দুর্নীতির অভিযোগ, কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া না হওয়া বা আক্রান্ত সংখ্যালঘুদের পাশে না দাঁড়ানোর মতো কারণ আছে। কিন্তু দিল্লিতে ‘আপ’-র পরাজয়ের মূল কারণ মোদী সরকার এবং দিল্লির ‘আপ’ সরকার ও নেতৃত্বের ওপর বিজেপি’র অনবরত আঘাত।
দিল্লির বিধানসভা ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে একথা বলেছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। বৃহস্পতিবার বিবৃতিতে পলিট ব্যুরো বলেছে, রাজধানী দিল্লিতে যা হয়েছে স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে তার নজির নেই।
পলিট ব্যুরো বলেছে, অসাংবিধানিক কায়দায় কার্যত দিল্লি রাজ্য সরকারকে দখল করে নিয়েছিল কেন্দ্রের বিজেপি জোট সরকার। ১৯৯১’র আইন অনুযায়ী দিল্লি সরকারের ক্ষমতা পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা এবং জমির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ২০২০-তে ‘আপ’-কে হারাতে না পেরে প্রশাসনের কর্তৃত্ব হাতে তুলে নিয়েছিল কেন্দ্র। কেন্দ্র নিযুক্ত উপরাজ্যপালই আধিকারিকদের নিয়োগ এবং বদলির সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন। সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় দিল্লির ‘আপ’ সরকার। ২০২৩’র মে-তে সুপ্রিম কোর্ট বলে যে ভূমি, জনশৃঙ্খলা এবং পুলিশ বাদে প্রশাসনের অন্য সব পরিষেবার ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব রাজ্য সরকারেরই।
পলিট ব্যুরো বলেছে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এই রায়কে হজম করতে পারেনি। দ্রুত অর্ডিন্যান্স জারি করে প্রশাসনিক সব পরিষেবায় উপরাজ্যপালের কর্তৃত্ব জারি করে। পরে ‘ দিল্লি জাতীয় রাজধানী অঞ্চল’ আইনে সংশোধনী পাশ করিয়ে এই অংশ যুক্ত করে।
পলিট ব্যুরো বলেছে, একটি বড় সময় ধরে দিল্লিতে দেখা গিয়েছে আমলাতন্ত্র রাজ্যের মন্ত্রীদের কথা শুনছে না, কেবল তা-ই নয়, আমলাতন্ত্র মন্ত্রীদের নির্দেশের বিপক্ষে কাজ করছে। বরিষ্ঠ আধিকারিকরা উপরাজ্যপালের সঙ্গে মিলে মন্ত্রীদের ফাঁসিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, মন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী এবং সব শেষে মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পলিট ব্যুরো বলেছে, কেন্দ্রের এই দখলদারিতে ব্যাহত হয়েছে জল পরিষেবা। ২০২৪’র বাজেটে দিল্লির ‘আপ’ সরকার দিল্লি জল বোর্ডের জন্য ৩ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ পাশ করিয়েছিল। কিন্তু সরকারেরই অর্থসচিব জল বোর্ডে এই বরাদ্দ আটকে দেন। সুপ্রিম কোর্টে ছুটতে হয় দিল্লির ‘আপ’ সরকারকে।
পলিট ব্যুরো বলেছে, সরকারের এই পঙ্গুত্ব এবং আমলাতন্ত্রের অন্তর্ঘাতের দায় চাপে ‘আপ’ সরকারের ওপর। মোদীর অপরাধের লাভ তুলেছে বিজেপি আর তার দায় চেপেছে ‘আপ’ সরকারের ওপর।
পলিট ব্যুরো বলেছে, দিল্লি বিধানসভার এই নির্বাচনে সব ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির একত্রিত হওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা হয়নি, ‘আপ’ জনতার মধ্যে এই প্রচারকে জোরালো করে তুলেও ধরেনি। কংগ্রেসের ভূমিকা সঠিকভাবেই সমালোচিত হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের অন্য দলগুলির দ্বারা। কংগ্রেসের প্রচারের মূল সুর ঠিক করেছেন রাহুল গান্ধী, তা ছিল একমাত্র ‘আপ’ এবং তার নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে। গতবার মাত্র ৪.২৬ শতাংশ ভোট পেয়ে কংগ্রেসের ৭০ আসনের সব ক’টিতেই লড়া উচিত ছিল না। ‘আপ’ পরাজয়ের মূল কারণ তাদের নিজের ভোটের বড় অংশ সরে যাওয়া হলেও ১৩টি আসনে ‘আপ’-র পরাজয়ের ব্যবধানের চেয়ে বেশি ভোট কংগ্রেস পেয়েছে।
পলিট ব্যুরো বলেছে, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বিরোধীদের পক্ষে এই ফলফল অসন্তোষজনক। আবার এটিও ঠিক যে এত কিছুর পরও ‘আপ’ ৪৪ শতাংশ ভোট পেয়েছে যার বেশিরভাগই গরিব এবং মহিলা।
Polit Bureau on Delhi Election
দিল্লি দখল করে নিয়েছিল মোদীর কেন্দ্র, ফল বিশ্লেষণে পলিট ব্যুরো
![](https://ganashakti-new-website.s3.ap-south-1.amazonaws.com/24121/67ae11f3d7c11_Kejri-Commission.jpg)
×
Comments :0