মিটছে না পর্যটকদের তৃষ্ণা। শীত জাঁকিয়ে পড়তেই স্বাভাবিক চেহারা নিয়েছে পর্যটকদের ভিড়। কিন্তু ঘাটতি পড়েছে অন্য জায়গা। শীতের মরসুমে পরিযায়ী পাখিদের জমাট ভিড় হয়েছে উধাও। রমবেরঙের বাখিদের মেলার শোভা হারিয়ে যেতে বসেছে আজ। যা নিয়ে আক্ষেপের স্বর স্থানীয় থেকে পর্যটক, পশুপ্রেমী থেকে পরিবেশপ্রেমীদের গলায়।
গত কয়েকদিন ধরেই শীতর প্রকোপ বেশ জোরালোড় হয়েছে বোলপুর-শান্তিনিকেতন জুড়ে। সোনাঝুরির খোয়াইয়ের হাট, বিশ্বভারতির ক্যাম্পাস, সৃজনী শিল্পগ্রাম, কোপাই নদীর পাড়, কংকালীতলা, আমার কুঠিতে পর্যটকদের ভীড়ের চেহারায় কোনও খামতি পড়ে নি এবছরও। কিন্তু খামতি রয়েছে অন্য জায়গায়। শীতের গোড়াতেই ইউরোপ, মোঙ্গোলিয়া, সুদূর সাইবেরিয়া সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পরিযায়ী পাখির দল যেভাবে ছুটে আসে তার দেখা মেলে নি এখনও। বল্লভপুরের তিন-তিনটি ঝিল, লালবাঁধের পাড়, কোপাইয়ের বুক জুড়ে নানা রঙের, নানা জাতের, নানা আকারের পাখিদের ভিড় এক আকর্ষনীয় দৃশ্য ছিল এলাকার। কিন্তু সেই আকর্ষনের লেশমাত্র এখনও নজরে পড়ে নি। পরিবেশকর্মীদের আক্ষেপ, নদী-বিল সংস্কারের অভাব, দূষণের প্রকোপের জেরেই মুখ ফিরিয়েছে ভিনদেশি পাখির দল। অবরুদ্ধ হয়েছে নদীবুক। ফলাফল, জলের আধিক্যে পড়েছে থাবা। কোথাও বা বিল-নদীর দখল নিয়েছে জঞ্জাল,কচুরিপানা। এর সাথে রয়েছে শব্দ দৌরাত্ব। পরিবেশপ্রেমীদের কথায়, গত কয়েক দশক ধরে সেপ্টেম্বর থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসত পরিযায়ী পাখির দল। নর্দান পিনাটেল, গ্যাডওয়াল, নব ডাকের নানান প্রজাতির পাখিদের কলতানে মুখরিত হত চতুর্দিক। যা তৃষ্ণা মেটাতো পর্যটক থেকে পরিবেশ প্রেমীদের। আজ নি:শব্দ বিল, নদীবুকে নেই কোনও কলতান। বোলপুরের বনদপ্তরের আধিকারিক জ্যোতিষ বর্মন জানান, ‘‘পরিযায়ীরা একেবারে আসছে নাতা নয়। পাখিদের যাতে কেউ বিরক্ত না করে সেই কারণেই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সচেতনও করা হচ্ছে পর্যটকদের। ঝিল সংস্কার ও বল্লভপুর অভয়ারণ্যকে ঢেলে সাজানোর জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’’ পরিবেশকর্মীদের কথায়, ‘‘প্রতিবছর শতাধিক প্রজাতির পাখিদের আনাগোনা ছিল স্বাভাবিক। ধীরে ধীরে তা হারাচ্ছে। পড়ুয়া ও গবেষক, স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকেরা ছুটে যেতেন ঝিলগুলির পাড়ে। চলত পাখি চেনার কাজ। ক্যামেরা বন্দিও করতেন কেউ কেউ। কিন্তু কোথায় যেন সব হারিয়ে গেল।’’
Migrant Birds
পরিযায়ী পাখিদের ভিড় উধাও বল্লভপুরের ঝিলে
×
Comments :0