‘‘আদানি আর আম্বানি খুশি থাকলে, আমির হলে, দেশের মানুষ খুশিতে থাকবেন না, দেশে ‘অমৃতকাল’ আসবে না। কৃষির সঙ্গে জড়িত দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ। কৃষিজীবীর ওপর আঘাত দেশকে কোনোভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবে না।’’
লোকসভায় বাজেটের ওপর সংক্ষিপ্ত ভাষণে এভাবেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে আক্রমণ করলেন কৃষকনেতা এবং সিপিআই(এম) সাংসদ অমরা রাম। (দেখুন ভিডিও)
রাজস্থানের সিকরের এই সাংসদ বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেছেন, ‘‘দেশের কৃষক, গরিব, যুব এবং আমজনতার সমস্যা নিরসনে বিন্দুমাত্র চেষ্টা করেনি ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের জন্য পেশ এই বাজেট। ২০২২-এ কৃষকের আয় দ্বিগুন করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েচিল। অথচ চাষের উপকরণের খরচ কয়েকগুন হয়েছে। ৫০ টাকার ডিজেল ৯৫ টাকা, ডিএপি সারের দাম ৪০০ টাকা থেকে বেড়ে ১৪০০ হয়েছে। এক লক্ষ টাকা খরচ করতে হচ্ছে বীজ কিনতে। তারপর সেই ফসল নষ্ট হচ্ছে।’’
অমরা রাম বলেন, ‘‘দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ গ্রামে থাকেন। তাঁরা খুশিতে না থাকলে ভারত খুশিতে থাকতে পারে না। আদানি-আম্বানির খুশিতেই দেশের ৮০ শতাংশ মানুষের খুশি হতে পারেন না, দেশে অমৃতকাল আসতে পারে না। গত দশ বছর ধরে বিজেপি সরকার কেন্দ্রে গ্রামে কৃষিজীবী ৮০ শতাংশ মানুষের বিরুদ্ধে বাজেট করে চলেছে। তার জন্যই দেশে আর্থিক বৈষম্য গোটা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। এই বাজেট সেই দিশাতেই তৈরি হয়েছে।’’
অমরা রাম বলেন, ‘‘মনরেগা প্রকল্পে দশ বছর আগে বরাদ্দ ১ লক্ষ ১৫ হাজার কোটি ছিল তা এখন নামিয়ে ৬৮ হাজার করা হয়েছে। তিন বছর ধরে রেগার টাকা দেওয়া হয় না। একশো দিনের নিশ্চয়তা দিয়ে শুরু হয়েছিল আইন। তাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা। উলটে চল্লিশ দিনও কাজ দেওয়া হয় না। এই প্রকল্পে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের ৯০ ভাগ মহিলা। মহিলা সশক্তিকরণের কথা বলা হচ্ছে অথচ তাঁদের আয়ের সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।’’
অমরা রাম বলেছেন, ‘‘শিক্ষা, চিকিৎসা সর্বত্র কয়েকটি হাতে গোনা কোম্পানির ফয়দা দেওয়ার বাজেট পেশ হয়েছে। মানুষের করের টাকায় গড়ে উঠেছিল জীবনবিমার মতো সংস্থা। সেই সংস্থা বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের অনুমতি দিয়ে। মানুষের করে অর্থে যা কিছু গড়ে উঠেছিল দেশে, সেই সব জাতীয় সম্পদ দেশি-বিদেশি কোম্পানির হাতে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’
অমরা রাম বলেন, ‘‘আমজনতাকে লুট করা হচ্ছে কর চাপিয়ে। ২০২৪-তে পেট্রোলিয়াম কর থেকে ভারত সরকার ৩ লক্ষ কোটি টাকা আদায় হতো। ২০২৪-এ সরকার আদায় সাড়ে ৭ লক্ষ কোটিতে নিয়ে গিয়েছে। প্রায় একই পরিমাণে কর আদায় করে রাজ্যগুলি। আমজনতা আয়, বেকারিতে ক্লিষ্ট। তাঁদের দেওয়ার বদলে কর চাপিয়ে আদায় চলছে। ডলার বিলিওনেয়ার, যারা ১০০ কোটি ডলারের মালিক, তাদের ওপর ৪ শতাংশ সম্পত্তি কর বসিয়ে অর্থ আদায় করলে আমজনতাকে রেহাই দেওয়া যেত। বরং, শিক্ষা, স্বাস্থ্যে খরচ আরও বাড়ানো যেত। আমজনতার ওপর চাপানো পরোক্ষ কর কমানো যেত।’’
অমরা রাম বলেন, ‘‘ না দেশের কৃষক খুশি, না নওজোয়ান খুশি না শ্রমিক খুশি। শ্রমিকের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় মজুরির নিশ্চয়তা নেই। কৃষকের ফসলের দামের নিশ্চয়তা নেই। সরকার আমজনতাকে দেওয়া একটি আশ্বাসও পূরণ করেনি।’’
রাম বলেন, ‘‘আমেরিকার রাষ্ট্রপতি অভিবাসী ভারতীয়দের হাতকড়ি পরিয়ে দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। আর সেই ট্রাম্পের পা ধরতে প্রধানমন্ত্রী আমেরিকায় যাচ্ছেন। আর বিজেপি বলে চলেছে বিশ্বজুড়ে মোদীর ডঙ্কা বাজছে।’’
Amra Ram Budget
সংসদে অমরা রামের পাঁচ মিনিটের ভাষণে ফালাফালা সরকার
![](https://ganashakti-new-website.s3.ap-south-1.amazonaws.com/24123/67ae1b19832cf_amra-ram.jpg)
×
Comments :0