরে উত্তপ্ত হয়ে পড়ে সংসদ। আম্বেদকরের ছবি হাতে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস সাংসদরা।
সংবিধানের ৭৫ বছর সংক্রান্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে রাজ্যসভায় শাহ বলেন, ‘‘এখন একটা ফ্যাশান হয়ে গিয়েছে কথায় কথায় আম্বেদকার, আম্বেদকার বলা। এতো বার যদি ঈশ্বরের নাম নিতেন তাহলে স্বর্গ লাভ হতো।’‘
সিপিআই(এম) বলেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর এমন মন্তব্য আসলে বিজেপি’র বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকেই স্পষ্ট করেছে ফের। বিজেপি সরকারের শাসনে দেশের সর্বত্র প্রান্তিক অংশগুলি নিপীড়নের শিকার।
কেবল কংগ্রেস নয় বিভিন্ন অংশই বিজেপি নেতার বক্তব্যের প্রতিবাদে সরব হয়। ছাত্র সংগঠন এসএফআই-ও বিরোধিতা করে বলেছে, শিক্ষাক্ষেত্রে দলিত বিরোধী মানসিকতা বারবার দেখাচ্ছে বিজেপি সরকার। তফসিলি জাতি ও আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ বাবদ বরাদ্দের মাত্র ০.১ শতাংশ টাকা দেওয়া হয়।
দেশজুড়ে প্রবল সমালোচনার মুখে দিল্লিতে বিজেপি দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলন করেন শাহ। তিনি বলেন, ‘‘আমার বক্তব্য বিকৃত করে হাজির করছে কংগ্রেস। কংগ্রেস আম্বেদকর-বিরোধী। আমি তার নিন্দা করছি। কংগ্রেস সংবিধান এবং সংরক্ষণের বিরুদ্ধে। কংগ্রেস বীর সাভারকরেরও অপমান করেছে।’’
শাহ বলেন, ‘‘কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আমার পদত্যাগ চেয়েছে। আমি পদত্যাগ করলেও কংগ্রেসের লাভ হবে না। কংগ্রেস যে জায়গায় ছিল সেখানেই আরও অন্তত ১৫ বছর থাকবে।’’
সমালোচনা ঠেকাতে কংগ্রেসকে আক্রমণের লষ্য করেন শাহ। তিনি বলেন, ‘‘জওহরলাল নেহরু নিজেকে নিজে ‘ভারতরত্ন’ দিয়েছেন ১৯৫৫ সালে। ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালে একই কাজ করেছেন। কিন্তু আম্বেদকরকে কংগ্রেস ‘ভারতরত্ন‘ দেয়নি। ১৯৯০ সালে তাঁকে এই উপাধি দেওয়া হয়। তখন কেন্দ্রের সরকারে বিজেপি’র সমর্থন ছিল।
শাহকে বাঁচাতে আসরে নামতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও। তিনি বলেছেন, ‘‘অমিত শাহ যা বলেছেন তাতে চমকে গিয়েছে কংগ্রেস। সে কারণে এখন নাটক করছে। মানুষ সত্য জানে।’’
শাহ অম্বেদকর-কংগ্রেস মতপার্থক্য বোঝাতে দাবি করেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের ভারতভুক্তিতে সংবিধানের ৩৭০ ধারার বিরোধী ছিলেন আম্বেদকর। বিজেপি সরকার এই ধারা বিলোপ করেছে।’’
শাহের বক্তব্য আসলে বিজেপি’র ভিত্তি সংগঠন সাম্প্রদায়িক আরএসএস’র পুরনো প্রচার। যার ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে বারবারই প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু আরএসএস’র বিরোধিতায় আম্বেদকরের অবস্থান কেবল কোনও রচনা বা বক্তব্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিশেষজ্ঞদের এই অংশ মনে করাচ্ছেন, ১৯৪৯ সালে ‘হিন্দু কোড বিল’ আলোচনার সময় আরএসএস আম্বেদকরের কুশপুতুল পুড়িয়েছিল রামলীলা ময়দানে। ১৯৪৯ সালের ৩০ নভেম্বর আরএসএস’র মুখপত্র ‘অর্গানাইজারে লেখা হয়েছিল, ‘‘ভারতীয় সংবিধানে জঘন্যতম বিষয় হলো এর মধ্যে ভারতীয় বলে কিছু নেই।’’
১৯২৭ সালে ‘মনুস্মৃতি’ পুড়িয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং বর্ণপ্রথার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন বিআর আম্বেদকর। বামপন্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন অংশই বলেছে, ‘মনুস্মৃতি’-কে যারা সংবিধান মনে করে তাদেরপক্ষে আম্বেদকরকে সহ্য করা কঠিন।
SHAH AMBEDKAR
কংগ্রেসকে আম্বেদকর-বিরোধী বলে মুখ বাঁচানোর চেষ্টা শাহের
×
Comments :0